ভারত ও শেখ হাসিনা: সম্পর্কের সংকট এবং ভবিষ্যৎ অন্ধকার

বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার সরকারকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে আসছে ভারত। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, অপশাসন, খুন-গুমসহ নানা অপরাধের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারত তার অবস্থান বদলাতে রাজি হয়নি। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে এবং বিচারের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে ভারত কী অবস্থান নেবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তাঁর লাল পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর তাঁকে ভারত কীভাবে আশ্রয় দেবে, সেটি নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার সরকারের সমর্থক ছিল। তবে গত বছরের ১৯ জুলাই বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে ৭৫ জন নিহত হয়। এই ঘটনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করেন। হাসিনার শাসনামলে ভারত কখনোই বাংলাদেশ বা এর জনগণের প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাব প্রদর্শন করেনি। হাসিনার পতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও রাজনীতিতে সন্দেহপ্রকাশের কারণে সম্পর্কের মধ্যে কূটনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৩২ শিশু নিহত হয়েছে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ নতুন সরকারের তরফ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাইতে পারে।

শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হলে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে। হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৫৬টি হত্যা মামলা রয়েছে, এবং তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর ভারতে তাঁর অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ভারত যদি হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তবে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে ভারতের প্রতি অসন্তোষ বাড়বে, যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ভারতের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ভারতের শত্রু নয়, সমস্যা ভারতের নেতাদের সাথেই। ভারত যদি আঞ্চলিক পরাশক্তি হতে চায়, তবে এর পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারকদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের সাথে সৎ যোগাযোগ এবং নতুন কূটনৈতিক মিত্র নির্বাচন করার সময় এসেছে। ভারতের জন্য এখন প্রয়োজন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে নতুন কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং পুরোনো সমর্থন ব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করা।

-দ্য ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে আহমেদ হুসাঈন

Comments (0)
Add Comment