গাজা-মিশর সীমান্তে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘ফিলাডেলফি করিডোরের’ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, সেখানে ২০টি সুড়ঙ্গ পাওয়া গেছে, যে পথ দিয়ে অস্ত্র পাচার করে আসছিল হামাস।
তবে মিশরীয় টিভি দেশটির কর্মকর্তার বরাতে বলেছে, ওই সুড়ঙ্গের কথা বলে ইসরায়েল গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় তাদের অভিযানকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এমন এক সময় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানাল ইসরায়েল, যখন মিশরের সঙ্গে তাদের উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে।
আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বুধবার বলেন, “সম্প্রতি আইডিএফ সেনারা মিশর ও রাফা সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।”
ওই করিডোরকে হামাসের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওই পথ ব্যবহার করে হামাস নিয়মিতই গাজা ভূখণ্ডে অস্ত্র আনছিল।
মুখপাত্র হাগারি বলেন, সেনারা বিষয়গুলো তদন্ত করছে এবং টানেলগুলোকে ‘অকার্যকর’ করছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, হাগারি পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, সেখানকার সব টানেলের সঙ্গেই মিশরের সংযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
মিশরের সঙ্গে গাজার যে ১৩ কিলোমিটারের সীমান্ত আছে, সেই ফিলাডেলফি করিডোর ‘বাফার জোন’ হিসেবে বিবেচিত, গাজা অংশের কোথাও কোথাও যা মাত্র ১০০ মিটার প্রশস্ত ।
মিশর এর আগে দাবি করেছিল, তারা আন্তঃসীমান্ত টানেল ধ্বংস করেছে, ফলে কোনো ধরনের অস্ত্র চোরাচালান সম্ভব নয়।
মিশরের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা আল-কাহেরা নিউজকে বলেছেন, রাফায় অভিযান চলমান রাখতে ইসরায়েল এখন হামাসের সুড়ঙ্গের ধুঁয়া তুলছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।
ইসরায়েল জোর দিয়েই বলে আসছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে বিজয় অর্জন করতে রাফা তাদের চাই।
হামাসের সেই হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল।
আর হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬ হাজার ১৭০ জনের প্রাণ গেছে।
হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলে ইসরায়েল তিন সপ্তাহ আগে রাফা ক্রসিং পয়েন্টের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নিলে মিশরের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এ সপ্তাহর শুরুতে রাফা সীমান্তে ইসরায়েল সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে এক মিশরীয় সেনা নিহত হন।
মিশর বরাবরই ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে আসছে এবং গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে হাজারো বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির নিন্দা জানিয়ে আসছে।
২০০৬ সালে হামাস ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের মত মিশরও গাজা সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। তবে হামাসের সঙ্গে যোগাযোগের পথ তারা খোলা রেখেছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে দেশটি।