দেশজুড়ে দিনভর সংঘর্ষ, গোলাগুলি: নিহত ৭০

দেশজুড়ে দিনভর সংঘর্ষে ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দিনের শুরুতে সকাল ১১টায় লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হয় ২ জন। এছাড়াও দিনভর সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৫ জন, বগুড়ায় ৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ২ জন, কুমিল্লায় পুলিশসহ ২ জন, জয়পুরহাটে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৭০ জন নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত খবর-

রাজধানী আ.লীগ নেতা ও শিক্ষার্থীসহ নিহত ৫

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে দুপুর ১টার দিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকার লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেটে আশ্রয় নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গিয়ে তার ওপর হামলা করেন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ উত্তরা–১৪ নম্বর সেক্টরে নিহতের নিজ বাসায় রাখা হয়েছে।

এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।

বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আব্দুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

আব্দুল্লাহর বন্ধু পরিচয় দিয়ে জহির ইসলাম নামের একজন জানান, জিগাতলা এলাকায় আব্দুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আব্দুল্লাহ পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তার বাবার নাম আবু বকর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।

এদিকে মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে মিরাজ হোসেন (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজমল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অন্দিরা জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবক মারা যান। তিনি মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে থাকতেন।

বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ বিকেল তিনটা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১১ জনকে এখানে আনা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৪, আ.লীগ নেতার বাসায় আগুন

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ত্রিমুখী এই সংঘর্ষের সময় জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে এসব হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অঞ্জনা বেগম (৩৫) নামে একজন নারীসহ অন্তত চারজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে নারীসহ দুইজন দগ্ধ হয়ে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম মবিন (৩৫) এবং দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরেকজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি । এছাড়া রুবেল আব্দুল্লাহ (৩২) নামে এক যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে এসব ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের মধ্যে পুলিশ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীরা রয়েছেন।

এদিকে নিহতদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সময় দুইজন দগ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই দুইজনের একজন অঞ্জনা বেগম। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল গ্রামের আলম মিয়ার স্ত্রী। অন্যদিকে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় শহরের শহীদী মসজিদ এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রুবেল আব্দুল্লাহ নামে এক যুবক মারা গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের চরতালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে। রুবেল আব্দুল্লাহর বোন সুমাইয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে নিহত মবিন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের বাসিন্দা। তিনি যুবলীগ নেতা বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন।

এদিকে জেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহতদের ভিড় দেখা গেছে। আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) আকরাম উল্লাহ জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মারা যাওয়া দুইজনের লাশ হাসপাতালে রয়েছে। তাদেরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ (৫০) ও আরেকজন মহিলা (৩৫)। মহিলার নাম অঞ্জনা বেগম। এছাড়া পুরুষের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটিতে ২৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ও ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য দুইজনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানান, হাসপাতালে নিহত একজনের লাশ রয়েছে। তার নাম মবিন। এখানে মোট ৬৫ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২, শতাধিক গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে এক দফা দাবিতে আন্দোলনরতদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন- কলেজছাত্র আফনান ও মো. কাউসার। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অরুপ পাল। সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরীর শহরের বাসভবনে আন্দোলনকারীরা হামলা ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বোববার বেলা ১১টার দিকে বাগবাড়ি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয় এবং কয়েকজনকে মারধর করে। এ সময় বাগবাড়ি এলাকায় জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। তারা মিছিল নিয়ে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় মাদাম এলাকা থেকে পাল্টা মিছিল নিয়ে ঝুমুর সিনেমাহলের দিকে যেতে চাইলে দুই-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় সংঘর্ষে শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষে নিহত ৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির সমর্থনে ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৪টা) হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।

নিহতরা হলেন– ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন, সোনাগাজীর চর মজলিশপুর মান্দারি গ্রামের সাকিব এবং আরাফাত।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে শহরের ট্রাঙ্ক রোড থেকে দলবল নিয়ে শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক হয়ে মহিপাল যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় সড়কে গুলি তাক করে সাংবাদিকদের একটি ব্যাংকের ভেতর তাড়া করে মোবাইল, প্রেস জ্যাকেট ও আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে মারধর করেন তারা। পরে মহিপাল এলাকায় পৌঁছালে ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত গুলি ও হামলা চালান তারা। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের আরেকটি পক্ষ শহরের ইসলামপুর রোডে বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ও হামলা চালায়।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন। সড়ক অবরোধ করায় বন্ধ থাকে যান চলাচল।

রেজাউল করিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে গুলি নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আপাতত আর কিছু বলতে পারছি না।

প্রসঙ্গত শনিবার (৩ আগস্ট) সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাকও দেওয়া হয়েছে।

নরসিংদীতে ৬ আ. লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন।

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিন(২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারী ৪-৫ হাজার লোক আওয়ামী সমর্থকদের গুলি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে ধরে বের করে এনে মসজিদের সামনেই এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

এ ছাড়া নরসিংদী শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় চত্বরে সব থেকে ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে শুরু করে। দুপুর ১টার দিকে তারা জেলখানা মোড় থেকে নরসিংদী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লোক সমাগম বেড়েই চলেছে।

 

সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ নিহত ৯

সিরাজগঞ্জ শহর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ৯ জন নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ শহরে মারা যাওয়া তিনজন বিএনপির নেতাকর্মী বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।

এদিকে, জেলার রায়গঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস এবং সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরকার নিহত হয়েছে। এমনটি দাবি করেছেন চাঁন্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম আহমেদ। নিহত আল-আমিন সরকারের বড় ভাই হলেন সেলিম আহমেদ।

এছাড়া, এই উপজেলার ধর্মগাছা উইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার লিটন, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান।

সিরাজগঞ্চ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, আজ শহরে সংঘর্ষ চলাকালে মারা যাওয়াদের মধ্যে জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক রঞ্জু রহমান রয়েছেন। বাকি দুই জন হলেন- সুমন শেখ (২৮) এবং আব্দুল লতিফ (৪২)। তারা যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী।

নিহত রঞ্জু রহমান শহরের পৌর এলাকার মাসুমপুর মহল্লার মাজেদ রহমানের ছেলে। সুমন শেখ ও আব্দুল লতিফ একই মহল্লার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দুই পক্ষের মধ্যে। এ সময় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরি, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হন। এছাড়া, জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন তারা।

এদিকে, এনায়েতপুর থানা, হাটি কুমরুল হাইওয়ে থানা, বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বিকেলে বলেন, ‘আন্দোলনে কয়েকজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। খোঁজখবর নিচ্ছি। শহরের অবস্থা থমথমে থাকলেও এখন কোন সংঘর্ষ চলছে না।’

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা, ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আজ রোববার পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়াও কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে হাইওয়ে থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মুন্সিগঞ্জে নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক

মুন্সিগঞ্জ শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে আজ রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল তিনটা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছিল। গুলি, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

নিহতরা হলেন শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরাজীর ছেলে রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), একই এলাকার মো. সজল (৩০) এবং হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার মেহেদী হাসান। তাঁদের মধ্যে রিয়াজুল ও সজল ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতাল নেওয়ার সময় মেহেদী হাসান মারা যান বলে জানান তাঁর স্বজনেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাঁরা শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় আসতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পেটানো শুরু করেন। ঘটনাস্থলের ঠিক ২০ মিটারের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ সদর পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ।

এ ঘটনার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীরা শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার সড়ক দিয়ে সুপারমার্কেট এলাকায় আসতে চাইলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মী বন্দুক, ছুরি, লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি, শিলই ও আধারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র, ককটেল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। পরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছড়রা গুলি ছোড়ে। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এবং নৌ ও সড়কপথে ঢাকায় পাঠানো হয়।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা জামাল আজ দুপুর ২টার দিকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন মৃত ছিলেন। বেলা ২টা পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সকালে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর শুরু করেন। পরে তাঁরা একত্র হয়ে মিছিল শুরু করেন। পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ করে তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করা হয়। আন্দোলনে দেড় থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কয়েকজন মারা গেছেন। পুলিশের সামনে ঘটনা ঘটলেও পুলিশ আওয়ামী লীগের কাউকে বাধা দেয়নি। উল্টো ছাত্রলীগের গুন্ডাদের ডেকে নিয়ে এসে তাঁদের ওপর হামলা করাচ্ছে। একবার পুলিশ গুলি করে, একবার আওয়ামী লীগের লোকজন গুলি করে।

বগুড়ায় পুলিশ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত ৪

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন।

তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিশ্চিত করেছেন বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে সকাল থেকে বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রাখেন হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দেওয়া হয়। সবচেয়ে উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। সকালে আওয়ামী লীগ মাঠে এলে তাদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। এখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে ছাত্র-জনতার।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, পৌনে চারটা পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ৬৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, মনিরুল ছাত্র আন্দোলন করতে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিন কাজল বলেন, এ হাসপাতালে বিকেল পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ‘বহু স্থানে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। থানায় হামলা করেছেন। সরকারি স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছেন। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। সহিংসতায় কেউ মারা গেছেন কি না, তা পুলিশের জানা নেই।’

 

মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ৩

মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মাগুরা সদর হাসপাতালের কর্মব্যরক চিকিৎসক ডা. অমর প্রসদ দুজনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরো এক জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৫), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের যুবক সুমন শেখ (২৬), শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবদলকর্মী ফরহাদ (২২)।

সংঘর্ষে আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন।

স্থানীয়রা জানান, রবিবার বেলা ১১টার দিকে মাগুরা জেলা সদরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় বিএনপি নেতা কর্মীরা জমায়েত হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে শহরের ঢুকতে গেলে পুলিশ জলকামান নিয়ে এসে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশৈর ওপর ইটপাটকেট নিক্ষেপ করে তারা।

জবাবে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রথমে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ পরে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।

এদিকে রাব্বির মরদেহ মাগুরা হাসপাতাল থেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে এলে সেখানে নতুন করে উত্তেজনা ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে।

এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাসের ছাত্র যুবদলকর্মী ফরহাদ (২২)।

অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে সুমন শেখ (২৫) নামের যুবক নিহত হয়ে। নিহত সুমন বালিদিয়া গ্রামের কালুমিয়ার ছেলে।

ভোলায় সংঘর্ষে নিহত ৩, আ.লীগ কার্যালয়সহ নানা স্থাপনায় ভাঙচুর-আগুন

ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে আজ রবিবার তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাঁদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে ছাত্রলীগ পিছু হটে যায়। পরে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষোভকারীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টার দিকে ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত হয়। পরে ১০টার দিকে ভোলা ইলিশা সড়কের মধ্যে ইলিশ চত্বর দখল করে বিক্ষোভকারীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রাইসুল আলম। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে কালিনাথ বাজার, মহাজনপট্টি ও বরিশাল দালান হয়ে বাংলাস্কুল মোড়ে এলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে।

ছাত্রলীগ বাধার মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনে রাখা ছাত্রলীগের ৪০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা ভূমি কার্যালয়, ভোলা পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

ভোলা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলামসহ ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু বলেন, বিক্ষোভকারীরা যুবলীগের কর্মী মো. মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রাইসুল আলম বলেন, পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগের হামলায় তাঁদের দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

রংপুরে সংঘর্ষে আ.লীগ নেতাসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৪ জন নিহত

রংপুর নগরীতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায়সহ ৪ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ সাংবাদিকসহ শতাধিক। গুরুতর আহত অবস্থায় ৯ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত বাকি ৩ জন হলেন যুবলীগ কর্মী খসরু (তার বাড়ি রংপুর নগরীর গুড়াতিপাড়া), মাসুম (৩১) (তার বাবার নামসহ বিস্তারিত নিশ্চিত হওয়া যায়নি)। এ ছাড়া নিহত আরেকজনের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অপরদিকে বদরগঞ্জ উপজেলা সদরে রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী, বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট, যুবলীগ নেতা পুলিন চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুট হয়েছে। একইভাবে মিঠাপুকুর উপজেলার ইউএনও কার্যালয়, সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন, প্রেস ক্লাবের সামনে রাখা ১১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও নগরজুড়ে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে, সকাল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রংপুর নগরীর টাউন হল চত্বরে সমবেত হতে থাকে। অপরদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা নগরীর জাহাজ কোম্পানি এলাকায় অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ সিটিবাজার থেকে শুরু করে জাহাজ কোম্পানি এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পিস্তলসহ দেশি অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল।

সংঘর্ষ চলাকালে একুশে টিভির ক্যামেরাপারসন আলী হায়দার রনি, এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমানসহ ৮ সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই এবং ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে ছবি নিতে দেখলেই মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে আহত সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন।

২ ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুল হাসান রুমি জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ৭ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় রংপুরে আসার কথা থাকলেও আসেনি। নিরাপত্তার কারণে তদন্ত কমিটির সফর স্থগিত হয়েছে।

পাবনায় গুলিতে নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক

পাবনায় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষের মধ্যে গুলি খেয়ে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরে শহরের ট্রাফিক মোড়ে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আর পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আরও ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বেলা ১১টার দিকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের মেইন গেইটে এক দফা দাবিতে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী জড়ো হন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শহরের ট্রাফিক মোড় এলাকায় পৌঁছে আব্দুর হামিদ সড়কে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের বাঁধায় আন্দোলনকারীরা সেখানেই অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এক পর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে ট্রাফিক মোড় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় একদল ব্যক্তি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৩৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, গুলিবিদ্ধ দুইজনকে হাসপাতালে আনার পর তারা মারা যান। আর একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ আরও ৩৪ জনের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া আরও অনেকেই আহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন- চর বলরামপুরের বাসিন্দা পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২১), হাজিরহাট ব্রজনাথপুরের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান (২২) ও এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)।

বেলা সাড়ে ৪টার দিকে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন আরও দুজন। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।

 

সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে নিহত ২

সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত দুজন হলেন, ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ এই দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিহত দুজনের শরীরে গুলি রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো বক্তব্য দেয়নি।

হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হন। পরে আন্দোলনকারীরা লাশ নিয়ে শহরে মিছিল করে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ জানান, নিহত দুজন ছাড়াও আরো অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লায় নিহত ২

কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ মহাসড়ক ফাঁড়ির এরশাদ নামে এক কনস্টেবল ও দেবীদ্বারে রুবেল নামে এক বাস চালক নিহত হয়েছে। দুপুর থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শহরের আলেখারচরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের ধাওয়া করতে দেখা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কুমিল্লায় এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছেন। রবিবার দুপুরে সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বারেরা নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নয়ন মিয়া নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত ব্যক্তি দেবিদ্বার পৌর এলাকার রুবেল হোসেন (৩২)। ওসি বলেন, হতাহতের সংখ্যা এখনো বলতে পারছি না। তবে, পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি।

অপর দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ মহাসড়ক ফাঁড়ির এরশাদ নামে এক কনস্টেবল নিহত হয়েছে বরে মহাসড়ক পুলিশের পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেছেন। বিক্ষোভকারীরা ফাঁড়িতে হামলা চালায় এবং ঘেরাও করে রাখে। ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রোমেল বড়ুয়ার গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দাউদকান্দি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদউল্লাহ প্রধানের প্রাইভেটকার ভাংচুর করে খাদে ফেলে দেয়।

জয়পুরহাটে সংঘর্ষে নিহত ১, আ.লীগ অফিসে আগুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, মীর মোয়াজ্জেম, মাহমুদ হোসেন হিমু, অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত আ.লীগ নেতা হারুনোর রশিদ বলেন, দুপুরে থানা আওয়ামী লীগ অফিসে বসে থাকার সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ হামলা চালায় এবং আগুন দেয়।

এদিকে নিহত মেহেদী হাসানের মরদেহ কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা

বরিশালে টুটুল চৌধুরী নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এএসএম সায়েম।

তিনি বলেন, ‘টুটুল চৌধুরীর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেককিছুই বাহিরে বের হয়ে গেছে। এককথায় রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

নিহত টুটুল বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ দিপু।

এদিকে স্থানীয়রা ও নিহতের স্বজনরা জানান, নগরের করিম কুটির এলাকায় আন্দোলনকারীরা আকস্মিক হামলা চালায়। এসময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।

পরে আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment