ঢাকা রিডার: ফের মোদি? ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলে এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৯৪টি আসনে এ জোটের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ২৩১ আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (‘ইন্ডিয়া)। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমস।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জোটগতভাবে এগিয়ে থাকলেও বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে সরকার গঠনের জন্য শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে নরেন্দ্র মোদির দলকে।
এদিকে এনডিএ জোটকে বিজয়ী ঘোষণা করে ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল রাতে দিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তৃতীয়বার এনডিএর সরকার গঠন নিশ্চিত। মানুষ পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছে বিজেপি ও এনডিএর ওপর।’
গতকাল রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৫২৭টির ফল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। তাতে বিজেপি জয় পেয়েছে ২৩৮টি আসনে। আর কংগ্রেস জয় পেয়েছে ৯২ আসনে। সমাজবাদী পার্টি ৩৭টি ও তৃণমূল কংগ্রেস ২৯ আসনে জয় পেয়েছে। অন্যান্য দলের মধ্যে ডিএমকে ২২, জনতা দল ১২, রাষ্ট্রীয় জনতা দল চার, আম আদমি পার্টি তিন ও অন্যান্য দল ৯৭ আসনে জয় পেয়েছে। যে ১৬টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি, সেগুলোর মধ্যে কংগ্রেস ছয়, ডিএমকে চার, বিজেপি তিন ও অন্যান্য দল তিনটিতে এগিয়ে ছিল।
এবার বেশ কয়েকটি রাজ্যে আধিপত্য হারিয়েছে বিজেপি। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশও রয়েছে। সেখানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৫টিতে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইন্ডিয়া’। এ জোটের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবেও। এবার বিজেপির অনেক আলোচিত প্রার্থী হেরে গেছেন।
এ তালিকায় রয়েছেন উত্তর প্রদেশের স্মৃতি ইরানি, উত্তর প্রদেশের মেনকা গান্ধী ও পশ্চিম বঙ্গের দিলীপ ঘোষ।
বিজেপি এবার দলগতভাবে ৩৭০ আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। আর জোটগত লক্ষ্য ছিল ৪০০ আসনে। কিন্তু ভোটের চিত্র বলছে, লোকসভার গত দুই নির্বাচনের মতো এবার তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সরকার গঠনের জন্য মোদিকে নির্ভর করতে হবে জোটের বড় শরিক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও জেডিইউর ওপর। এর মধ্যে নীতিশের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ ১৪টি এবং নাইডুর টিডিপির ১৬ আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতীতে এ দুই দলের শীর্ষ নেতাদের একাধিকবার এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও ফিরে আসার নজির রয়েছে।
বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পরই অবশ্য নীতিশ ও নাইডুকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত কোন জোটে ভিড়বে, তা সময় গেলে পরিষ্কার হবে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বলেছে, এ দুই নেতা মোদির জোটকে বাদ দিয়ে এবার বিরোধী পক্ষের শিবিরে যোগ দিতে পারেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নীতিশ ও নাইডুকে জোটে ধরে রাখতে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। গতকাল রাতেই দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেন অমিত শাহ। এছাড়া নিজের বাসভবনে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। অমিত শাহ ও রাজনাথ সিংয়ের মতো শীর্ষ নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এনডিটিভির খবর, ‘ইন্ডিয়া’ জোটও শরিক বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারাও গতকাল নীতিশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় সাত ধাপে। নির্বাচন চলে প্রায় ছয় সপ্তাহ। ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি। প্রথম ধাপের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল। ১ জুন হয় সপ্তম ধাপের ভোট।
২০১৯ সালের নির্বাচনে দলগতভাবে বিজেপি পায় ৩০৩টি আসন। আর জোটগতভাবে পায় ৩৫২টি। ব্রিটিশ শাসনামলের পর ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের ৭৬ বছরের মধ্যে ৫৪ বছরই দেশটির ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু শতবর্ষীয় এ দল গত দুই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যায়।