Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

সিলেটে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি

34

সিলেটে ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বন্যা ভয়াবহ রূপধারণ করছে। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে পানিবন্দি আছেন প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার (৩১ মে) সকাল ৬টায় সিলেটের কানাইঘাট সুরমা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ২০৯ সেন্টিমিটার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দুটি পয়েন্ট গোয়াইনঘাটের জাফলং ডাউকি পয়েন্ট ও সারি গোয়াইন পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, সিলেট জেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি উপজেলার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাকবলিত এলাকার ৪ হাজার ৮০২ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত উপজেলাগুলোর মধ্যে কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, বন্যাকবলিত উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মোখলিছুর রহমান কামরানের সভাপতিত্বে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগর ভবনের সভাকক্ষে জরুরি সভায় সকল প্রকার জরুরি সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সভায় নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার (৩১ মে) থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উপকেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কতৃর্পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি সভা আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ইতিমধ্যে জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া তিনি মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ প্রার্থনা করার জন্য নগরবাসীর কাছে অনুরোধ জানান।

যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮২৮৪৮০০) অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.