গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ইরানী বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডার সহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলার জবাবে ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালায় তেহরান। তাদের সঙ্গে হামলায় যোগ দেয় ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। এরপর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও ইসরাইলে রকেট হামলা চালানো হয়।
এমনিতেই গত বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসন শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলী হামলা ও ইরানের পাল্টা হামলার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। আশঙ্কা বাধতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আরও একটি বৃহৎ যুদ্ধ শুরুর।
মধ্যপ্রাচ্যের এমন উত্তেজনার মধ্যে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে কি করছে এই অঞ্চলের আরেক ক্ষমতাশালী মুসলিম দেশ তুরস্ক। কি ভুমিকা পালন করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান?
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসনের শুরু থেকে কিংবা চলতি বছরের ১ এপ্রিল ইরানী কনস্যুলেটে হামলার পর থেকেই সরব তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারকে এককভাবে দায়ী করেছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট।ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাত উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে বলেও মন্তব্য এরদোয়ানের। এছাড়াও গাজায় ইসরাইলের ‘নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা’ যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন নতুন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়তে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তুরস্ক ও ইরান যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের বিরুদ্ধে একই সুরে কথা বললে মুসলিম দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল। এই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো সংঘর্ষ হয়নি, তবে আঞ্চলিক, ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত গতিশীলতার ব্যাপক পরিবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ তাদের মধ্যে বিবিধ ইস্যুতে প্রতিযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতার মঞ্চে পরিণত হয় ইরাক।
তবে এরই মধ্যে শিগগিরই ইরাক সীমান্তে রাশিয়ার বিতর্কিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ মোতায়েন করতে যাচ্ছে তুরস্ক। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি-পিকেকের বিরুদ্ধে এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করার তথ্য উঠে এসেছে তুর্কি গণমাধ্যমে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর (পিকেকে) বিরুদ্ধে আঙ্কারার এ ধরনের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। তুরস্কের এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারের অর্থ হবে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানের বিরুদ্ধেই মস্কোর অস্ত্র ব্যবহার।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তুরস্কের এ ধরনের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। ইসরাইল-ইরান সংঘাতের জেরে নিজেদের নিরাপত্তার যুক্তি দিয়েও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারের চেষ্টা করবে আঙ্কারা। তাছাড়া পিকেকের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়। এদিক থেকে ইরাক সীমান্তে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে তুরস্কের এস-৪০০ মোতায়েন হবে এই অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানের বিরুদ্ধেই মস্কোর অস্ত্র ব্যবহার। এতে, অঞ্চলটির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।