ঘটনাপ্রবাহ: যেভাবে পতন হয় স্বৈরাচার হাসিনার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনে গত ৬১ দিন তোলপাড় ছিল সারা দেশ। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন থামাতে পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সাল থেকে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে হত্যা, নৈরাজ্য ও লুটপাট করে মানুষের আস্থা হারায় শেখ হাসিনার সরকার।

কোটা সংস্কার নিয়ে চলা দীর্ঘ আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে গতকাল সোমবার দুপুরে দেশত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর থেকেই বিপদে পড়ে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুরু হয় ক্ষমতার পালাবদলের গুঞ্জন।

দীর্ঘ ৬১ দিনের ঘটনাপ্রবাহে যেদিন যা হয়েছে-

৫ জুন, বুধবার: কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

৬ জুন, বৃহস্পতিবার: কোটা বাতিল করে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা।

৯ জুন, রোববার: হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

১ জুলাই, সোমবার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয়। বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

৭ জুলাই, রোববার: সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

৯ জুলাই, মঙ্গলবার: সারা দেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী।

১০ জুলাই, বুধবার: কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ।

১৪ জুলাই, রোববার: কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলা ‘রাজাকার’ শব্দটির জের ধরে রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

১৫ জুলাই, সোমবার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা।

১৬ জুলাই, মঙ্গলবার: আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের। সড়ক অবরোধ, সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং ছয়জনের প্রাণহানি হয়। রংপুরে পুলিশের ‘গুলিতে’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনা ভিডিও প্রকাশ পায়।

পরে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে।

১৭ জুলাই, বুধবার: আগের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।

এদিন বিক্ষোভের কেন্দ্রের ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। শীর্ষ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

রাতে যাত্রাবাড়ি এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়। যাত্রাবাড়িতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার: আন্দোলনে সহিংসতা অব্যাহত। মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ।

পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘাত সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ বিক্ষোভকারী হতাহত। ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের।

আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। আলোচনার প্রস্তাব নাকচ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ।

১৯ জুলাই, শুক্রবার: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা। রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি। সারা দেশে সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন নিহত।

প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া’, দুই মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি দিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের তিন নেতা। সেখানে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।

বৈঠকে সরকারের তরফে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

২০ জুলাই, শনিবার: কারফিউয়ের মধ্যেও ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। বহু বিক্ষোভকারী হতাহত।

আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীর বৈঠক। আন্দোলনকারীদের আট দফা দাবি পেশ। এই বৈঠক নিয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতভেদ।

সহিংসতায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ২৬ জন নিহত।

২১ জুলাই, রোববার: কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি, কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ নির্ধারণের আদেশ। তবে সরকার চাইলে বদলানোর সুযোগ রাখা হয়।

কারফিউ অব্যাহত, সাধারণ ছুটির আওতায় স্বায়ত্বশাসিত, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ।

২২ জুলাই, সোমবার: কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময়ের মধ্যে তারা চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেন।

সাধারণ ছুটির মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা আসে। কারফিউও বাড়ানো হয় এদিন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চার দিনে অন্তত ১৩১ জনের নিহত হওয়ার খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের খবর আসে।

২৩ জুলাই, মঙ্গলবার: রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতেও ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়।

২৪ জুলাই, বুধবার: নির্বাহী আদেশে তিনদিন সাধারণ ছুটির পর অফিস খোলে। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে।

২৬ জুলাই, শুক্রবার: আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বক্তব্যকে বিকৃত করার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা তাদের রাজাকার বলে পরিচয় দিল, আমি তাদের রাজাকার বলিনি।”

ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের আটক করা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই, শনিবার: আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করতে এই ধ্বংসযজ্ঞ।

২৮ জুলাই, রোববার: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ নিহতদের একটি অংশের পরিবারের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আহতদের দেখতে রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে যান তিনি।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৪৭ মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যদিও গণমাধ্যমের হিসাবে সংখ্যাটি দুই শতাধিক।

১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট ফেরে এদিন।

২৯ জুলাই, সোমবার: সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ঐকমত্য হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

৩০ জুলাই, মঙ্গলবার: কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সারা দেশে শোক পালন করা হয়। সেই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছবি পোস্ট করার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

৩১ জুলাই, বুধবার: আন্দোলনে হত্যার বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন। কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ঘিরে ধস্তাধস্তি হয়।

সুষ্ঠু তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘও।

১ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার: ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করা হয়। কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ ও বরিশালে সংঘাত।

কোটা আন্দোলনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবির ও এর অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

২ অগাস্ট, শুক্রবার: গণমিছিলে হামলা সংঘর্ষ, পুলিশসহ ২ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়।

৩ অগাস্ট, শনিবার: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বিশাল জমায়েত থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি আসে।

ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে পদত্যাগ করবেন তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর ‘অরাজনৈতিক নেই’। হামলা হলে আত্মরক্ষায় তার ‘জবাব’ দেওয়া হবে।

৪ অগাস্ট, রোববার: অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সারা দেশে ব্যাপক সংঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মী।

শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সবাইকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

৫ অগাস্ট, সোমবার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা।

পদত্যাগ করে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে খবর আসে।

দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

ঢাকার পথে পথে এদিন আনন্দ মিছিল চলে। জনতা গণভবনের দখল নেয়, নিয়ে যায় বিভিন্ন জিনিসপত্র। বিভিন্ন থানায় থানায় হামলা হয়, আক্রান্ত হয় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং বহু নেতার বাড়ি।

সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত করা হবে। আইন অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংসদ বিলুপ্তির ঘোষণা দেন।

Comments (0)
Add Comment