পঞ্চগড়ে অতিরিক্ত টাকা নিতে বাঁধা দেয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নে মরিচ ও সুপারি কেনা-বেচার হাটে কৃষকদের কাছ থেকে চাঁদার নামে অতিরিক্ত এক কেজি করে মরিচ নেয়ার প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান।

চাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের চাঁদার অতিরিক্ত মরিচ নিতে নিষেধ করায় ইউনিয়ন পরিষদসহ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপূর্ণ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে বলছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যানের চেম্বারে এ সংবাদ সম্মেলন করেন চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলার মরিচ ও সুপারি কেনা- বেচার সর্ববৃহৎ হাট শালবাহান হাট। সপ্তাহের দুইটি হাটের (শনিবার ও বুধবার) মধ্যে প্রতি হাটে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মরিচ ও সুপারি কেনা-বেচা হয়। হাটে মরিচ, সুপারি, ভুট্টা, শাক সবজি, ধান, পাট সহ নানা ফসল কেনা-বেচা করেন চাষি এবং ব্যবসায়ীরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন এখানে। তবে গত সপ্তাহ আগে কৃষক-চাষীদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত ক্রয়ের থেকে অতিরিক্ত এক কেজি করে মরিচ সংগ্রহ শুরু করে। এতে লোকশানের পরার শঙ্কায় চাষিরা ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করলে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। এর মাঝে হাট ইজারাদার রফিকুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের লোকজনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর মাঝে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) শালবাহান হাটে ব্যবসায়ীদের নিয়ে মরিচ-সুপারি ক্রয় বন্ধ করে রাখার অভিনয় করে গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকে।

চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, একই সময় নিজস্ব লোকজনকে নিয়ে পরিকল্পিত উত্তেজনামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে। যেটা পুরো তাদের সাজানো। আর সরকারি খাজনার টাকা ইজারাদারের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন পায়। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো হাত নেই। যদি এই ইউনিয়ন থেকে কোন পণ্য অন্য জেলায় ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে সে সকল ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে ইউনিয়ন পরিষদের গ্যাজেট অনুযায়ী একটা ট্যাক্স নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে কোন ট্যাক্স নেয়া হয় না। চেয়ারম্যান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে কৃষকদের বাজারে মরিচ ও সুপারি বিক্রয়ে খাজনা নির্ধারণ করে দেয় কেজি প্রতি ৩ টাকা। কিন্তু এর মাঝে আমার কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় এবং স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে তাদের নির্দেশনা প্রদান করায় তারা পরিকল্পিত ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের নাম করে নিজেরাই অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে উলটো ইউনিয়ন পরিষদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এর সব কিছুর পেছনে হাট ইজারাদারের হাত রয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, কৃষকের কাছ থেকে মণ প্রতি এক থেকে দেড় কেজি মরিচ কর্তন না করা হয়। ৩ টাকার বেশি খাজনা যেন না আদায় করা হয়, এবং গরু প্রতি মসজিদ-মাদ্রাসার নামে অতিরিক্ত চাঁদা না নেয়া হয়। কারণ প্রতিবছরে প্রায় মসজিদ-মাদ্রাসার নামে এ হাট থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আদায় হয়। যার মধ্যে মাত্র এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা মসজিদে দিয়ে ইজারাদাররা ভাগ করে নেন। তাই প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে এই ধরনের প্রতারণা এবং কৃষকের লোকসানে ফেলার বিষয়টি নজরে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ, ৩ নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য জাফর আলী, ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন ও মহিলা ইউপি সদস্য আলেয়া বেগমসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

Comments (0)
Add Comment