Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

মুখে মুখেই সব, বাস্তবে কেউ নেই ফিলিস্তিনের পাশে

63

গত শতকের চল্লিশের দশকের শেষভাগে ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রে ফিলিস্তিনের ভুখন্ড দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ লেগেই আছে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমন একটি দিনও যায় নি যেদিন মধ্যপ্রাচ্যে রক্তারক্তি হয় নি। শুরুতে ব্রিটিশ মদদে ফিলিস্তিনিদের থেকে কেড়ে নেওয়া ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের সাথে আরব দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ চললেও ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ে গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি। ইসরায়েলি দখলদারির অবসানের দাবিতে অনেক নেতৃত্ব দেশটির হাল ধরার চেষ্টা করলেও তাদেরকে হত্যা করতে ছাড়েনি ফিলিস্তিনের অবৈধ দখলদার এই ইহুদি রাষ্ট্রটি। তারপরও প্রথম ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণের শুরু থেকে একাধিক সংগঠন অত্যাচার, নির্যাতন, নীপিড়নের থেকে রক্ষার্থে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে। ইসরাইলি দমনপীড়নের প্রতিরোধে গত ৭ অক্টোবর ইজরাইলে আক্রমণ চালায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সংগঠন ও গাজার শাসক হামাস। এই হামলার পর গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইজরাইল। ৭ অক্টোবর থেকে চলা এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে; ধ্বংস হয়েছে স্কুল কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ সহ বহু স্থাপনা। দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে সংগ্রামের পরও এখনও নিজেদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা পায় নি ফিলিস্তিনের জনগন। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এখন মুখে মুখে সংহতি জানিয়ে বুলি আওড়ানো ছাড়া কার্যত ফিলিস্তিনিদের পাশে নেই পৃথিবীর কোনো মুসলিম দেশই। সারা পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলো তো দূরে প্রতিবেশি মুসলিম দেশগুলোও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নির্যাতিত-নীপিড়িত এই জনগোষ্ঠী থেকে। জানা অজানার আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং প্রতিবেশি মিশর ও জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রশক্তিগুলোর অবস্থান নিয়ে।

ফিলিস্তিনের গাজা ও ইসরায়েলিদের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর গাজা ভূখণ্ডে নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা ও খাদ্য-জ্বালানী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে ইসরায়েল। ফলে গাজায় ২৩ লাখ মানুষের খাবার, পানি, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে নামমাত্র থাকা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর ভূমিকা রহস্যজনক। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলো সবসময় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অনেক সময় বুলি আওড়াতে দেখা গেলেও স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য তাদের অবস্থান নিতান্তই দুর্বল হিসেবে পরিলক্ষিত। এমনকি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগও সংকটকালে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি প্রকাশ ও বড় বড় বুলি ছোড়া ছাড়া আর কোনোও ভূমিকা পালন করছে না। ইরান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেরই পাশ্চাত্য নির্ভরতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তাদের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়। রাষ্ট্রপ্রধানদের তখতের নিরাপত্তাও থাকবে আমেরিকা ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে সেন্টিমেন্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সোচ্চার হওয়া বা শক্ত অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতার জায়গা হলো পশ্চিমা বিশ্ব মোড়লদের অবস্থান। কেননা পশ্চিমা দেশগুলোসহ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানির নেতারা সব সময় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম প্রধান দেশ ও বিশ্ব মুসলমানদের কেন্দ্রস্থল বলে বিবেচিত সৌদি আরব বরাবরই পশ্চিমা শক্তির তাবেদারি করে আসছে। ইসরায়েলের সাথে আগে থেকে ভালো না থাকলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ইসরায়েলের সঙ্গে আতাত করে চলার প্রক্রিয়ায় কাজ করছে সৌদি; যা নিয়ে সৌদি বর্তমানেও বেশ জোড়ালো অবস্থানে রয়েছে। কার্যত সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের পাশে না থাকার একাধিক কারণ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নী নামক বিভাজন। মুসলিম শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব সুন্নী প্রধান দেশ এবং ইরান শিয়া প্রধান দেশে। শিয়া প্রধান ইরান সৌদি ও ইসরায়েলের কমন শত্রু হওয়ায় ইরানকে মোকাবেলা করতে সৌদি সবসময় ইসরায়েলকে পাশে চায়। অপরদিকে তেল সম্পদের উপর নির্ভরশীল সৌদি আরবের তেল ফুরিয়ে আসায় তেলের ওপর নির্ভরশীল নয় এমন একটি অর্থনীনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোরার স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। তেল-পরবর্তী ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নাগরিকদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, বিশ্ব মঞ্চে অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখাসহ ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনা করেছে দেশটি। এর অংশ হিসেবে রয়েছে বিশাল অংকের “গিগাপ্রজেক্ট”। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ‘নিওম’ এবং একটি অত্যাধুনিক শহর, যার নাম ‘দ্য লাইন’। এই মেগাসিটি তৈরিতে খরচ হবে এক ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি ডলার। আর সবচেয়ে বড় সহায়তা লাগবে সৌদির মার্কিন ও ইউরোপীয় বন্ধু ও ইসরায়েলীদের। কেননা সৌদি আরবের হাজার হাজার কোটি ডলার ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাতে। কোনভাবে যদি সৌদি কোনরকম যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়িয়ে যায় তবে তাদের এই বিপুল অর্থ-সম্পদ ফেরত পাবে তার কোন নিশ্চয়তাও নেই। এই বাইরে, সৌদি আরবের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে ও সৌদি রাজ পরিবারের প্রতি মানবাধিকার ইস্যুতে কালো দাগ আগে থেকেই লেগে আছে। যে ইস্যু নিয়ে যে কোনো সময় মোসাদ বা আমেরিকার সিআইএ তৈরি করতে পারে আরেকটি আরব বসন্ত। এরবাইরে ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে বিশ্ব মোড়লদের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বেসামরিক খাতে পারমাণবিক পারমাণবিক মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় সৌদি।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক শক্তিধর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত; মার্কিনীদের সাথে সামনে-পিছনে বন্ধুত্ব যাদের দীর্ঘদিনের। আমেরিকার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনে ইয়েমেনের নিরীহ মানুষদের উপর ভয়াবহ আগ্রাসন চালানো সংযুক্ত আরব আমিরাত কখনোই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না। হ্য ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানেই ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সৌদি সামরিক জোটের অন্যতম অংশ এই রাষ্ট্রটি। উপসাগরীয় দেশগুলোতে বহু দশক ধরে ইসরায়েলকে বয়কটের যে নীতি চলে আসছিল তা-র অবসান ঘটে ২০২০ সালে করা আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে। এই চুক্তির পর থেকে লজিস্টিকস, চিকিৎসা প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প নিয়ে কাজ করে আসছে এই দুই দেশ। এছাড়াও ইসরায়েল রাষ্ট্র রচনার ষড়যন্ত্রকারী যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অস্ত্রচুক্তির কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই মুসলিম প্রধান এই দেশটির।

তুরস্কা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম মুসলিম দেশ। গত ৭০ বছর ধরে ইসরায়েলের সাথে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্ক চলমান রয়েছে; যা উভয় দেশকে ব্যাপক লাভবান করে থাকে। তাছাড়া তুরস্কের বিরুদ্ধে কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপণীয় সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক যদি হামাসকে সহযোগিতা করে তাহলে ইসরায়েলও কুর্দিদের সামরিক সহয়তা করবে যা তুরস্ককে বিপদে ফেলতে পারে। কেননা তুরস্কের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা কুর্দি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের নিয়ে। যাদের সাথে ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের সশস্ত্র বিরোধে চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে চার দশক ধরে চালানো বিভিন্ন হামলায় ১০ হাজারের মতো মানুষের প্রাণ গেছে। অপরদিকে ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনের কথা অনেক দিন ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ বলে থাকেন কুর্দিস্তানকে পশ্চিমারা আরেকটি ইসরায়েল বানাতে চেয়েছিল। তাছাড়া ইতিহাস বলে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যে কারণে ক্ষমতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে সাথে সবসময়ই সাথে রাখতে হয়েছে তুরস্কের। তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানরা বারবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেও তাদের পক্ষে ইসরায়েলের বিপক্ষে সামরিক সহায়তা করা অসম্ভব। তবে মাঝে মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানদের হুশিয়ারি মূলকারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠতা ও রাজনীতি।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রভাবশালী আরব দেশ কাতার বরাবরই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিরোধী। কাতার ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও কাতার ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। হামাসের প্রতি কাতারের ক্রমাগত সমর্থন থাকলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না রাষ্ট্রটিকে। এবারের যুদ্ধের পর দেশটি তাদের বিবৃতিতে পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। দেশটি ফিলিস্তিনের জন্য পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের আগের ভূখণ্ডকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয়। অপরদিকে এবারের যুদ্ধ শুরুর পর সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বন্ধুদের সুরে হামাসের হামলার সমালোচনা করে। এমনকি দেশটির বিবৃতিতে ইসরায়েলি নাগরিক জিম্মি করার বিষয়টি উঠে আসলেও ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার বিষয়টি সেখানে অদৃশ্য। বাহরাইনও হামাসের হামলার সমালোচনা করেছে। আর কুয়েত ও ওমানের প্রতিক্রিয়া ছিলো অনেকটাই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থা। ইসরায়েল ও ওমানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রকাশ্যে না থাকলেও গোপনে দেশটির সাথে আতাত রয়েছে বলে মনে করা হয়। বরাবরই ওমান ইসরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রকাশের ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক। যদিও ২০১৮ সালে প্রয়াত সুলতান কাবুস ইসরায়েলি নেতা নেতানিয়াহুকে মাস্কাটে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এমনকি ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করায় ওমানই ছিলো প্রথম দেশ, যারা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া ও ইরাক নিজেরাই আমেরিকা ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার। গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকা-ইসরায়েলের বোমায় ধ্বংস হয়েছে ইরাক ও সিরিয়ার বড় বড় শহর, মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ।

এবারের যুদ্ধের শুরুতে ইরান ছাড়া আর কোন দেশকেই উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে দেখা যায় নি। মুসলিম প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরানই ইসরায়েলের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে। তাদের বিবেচনায় ইসরায়েল অবৈধভাবে মুসলমানদের ভূমি দখল করে রেখেছে। এদিকে ইসরায়েল তাদের অস্তিত্বের জন্য ইরানকে তাদের হুমকি হিসেবে দেখে। আর ইরানের সামরিক ও পারমাণিবিক সক্ষমতাকে ভয় পায় ইসরায়েল। তবে আগে থেকেই ইরান বড় বড় বুলি ছাড়লেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের সামরিক অভিযানের কথা ভাবেনি শিয়া অধ্যুষিত ইরান।

অক্টোবরে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হলে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর হামলায় পর্যুদস্ত গাজা এবং পশ্চিম তীর দুই দিকের সাধারণ ফিলিস্তিনিরা এখন অনেকটা বন্দীদশায় মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। স্বাধীন ফিলিস্তিনি তো দূরের কথা এই দুই ভুখন্ডের মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ও মৌলিক অধিকারের সুযোগও নেই। এর মধ্যে গাজা দক্ষিণে পরিস্থিতি এতটাই মানবেতর যে অনেকে উত্তর গাজার দিকে ফিরে যাচ্ছেন। পশ্চিম তীরেও আরও আগে থেকেই ইসরায়েলের নানা দমন পীড়ন চলছে। কিন্তু এই দুই অংশের সাথে যেসব দেশের সীমান্ত, মিশর ও জর্ডান তাদের কেউ এসব মানুষকে ঠাঁই দিতে রাজি নয়। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তের মুসলিম রাষ্ট্র মিশর প্রথম কোনো আরব রাষ্ট্র যারা ১৯৭৮ সালে ইসরায়েলের সাথে সমঝোতায় আসে। গাজার শাসক হামাস আশির দশকে সৃষ্টি হয়েছিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে। মুসলিম ব্রাদারহুড ২০১১ সালে মিশরের ক্ষমতায় থাকলেও বর্তমানের পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত আল ফাত্তাহ সিসি সরকার তাদেরকে নিষিদ্ধ করে। ২০০৭ সালে হামাস গোষ্ঠী গাজার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিশরও গাজার সাথে তাদের সীমান্তের কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের সীমান্ত প্রতিবেশি জর্ডানের ইসরায়েলের সাথে রয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। গ্যাস, সুপেয় পানির জন্যও ইসরায়েলের উপর নির্ভর করতে হয় জর্ডানের। ইসরায়েল ছাড়াও জর্ডান সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সৌদি আরব ও আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। ফলে এবারে ইসরাইলি আগ্রাসনের পর জর্ডান ও মিশরের পশ্চিমা তাবেদারি রাষ্ট্রপ্রধানরা একই সুরে কথা বলেছেন। মূলত পশ্চিমা পরাশক্তির তাবেদারি আর তাদের সাথে সম্পর্কের বৈরি সম্পর্ক তৈরি করতে না চাওয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে সামরিক, অর্থনৈতিক বা আবাসনের ক্ষেত্রে কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারে না মধ্যপ্রাচ্যের দেশুগুলো।

দিনশেষে নিকটতম প্রতিবেশি জর্ডান কিংবা মিশর, বিশ্ব মুসলমানদের কেন্দ্র সৌদি আরব কিংবা মুসলামানদের উদ্ধারকর্তা খ্যাত তুরস্ক কেউই নেই ফিলিস্তিনিদের পাশে। এসব দেশের সর্বোচ্চ হলো মুখে মুখে সহানুভূতি দেখানো ছাড়া আর কিছুই নেই। আরব দেশগুলো মানবিক সংকটের বিষয়ে মুখে বুলি ছোড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বৃহৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের আবেগ-অনুভূতি। দেশগুলোর সাধারণ মুসলমানদের চাপে কিংবা আবেগ-অনুভূতির কারণে রাষ্ট্রপ্রধানরা অনেক সময় বড় বড় বক্তব্য ছাড়লেও ফিলিস্তিনকে সামরিক কিংবা আর্থিক সহায়তার কোনো মানসিকতা দেখা যায় না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.