Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

ইসলামপন্থি দলগুলোর রাজনৈতিক মেরুকরণ: জামায়াত না বিএনপি – কে কার দিকে?

বাংলাদেশে রাজনীতির দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ইসলামপন্থি দলগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চাইছে। যদিও একসময় তারা বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে একধরনের ঐক্য ও মেরুকরণের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দলগুলো আবার সংগঠিত হতে শুরু করেছে।

ঐক্য গঠনের তৎপরতা: পাঁচ দলের নির্বাচনি জোট

কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক পাঁচটি দল – ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম – একটি নির্বাচনি জোট গঠনের লক্ষ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে এবং একটি লিয়াজো কমিটিও গঠন করেছে। এই জোটের মূল উদ্দেশ্য হলো:

  • “এক বাক্সে ভোট” নেওয়ার ব্যবস্থা করা

  • জাতীয় সংসদের সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়া

  • ইসলামি মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক উপস্থিতি জোরদার করা

তবে তারা স্পষ্ট করেছে, এটি একটি নির্বাচনি জোট, স্থায়ী জোট নয়

জামায়াত: ঐক্যের বাইরে অবস্থান?

জামায়াতে ইসলামী ঐক্যের এই উদ্যোগে প্রথম দিকে সক্রিয় থাকলেও, পরবর্তীতে তাদের অংশগ্রহণে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলের আমির শফিকুর রহমান ইসলামী আন্দোলনের চরমোনাই পীরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন এবং ঐক্যের বিষয়ে সম্মান দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে দলটি ঐক্য প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান কোনো অংশ নেয়নি।

জামায়াত এখন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথাই বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তাদের মূল চিন্তা – জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে জায়গা করে নেওয়া। পাশাপাশি তারা এনসিপির মতো ছাত্র নেতৃত্বধর্মী উদীয়মান দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে এবং নিজস্ব বলয় গড়তে চাইছে।

বিএনপি ও ইসলামি দলগুলো

অন্যদিকে, বিএনপিও ইসলামি দলগুলোকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এখানেও একটি দ্বৈত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

  • একদিকে জামায়াতের স্বতন্ত্র অবস্থান।

  • অন্যদিকে, কওমী ও পীরভিত্তিক দলগুলোর ঐক্যচেষ্টা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি-জামায়াতের অতীত জোট মূলত আওয়ামী লীগের বিরোধিতা থেকেই গঠিত হয়েছিল। এখন যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয় বা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে না থাকে, তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রয়োজনীয়তা ফিকে হয়ে যাবে।

হেফাজতের পুনরুত্থান ও কৌশল

হেফাজতে ইসলাম ৩ মে ঢাকায় সমাবেশ করছে। তাদের অতীত শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং এর পরের দমননীতির প্রেক্ষাপটে এবার তারা ‘অধিকার পুনরুদ্ধার ও ইসলামী দাবি’ নিয়ে মাঠে নামছে। যদিও তারা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয় না, তবে এদের প্রভাবশালী অবস্থান ধর্মীয় ভোটব্যাংকে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজনীতির দোদুল্যমানতা ও অনিশ্চয়তা

একদিকে, ইসলামি দলগুলো ঐক্য করতে চাইলেও জামায়াতের ধীরগতির অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অন্যদিকে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন:

  • ইসলামি দলগুলোর ঐক্য চেষ্টা বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

  • জামায়াত স্বতন্ত্র পথে থাকলেও ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে আবার জোটে ফিরতে পারে।

  • বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে পাশে পেতে চাইলেও তাদের অবস্থান নির্ভর করছে জামায়াত ও অন্যান্য দলের সিদ্ধান্তের ওপর।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থি দলগুলো ২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। ঐক্যের প্রচেষ্টা চলছে, তবে বিভক্তি ও সন্দেহের দেওয়াল এখনো অটুট। জামায়াতের স্বতন্ত্র অবস্থান ও কৌশল, বিএনপির হিসাব, এবং কওমী ঘরানার দলগুলোর ঐক্য – এই তিনটি বলয়ের সমীকরণই আগামী নির্বাচনের মাঠে ইসলামপন্থি রাজনীতির গতি নির্ধারণ করবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.