সীমান্তে উত্তেজনা: কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন
সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও নজরদারি বৃদ্ধি নিয়ে সীমান্ত এলাকায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককেই নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে শূন্যরেখার কাছে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করেছে। বিজিবি এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও বিএসএফ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের কোচবিহারের করুণ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই সীমান্তে কাজ শুরু করে।
এ ছাড়া ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে নতুন নজরদারি ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক নজরদারি যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বসতি সরানোর পরিকল্পনাও করেছে ভারত, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের অবনতি শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে। ভিসা বন্ধ এবং সীমান্তে কড়া নজরদারি এই সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। তবে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা হলেও এর বাস্তবায়নে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সীমান্তে ভারতের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে সঠিক অবস্থান তুলে ধরে, তবে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে।
বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন উভয় দেশের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অতীতে সীমান্তে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে যে প্রভাবিত করেছে, তা এখনো স্মরণীয়।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতকে সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক আলোচনা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে যৌথভাবে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়াই এ মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।