হাসিনার পতনের দিন দেশজুড়ে হামলা-আগুন, নিহত ১১০

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন থানায় হামলা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। উত্তরা পূর্ব থানায় হামলা চালালে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালালে ১১ জন মারা গেছেন। এ ঘটনার পর পুরো উত্তরায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা চালালে হেলিকপ্টারে করে অন্যত্র যেতে বাধ্য হন পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন ঘটনায় ৫২ জন মারা গেছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ এবং বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি, কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ তাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যাদের বাড়িঘর ও স্থাপনা হামলার শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে দলটির অন্তত ১৯ জন সংসদ সদস্য (এমপি) ও চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

এ ছাড়া হামলা হয়েছে সদর দপ্তর, থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা পুলিশ লাইনসসহ পুলিশের অসংখ্য স্থাপনায়। এসব জায়গা থেকে লুট হয় বহু অস্ত্র। হামলা চালানো হয় কয়েকটি কারাগারেও, পালিয়ে গেছে অনেক বন্দি। দুপুরের পর থেকে শুরু হয়ে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এমন হামলার ঘটনা ঘটছিল। অন্যদিকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার আগে রাজধানীর বাইরে কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। দিনভর চলা এসব সংঘর্ষ-সহিংসতায় রাজধানীর বাইরে ৫৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পূর্ব, ভাটারা, খিলগাঁও, কদমতলী, বাড্ডা, মিরপুর, আদাবর, লালবাগ, বংশাল, পল্লবীসহ অন্তত ১৫ থানায় সোমবার বিকেলে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। হামলার সময় ‍পুলিশ গুলি করলে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচ শতাধিক। তাদের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন। সেখানে গণপিটুনিতে চার পুলিশ মারা যাওয়ার দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বাড্ডায় হামলায় পুলিশের সাত সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহত হয়েছে মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য থানা এলাকাতেও। খিলগাঁওসহ কয়েকটি থানার পুলিশ প্রাণ বাঁচাতে থানা ছেড়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রাবাড়ীতে থানায় আগুন দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। হামলার মুখে কদমতলী থানার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে বাঁচার আকুতি জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

সদ্য পদত্যাগকারী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে থানাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। থানার সামনে নিরাপত্তা ব্যুহ তৈরি করা হয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করলে তাদের আয়োজন ভেস্তে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। বাড্ডা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পূর্বসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।

যাত্রাবাড়ী থেকে খোরশেদ আলম জানান, হাজার হাজার জনতা থানা ঘেরাও করে হামলার চেষ্টা করে। এ সময় থানা থেকে ব্যাপক গুলি চালানো হয়েছে। সেখানে তিন শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে নিহত হয়েছেন। সেখানে চার-পাঁচজন পুলিশও মারা গেছে। তাদের অনেকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানা ঘেরাও করে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশের বড় একটি দল ফিল্মি স্টাইলে থানা থেকে বের হয়ে নির্বিচারে গুলি করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়। তারা থানা থেকে চলে যায়। এ সময় বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে। থানায় কয়েকজন পুলিশ আটকা পড়ে। তাদের গণপিটুনি দিয়ে সেখানেই মেরে ফেলা হয়েছে। ঢামেক থেকে আমাদের সংবাদদাতা আল-আমিন জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টির বেশি লাশ গিয়েছে। যাদের লাশ এসেছে তাদের অধিকাংশই যাত্রাবাড়ী কাজলা এলাকা থেকে।

আদাবর এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া জানান, আদাবর থানায় হামলা করতে গেলে পুলিশ গুলি করে। সেখানে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংখ্যা কত সেটা জানা যায়নি। থানা ছেড়ে পুলিশ সদস্যরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় ‍লুটপাট করেছে।

খিলগাঁও থানা পুলিশ থানা ও নিজেদের রক্ষার জন্য প্রথমে আন্দোলনকারীদের গুলি করে পরে তারা টিকতে না পেরে থানা ছেড়ে চলে যায়। সেখানেও অনেকে হতাহত হয়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানার সামনে রিজার্ভ ফোর্সের দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য বাঁচার জন্য আকুতি জানান। তারা জনরোষে পড়ছেন বলে জানান। উত্তরা পূর্ব থানার সামনে ব্যাপক গুলি হয়েছে। বাড্ডা ও রামপুরা থানায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে।

নিরাপত্তার কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কদমতলী থানার কার্যক্রম সোমবার থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার শামসুল ইসলাম নয়ন। তিনি বলেন, ‘আমরা কদমতলী থানার অপারেশনাল কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রাবাড়ী থানায় স্থানান্তর করেছি। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই থানার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।’

কোটা সংস্কারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৫২ জন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত এসব মরদেহ আনা হয়। এ ছাড়া প্রায় ২৭৫ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন (আরএস) মো. আলাউদ্দিন।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- যাত্রাবাড়ীর মাছ ব্যবসায়ী আজমত (৪০), অজ্ঞাত (২৪), মোহন (২২), ইয়াসিন (২৪), শাহিন (২২), অজ্ঞাত (২৮), অজ্ঞাত (৪০), অজ্ঞাত (৩০), অজ্ঞাত (১৫), অজ্ঞাত (৪৫), অজ্ঞাত (৩০), অজ্ঞাত (২২), অজ্ঞাত (২৮), ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী লিটন উদ্দিন (৩২), অজ্ঞাত (২০), অজ্ঞাত (২২), হালিম বিক্রেতা শাওন (১৪), অজ্ঞাত (৩০), অজ্ঞাত (২১), অজ্ঞাত (২৩), ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী আব্দুল হান্নান (৫০), অজ্ঞাত (২৮), কাজলা এলাকার রাসেল (২৮), অজ্ঞাত (২৭), অজ্ঞাত (২৫), শিক্ষার্থী আ. রহমান (২২), মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থী রাকিব (২২), কেরানীগঞ্জে যমুনা ব্যাংক কর্মকর্তা মানিক মিয়া (২৫), কুতুবখালীতে দোকানদার সাইফুল ইসলাম তন্ময় (২২), সৌদিপ্রবাসী আবু ইসহাক (৫২), গাবতলীর শাকিল (২১), ময়মনসিংহের আব্দুল নুর (৩০), বাংলা মোটরে শিক্ষার্থী ইসমাইল রাব্বি (২২), বংশালে টাইলস মিস্তিরি রনি (১৭), শিক্ষার্থী হামিদুর রহমান (২২), অজ্ঞাত (২৫), অজ্ঞাত (২৮), নবাবপুরে অজ্ঞাত (২১), উত্তর বাড্ডা অজ্ঞাত (২০), সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বাহক রায়হান (২১) ও শরীয়তপুরের মনোয়ার (৫০)।

এদিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর দিয়ে হামলা-ভাঙচুর থেকে আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত হয়ে আসার অনুরোধ করেন। তবে এর মধ্যেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকটি থানা, প্রধান বিচারপতি ও আইজিপি বাসভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া কিছু বেসরকারি টিভি চ্যানেল ভবন আগুন, ভাঙচুর ও লুটের খবর পাওয়া যায়। থানা থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনাও ঘটে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীদের একটি দল চানখাঁরপুল দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে আসছিল। চানখাঁরপুল মোড়ে পুলিশ তাদের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেরুল বাড্ডায় মূল সড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। সেখানে তারা স্লোগান দিতে থাকে। রামপুরা ব্রিজের কাছ থেকে পুলিশ এসে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তখন বিক্ষোভকারীরা গলির ভেতরে ঢুকে যায়। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী রাস্তায় অবস্থান নেয়। ভাটারা ও যমুনা ফিউচার পার্কের দিকেও জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।

প্রধান বিচারপতি ও আইজিপির বাসা লুট: গতকাল বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে পড়েন সাধারণ জনতা। এসময় তারা বাসায় থাকা সকল জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের মাহপরিদর্শকের (আইজিপি) বাসায় লুট করেছে সাধারণ জনতা। তারা বাসায়র সকল জিনিসপত্র নিয়ে যায় অনেকে।

পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আগুন : গতকাল রাত পোনে ৮টায় রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ায় তারা। সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দেয়াল টপকে পালিয়েছে।

গণমাধ্যম অফিসে ভাঙচুর: সহিংসতার অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে বেসরকারি কয়েকটি গণমাধ্যম অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলকারীরা। এর মধ্যে বেসরকারী টেলিভিশন সময়, এটিএন নিউজ, মাই টিভি ও ৭১ টিভিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এটিন নিউজের প্রতিবেদক সাইফুল জুয়েল জানান, ঢিল ছুড়ে এটিএন নিউজ ভবনের প্রায় সব কাচ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ সময় তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আগুন, লুটপাট: রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় আগুন দিয়ে বিক্ষ্রুব্ধ জনতা। আনুমানিক দুপুর আড়াইটার দিকে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসা এই স্থাপনায় আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয়। এই সময় শুধু এই বাড়িতেই আগুন দেওয়া হয়নি,আশেপআশে থাকা অন্য দুটো বাড়ি ও জাদুঘর সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুকে প্রতিনিধিত্ব করে এসন সব স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। যে যার মতো করে নিয়ে যায় জাদুঘরে রাখা ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্ন থেকে যাবতীয় সব কিছু।

আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আগুন: রাজধানীর গুলিস্থানে বঙ্গবন্ধু অ্যাাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসেও আগুন দিয়েছে জনতা। এর আগে করা হয় ব্যাপক ভাংচুর। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধ এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিল। পরে পরিস্থিতি বুঝে তারা বেরিয়ে যান। দুপুর ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর করা হয়। তারা নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত উঠে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে আগুন-ভাংচুর: বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩/এ সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা হয়। এসময় সেখানে দলটির কোনও নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না। তবে কার্যালয়টির তিনজন কর্মচারী থাকলেও হামলার কয়েক মিনিট আগে বেরিয়ে যান। কার্যালয়ে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, অনেক মানুষ এসে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা করে। তারা ভাঙচুর করে দুটো ভবনেই আগুন ধরিয়ে দেয়। আমারা তিনজন স্টাফ দ্রুত বের হয়ে এসেছি।

শিশু পার্কের নির্মানাধীন স্থাপনা ও বঙ্গবন্ধুর মুর‍্যালে আগুন: আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে নির্মানাধীন শিশু পার্কে ভাংচুর করে জনতা। এই পার্কের মাঝের জায়গায় বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল মুর‍্যাল স্থাপন করা হচ্ছিলো। উত্তেজিত জনতা সেটিতে আগুন দেয়। পাশেই শেখ পরিবারের আরও কয়েকজনকে নিয়ে একটি কয়েকটি ভাস্কর্য ছিলো। সেগুলোতেও আগুন দেওয়া হয়। এই সময় উত্তেজিত জনতাকে বলতে শোনা গেছে, সব জায়গায় নিজের পরিবাররে আইনা রাইখা দিছে। দেশটা নিজেগো কইরা ফালাইছে। ছোট ছোট পোলাপান এডি দেখব আর খালি ওগো কথাই জানব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা, থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন: রাজধানীর ধানমন্ডির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসা ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া থানা, আওয়ামী কার্যালয়সহ অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

পথে পথে আ.লীগ নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা: পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই সড়কে বাড়তে থাকে জনসাধারণের উপস্থিতি। রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং সড়কই মানুষের দখলে।

নওগাঁয় খাদ্যমন্ত্রীর বাড়িসহ কয়েক এমপির বাড়িতে আগুন : নওগাঁয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বাড়িসহ কয়েকজন এমপির বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ায় খাদ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর পর্যায়ক্রমে শহরের সরিষাহাটি মোড়ে নওগাঁ-৫ আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ সদরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক, নওগাঁ-৬ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণ ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের বাড়িসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সিলেটে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে হামলা- লুটপাট: সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও এমপি ড. এ কে আবদুল মোমেনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। তাদের ঘরের ফ্রিজি, টিভি, খাট, সোফা, চেয়ারসহ সবকিছু নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর টিলাগড়ের বাসায়ও হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি রনজিত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন ও সহসভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসা এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহি উদ্দিন সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে সবকিছু লুটে নেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলা পরিষদ ও পুলিশ সুপার কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। জাসদ নেতা লোকমান আহমদের বাসায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়।

সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রী পলকের বাসায় লুটপাট: নাটোরের সিংড়ায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের বাসায় ভাংচুর ও মালামাল লুট করা হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া সিংড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বহু আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে।

ভৈরবে ক্রীড়ামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসানের (পাপন) বাসভবনে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

বরিশালের সাবেক মেয়রের ভবনে আগুন: বরিশালে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির কালিবাড়ি রোডের বাসভবনে বিকেলে আগুন দেয়া হয়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসকে যেতে বাধা দেয় বিক্ষুব্ধরা। প্রায় ১ ঘণ্টা পর সন্ধ্যার দিকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাড়িটি থেকে পুড়ে আঙ্গার হওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুড়ে বিভৎস হয়ে যাওয়ায় মৃতদের পরিচয় সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এই বাড়িতে থাকতেন আবুল হাসানাতের বড় ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাড়িটিতে আগুন দেয়ার কিছুক্ষণ আগেও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সাদিক নিরাপদে বাড়ি ছেড়েছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়াও আগুন দেয়া হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর এমপির ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড সড়কের বীর উত্তম ভবনে। সিটি করপোরেশনের এনএক্স ভবন ও আওয়ামী লীগ অফিসেও আগুন দেওয়া হয়।

নড়াইলে মাশরাফীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, নড়াইল-২ আসনের এমপি ও হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষদ্ধরা। এ সময় মাশরাফী ও তার পরিবারের দুর্লভ ছবি, ট্রফিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়।

আরও অনেক এমপির বাড়িতে হামলা: বগুড়ায় বিকেল ৩টার দিকে সদরের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবনে লুটপাট, ভাংচুর ও গ্যারেজ থেকে পাজেরো জিপগাড়ি বের করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

নাটোরে এমপি মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন জান্নাতি প্যালেস আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধরা। শহরের একই এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।

কুমিল্লায় মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস এবং সদর আসনের এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এমপি খান আহমেদ শুভর অফিস, মির্জাপুর ক্লাব, সাবরেজিস্টার অফিস, ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

মাগুড়ায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, মাগুরা-১ আসনের এমপি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক কার্যালয় এবং শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের এমপি ড. বীরেন শিকদার ও জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জাহিদুল আলমের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

নীলফামারীতে সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের বাড়িতে হামলা হয়। লহ্মীপুরে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এছাড়াও ফেনীতে এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, পটুয়াখালীতে গলাচিপা-দশমিনার এমপি এসএম শাহজাদা, লালমনিরহাটে এমপি মোতাহার হোসেন ও মতিয়ার রহমান এবং সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়।

যশোরে শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন, নিহত ২১: যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পাঁচ তারকা হোটেলে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটছে।

চট্টগ্রামে নগরে কোতোয়ালী, পতেঙ্গা ও চান্দগাঁও থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। মিছিল থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারেও হামলা হয়েছে। নগর পুলিশের সদর দপ্তরেও হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। বিকালে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। আওয়ামী লীগ নেতা সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাসায়ও আগুন দেওয়া হয়।

সাভারে নিহত ৮: ঢাকার সাভারে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মুন্সীগঞ্জে সদর থানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। থানায় থাকা পুলিশের অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে তারা। এছাড়া পুলিশ লাইন্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের বাসভবনে হামলা ও লুটপাট হয়।

গাজীপুরে সংঘর্ষে নিহত ৯: গাজীপুরের শ্রীপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন এবং গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় পুলিশের গুলিতে একজন ও কালিয়াকৈরে আনসার সদস্যদের গুলিতে দুজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধরা থানা, কারাফটক, মেয়র ভবন, সাবেক এমপিসহ কয়েকজন যুবলীগ নেতার বাড়িতে ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং ধল্লা পুলিশ ক্যাম্পে হামলা হয়েছে।

হবিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত ৬: হবিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সকালে বানিয়াচং থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহত হন অর্ধশতাধিক। এ সময় বিক্ষুব্ধরা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

খুলনায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নিহত ২: খুলনার কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম মহসিন রেজাসহ দুইজন পিটুনিতে নিহত হয়েছেন। নিহত অপরজন হলেন জিএম মোহসীন রেজার গাড়িচালক আলমগীর। এছাড়া তার দেহরক্ষী ইয়াকুবের অবস্থা সংকটাপন্ন। বিকাল ৪টার দিকে কয়রা উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও খুলনা মহানগরীতে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপির বাসভবন, খুলনা বেতার ভবন, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা পরিষদ ভবন, খুলনা প্রেসক্লাব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের পেট্রোল পাম্প, এস এম কামাল হোসেনের নগরীর খালিশপুরের বাসভবন, দৈনিক দেশ সংযোগ কার্যালয় এবং নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ অর্ধশত প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশের গুলিতে নিহত ১: মানিকগঞে।জর শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধরা শিবালয় থানায় হামলা চালিয়ে দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।

চাঁদপুরে পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২: চাঁদপুরে কচুয়া থানার এসআই মামুনুর রশিদ পিটুনিতে ও ফরিদগঞ্জে বিক্ষুব্ধরা থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত (২০) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে আগুনে নিহত ৪: চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ায় জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলমের বাড়িতে দেওয়া আগুনে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় নিহতদের পরিচয় সনাক্ত হয়নি।

রাজশাহীতে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা: রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়েছে। বিকেলে মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়। আরএমপির বেশিরভাগ থানা ও ফাঁড়িতে। নগর ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও রিসোর্টে ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালাতে গেলে সেনা সদস্যরা তা প্রতিহত করেন। উপশহরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নগরীর রানীবাজারে লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহুতল ভবন ‘সরকার টাওয়ার’-এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শেরপুরে কারাগারে হামলা: শেরপুর জেলা কারাগারে বিক্ষুব্ধ লোকজন ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন। এ সময় কারাগারে থাকা ৫১৮ বন্দীর সবাই পালিয়ে গেছেন। এ সময় কারাগারে থাকা অস্ত্র ও মূল্যবান সামগ্রী লুটের ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

Comments (0)
Add Comment