বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রতিবেদনকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ও আহত শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সংস্থাটি কাজ করছে এবং তাদের প্রত্যেকের প্রতি শোক প্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতার সময় লিঙ্গ-ভিত্তিক নির্যাতন, শারীরিক আক্রমণ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যা নারীদের বিক্ষোভ থেকে দূরে রাখতে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল। এসময় শিশুরাও রেহাই পায়নি; তাদের হত্যা করা হয়েছে, আহত ও পঙ্গু করা হয়েছে, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও অমানবিক অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
একটি ভয়াবহ ঘটনায় ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সী এক কিশোর ২০০টি ধাতব গুলির আঘাতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়। আরেকটি ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে ছয় বছর বয়সী এক শিশু, যে বাড়ির ছাদ থেকে সংঘর্ষ দেখছিল, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ৫ আগস্টের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনায় আজমপুরের এক ১২ বছর বয়সী শিশু বলেছে, সে ‘বৃষ্টির মতো’ পুলিশের গুলি চালানো দেখেছে।
এ ঘটনাগুলোকে গভীর উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ইউনিসেফ বলেছে, বাংলাদেশে যেন আর কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটি তিনটি মূল বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
১. সহিংসতায় নিহত শিশুদের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটানো।
২. আটক শিশুদের মুক্তি ও তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
৩. রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে পুলিশ বিভাগ ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিশু নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার না হয়।
ইউনিসেফ আরও বলেছে, সহিংসতা, শিশুদের বেআইনি আটক ও অপব্যবহারের সমস্ত ঘটনার স্বাধীন তদন্ত করা উচিত। বিচার বিভাগ সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শিশু সুরক্ষার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ এখন পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করছে। তরুণদের জন্য নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, এই মুহূর্তে কার্যকর সংস্কার গ্রহণ করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিশু বা পরিবার এ ধরনের ট্র্যাজেডির শিকার না হয়।