হাসিনার পদত্যাগের দিন সোমবারের সহিংসতায় নিহত অন্তত ১৯০

গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকা, ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, স্থাপনায় আক্রমণ, গুলি, পিটুনি, হামলায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৯০ জন মারা গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহতদের মধ্যে কয়েকটি জায়গায় পুলিশে বা বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি যেমন রয়েছেন, তেমনি থানায় ঢুকে বা হামলা করে পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসা-বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।যদিও সোমবার বিকেল থেকেই থানাগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ায় অনেক মৃতদেহই হাসপাতালে আসেনি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র একটি মৃতদেহ এসেছে, যেটি একজন পুলিশ সদস্যের। এছাড়া উত্তরা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।

প্রসঙ্গত শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের সোমবার ছিলো অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন। ওই দিনই দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। দুপুরের পর থেকেই আন্দোলনকারী ও বিরোধী বিভিন্ন দলের সমর্থকরা দেশব্যাপী বিজয় মিছিল বের করে। এসব বিজয় মিছিল থেকে বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী, এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া থানায় হামলাকে কেন্দ্র করে ঢাকার উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় গুলিতে অনেকে নিহত হন।

যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় নিহত ৫৭
সোমবার রাত পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃতদেহ আসার তথ্য ছিলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে ৩০টি মরদেহই ছিলো যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসা। এর বাইরে চানখাঁরপুল ও বাড্ডা থেকে দুটি করে মৃতদেহ আসার তথ্য ছিলো। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ছিলো আরও তিন জনের। যাত্রাবাড়ীতে দুপুরে পুলিশের গুলিতে কয়েক জনের মৃত্যুর পর বিকেলে বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে ও হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হয়।
যদিও উত্তরার দুটি হাসপাতালে ২০টি মৃতদেহ দেখার কথা নিশ্চিত করেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি নিজেই সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার দিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তেরটি এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে সাতটি মৃতদেহ দেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অন্তত আটজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় একজন জানিয়েছেন সেখানকার আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত অনেককে নেয়া হয়েছে, যাদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিলো।

সাভার ৩১
সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের সহিংসতার ঘটনায় মোট ৩১টি মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে সোমবার সকাল ১১টার পর থেকেই আগ্নেয়াস্ত্রসহ কঠোর অবস্থানে যায় পুলিশ। পরে দিনভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনি ও পাকিজার মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নারীসহ অন্তত হতাহতের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সেখানকার থানা রোড এলাকায় সাভার মডেল থানায় হামলা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এর পর সেখানে দফায় দফায় প্রায় তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ ও এলোপাথাড়ি গুলি চলতে থাকে। এসব সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তিরা নিহত হন।

যশোর ২৪
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান যশোরের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এ এম মামুন। তিনি বলেন, জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে শহরের চিত্রার মোড়ে অবস্থিত ১৪ তলা ওই হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী সোমবার রাতে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেড় শর বেশি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নিহতদের মরদেহ মর্গে রয়েছে। এ দিকে সোমবার এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিকেল ৫টার দিকে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক রাশেদ খান। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রসমাজের কেউ এমন নাশকতার সঙ্গে জড়িত নয় ও এর আগেও তারা কোনো নাশকতা করেনি।

সাতক্ষীরা ১৪
সাতক্ষীরায় হামলা ও সহিংসতায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির দুজন আছেন। বাকিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ সময় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর ও শ্যামনগর থানা এবং ট্রাফিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন, তাঁর ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন, ভাইপো সজিব হোসেন, ভাগনে আশিকুর রহমান, স্বজন সাকের আলী ও গাড়িচালক শাহিন হোসেন। এ ছাড়া আশাশুনি থানার কল্যাণপুর গ্রামের আদম আলী (২৮), কোলা গ্রামের আনাজ বিল্লাহ (১৭) ও কুড়িকাউনিয়া গ্রামের আনাজ আলী (১৮), সদর উপজেলার বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী আসাফুর রহমান (৪০), মৃগাডাঙ্গা গ্রামের তৌহিদ ইসলাম (৩০), সাইফুল ইসলাম (২৫), বিএনপির কর্মী জাহিদ হোসেন (২৮) ও ফারুক হোসেন (৩৫) নিহত হয়েছেন।

নাটোর ৪
নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়ি থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, চারজনের বয়স আনুমানিক ১৭ থেকে ২০ বছর। এদিন সকালে শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় শিমুলের বাড়ি জান্নাতি প্যালেসে প্রবেশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সে সময় তারা বাড়ির ছাদে ও তৃতীয় তলার বেলকনিতে এবং দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে দুটি মরদেহ দেখতে পান। পরবর্তীতে চারজনের স্বজন মরদেহগুলো নিয়ে যান। এদের মধ্যে একজন হলেন—নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানের ছেলে আকিব খান (১৭)। আকিব চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

চাঁদপুর ২
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত চেয়ারম্যান এবং বালু খেকো সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরে নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনরোষের মুখে পড়েন তারা। সেখানে নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হন। সেখানেই জনতার পিটুনিতে নিহত হন সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খান। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম বলেন, তাদের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা জেনেছি। তবে আমাদেরকে কেউ খবর দেয়নি। আমাদের জানমালের নিরাপত্তার কারণে সেখানে যাইনি।

গাজীপুর ৯
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে ৯ জনের মৃত্যু হয় পরে তাদের লাশ মাওনা চৌরাস্তা আল-হেরা হাসপাতালে নেয়া হয়। এরমধ্যে শ্রীপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাথে সংঘর্ষে ৬ জন ও গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় পুলিশের গুলিতে একজন ও কালিয়াকৈরে আনসার সদস্যদের গুলিতে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি বাস ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ঢাকায় যাচ্ছিল। বাসগুলো মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আসলে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা আটকে দেয়। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০ জন বিজিবি সদস্যদের মুলাইদ এলাকার বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্রসহ গোলাবারুদ আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। নিয়ন্ত্রণে নেয়ার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বিজিবি সদস্যদের উপর চড়াও হয়। এসময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। দুপুর থেকে কয়েক ধাপে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অবরুদ্ধ থাকার খবর পেয়ে আশপাশের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিজিবি সদস্যদের উদ্ধারে কাজ করছে, তারা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মৃত আসাদের ছেলে সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দারগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলমের ছেলে শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে কাওসার (২৮), ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধাসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা দুইজনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে একজন (২৩) নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় মামলার চেষ্টা করলে পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন মারা যায়। পুলিশের গুলি শেষ হয়ে গেলে থানা ফেলে সকল পুলিশ পালিয়ে যায়। লাশ রাত সাড়ে আটটার দিকে থানার গেইট পড়ে ছিল।

অপরদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমীতে আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে দুইটি ফটক ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে ভাংচুর শুরু করে। এসময়ে আনাসার সদস্যরা গুলি চালায়। এতে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। এছাড়া আনসারদের ছুড়া গুলিতে চার জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক।

কুমিল্লা ২
কুমিল্লার তিতাস থানা ঘেরাও করে পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৫ আগস্ট) গভীর রাতে তিতাস থানায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- তিতাস থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম ও কনস্টেবল মো. মাঈন উদ্দিন। তিতাস থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কান্তি দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনার পালানোর খবরে আনন্দে ফেটে পড়ে মানুষ। রাতে স্থানীয় উৎসুক জনতা তিতাস থানা ঘেরাও করতে যায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে একই দিন দাউদকান্দি উপজেলার সদরের তুজারভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া (২১) পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষর্শীরা জানান, সোমবার রাতে উৎসুক জনতা দাউদকান্দি থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করলে থানা পুলিশ আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকলে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশের গুলিতে বাবু মিয়া গুলিবিদ্ধ হলে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বরিশাল ৩
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে ওই বাড়ি থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। সোমবার সন্ধ্যায় নগরের কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এতে দোতলা বাসভবনের অনেকাংশ পুড়ে যায়। এ সময় সাদিক আবদুল্লাহ বাড়িতে ছিলেন না।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল উদ্দীন রাত পৌনে ১০টার দিকে বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাদিক আবদুল্লাহর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁরা তিনটি লাশ উদ্ধার করেন। লাশগুলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়ায় তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

নোয়াখালী ৭
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় অন্তত ৩ জন সাধারণ মানুষ নিহতের হয়েছে। সোমবার বিকেল পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটে। নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনকারীরা সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকায় জড়ো হয়। এরপর তারা সেখানে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আনন্দমিছিল থেকে কয়েকজন সোনাইমুড়ী থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় থানার ভেতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। এরপর উত্তেজিত জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে হামলা-ভাঙচুর চালালে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে উত্তেজিত জনতা থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আরও শতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৩৪ জন নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছে বলে জানা যায়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

লালমনিরহাট ৬
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের তল্লাশিতে এসব মরদেহ উদ্ধার হয়।

মৃতরা হলেন আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের খাতাপাড়া এলাকার সাইদুর রহমান মিঠুলের ছেলে শ্রাবণ, সদর উপজেলার হাঁড়িভাঙ্গা এলাকার মৃত জাহেদুল ইসলাম খোকনের ছেলে তন্ময়, বানভাষা এলাকার রেজাউল করিম রেজার ছেলে রাজিব, পিংকির মোড় এলাকার বিজিবি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের ছেলে রুশো এবং নবীনগর এলাকার সেকেন্দারের ছেলে জনিসহ পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরেই লালমনিরহাট জেলাজুড়ে উল্লাসে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। বিকেলে জেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংসদ সদস্যদের বাসা, প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের শহরের কালীবাড়ি বাজার চারতলা আলীসান বাসায় অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পরে রাত ৩টার দিকে লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিসের একটি দল গিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িটি তল্লাশি চালিয়ে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করে। তবে পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় মরদেহগুলো ওই বাড়িতেই রাখা হয়।

তবে বিজয় মিছিলের পর থেকে লালমনিরহাটে ছয়জন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনুরোধে অগ্নিদগ্ধ বাসায় তল্লাশি চালায় ফায়ার সার্ভিস। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সদর থানা-পুলিশ ওই বাড়ি থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করলেও একজনের পরিচয় মেলেনি।

লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ছয় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী এবং একজনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

কুষ্টিয়া ৮
কুষ্টিয়ায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত ৮ জনের নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক’শ মানুষ। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী প্রায় দুই শতাধিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছে। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আর পাঁচজন চিকিৎসাধীন অবস্থায়সহ মোটআট জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নাম-পরিচয় পাওয়া ৬ জন হলেন- শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা উসাম্মা (১৫), সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের স্বর্ণকার আশরাফুল (২৫), শালদাহ গ্রামের বাবু (১৩), হরিপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক বাবলু মিস্ত্রী (৫০), শহরের থানাপাড়া এলাকার যুবক সবুজ (২৮) ও ভেরামারার যুবক জিয়া (৪২)। এর আগে সোমবার সকালে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সাধারণ জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছোড়ে।

হবিগঞ্জ ৬
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জনতা মিছিল নিয়ে বড় বাজার থেকে থানার দিকে আসতে থাকেন। এসময় ঈদ গায়ের সামনে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। তখন পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, কাঁদনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে এবং আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। সংঘর্ষের সময় শিশুসহ ৬ জন আন্দোলনকারী নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক। নিহতরা হলেন যাত্রাপাশা গ্রামের সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাইঝের মহল্লার আব্দুর নূরের ছেলে আশরাফুল (১৭), পাড়াগাওয়ের শমশের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির (৪০), কামালখানী গ্রামের নয়ন (১৮), জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুল রউফের ছেলে তোফাজ্জল (১৮) ও পূর্বগড়ের ধলাই মিয়ার ছেলে সাদিকুর (৩০)। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করে।

মানিকগঞ্জ ১
মানিকগঞ্জে নৌপুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম চঞ্চল (২১) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হয়ে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও শিবালয় থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সোমবার (৫ আগস্ট) নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক অমিত রায়। নিহত রফিকুল ইসলাম চঞ্চল উপজেলার রুপসা গ্রামের রহিজ উদ্দিনের ছেলে ও মানিকগঞ্জের মহাদেবপুর ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।

চুয়াডাঙ্গা ৪
চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ায় জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলমের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন চারজন। চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভবনের চারতলায় চারজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহ পুড়ে বিকৃত হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অজ্ঞাত পরিচয় একদল লোক আরেফিন আলমের বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় আরেফিন আলম তাঁর ব্যক্তিগত শটগান দিয়ে একটি গুলি করেন। এরপর বেলা সাড়ে চারটার দিকে একদল লোক সেখানে আসে এবং বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায় ও ভাংচুর শুরু করে। ছয়তলা বাড়িটি ভাঙচুর চলাকালে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুড়ে অঙ্গার হওয়া চার পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করে।

ঝিনাইদহ ৪
ঝিনাইদহে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে শহরের আদর্শপাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা সদরের ৯ নম্বর পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফর হিরণের বাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ রাতে শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা। একই সময় চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আক্তার হোসেন গণপিটুনিতে মারা যান। নিহত আক্তার সদর উপজেলার ভবতিপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুন্নেছা মিকি, পৌর মেয়র সহিদুজ্জামানের বাড়ি ভাঙচুর করেছে।

খুলনার কয়রা ১
খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার মরদেহ যেন খুঁজে না পাওয়া যায় সেজন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কয়রার আরও দুই জন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি সেখানে ছিলেন বলে এলাকাবাসী জানায়। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে উপর মহলের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না। আমরা থানায় অবস্থান করছি।

শরীয়তপুর ১
শরীয়তপুরের জাজিরায় মাসুদ বেপারী (৩৫) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার হরিয়াসা এলাকায় আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের সময় মাসুদ গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, বিকেলে এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।

দিনাজপুর ২
দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্তর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর তার বাড়ি থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাড়িতে মেয়র ও তার পরিবারের কেউ ছিলেন না।

নড়াইলে ১
নড়াইল সদর উপজেলায় মাজেদুল ইসলাম খান (২৭) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে সদর উপজেলার বরাশুলা ইদগাহ্ ময়দানের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাজেদুল ইসলাম খান উপজেলার বরশুলা গ্রামের জাফর খানের ছেলে। নড়াইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টাঙ্গাইল ১
টাঙ্গাইলে সদর থানা ও ধনবাড়ী‌ থানায় হামলা ও সংঘ‌র্ষে অজ্ঞাত একজনের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে। এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হ‌য়ে‌ছে। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে ধনবাড়ী থানা ও বাসাইল থানায় ও সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় এই ঘটনাগু‌লো ঘটে। এ সময় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় প্রবেশ করে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও ভাঙচুর ক‌রে। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। ত‌বে মারা যাওয়ার খবর তারা জা‌নেন না। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, গুলিবিদ্ধ একজনের মরদেহ মর্গে রয়েছে। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও শেখ হা‌সিনা মেডিকেল হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি ক‌রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ২
চট্টগ্রামে গতকাল সোমবার সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সহিংসতা–চেষ্টার সময় গুলিবিদ্ধ হন। অপরজন হাটহাজারীতে সহিংসতায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহতরা হলেন মো. নিজাম উদ্দিন (১৮) ও মো. জামাল উদ্দিন (৫৪)। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে নোয়াখালীর মো. সাহাবউদ্দিনের ছেলে নিজাম কারাগারে সহিংসতার সময় গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কারা সূত্র জানায়, বিকেলে কারাগারে হামলার উদ্দেশ্যে লোকজন কারা ফটকে জড়ো হন। এ সময় গোলাগুলি হয়। গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। পরে তাঁদের চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জামাল উদ্দিনের বাড়ি হাটহাজারীতে। তাঁর বাবার নাম সালাহউদ্দিন। তিনি হাটহাজারীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চমেক হাসপাতালে আসেন। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে ওয়ার্ড মাস্টার রাজীব দে জানান।

তিনি বলেন, দুজনের মরদেহ এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, গতকাল রাতে দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। দুজনের মরদেহ এখন লাশঘরে আছে। এ ছাড়া দুই দিনের সহিংসতায় এখনো ১৯৪ জন আহত ব্যক্তি বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

Comments (0)
Add Comment