তীব্র গরমে ছন্দপতন ঘটেছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। জীবিকার তাগিদে প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করেও তারা ঘর থেকে বাইরে বেরোচ্ছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় ও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কম থাকায় ভাটা পড়েছে তাদের আয়ে।
মঙ্গলবার ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সূর্যের প্রচণ্ড তাপে নাজেহাল অবস্থায়ও রিকশাচালক, পথচারী, হকার ও ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা বাইরে আছেন। রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় গামছা, মাথাল ব্যবহার করছেন তারা। আবার গরমে হাঁপিয়ে ওঠা অনেকে ক্লান্তি দূর করতে সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে শরবতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন।
শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে ডলু মিয়া নামে এক রিকশাচালক বলেন, গরমে ঠিকমতো রিকশা চালানো যায় না। আবার রাস্তায় যাত্রীও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম। গত কয়েকদিন মালিকের জমা টাকা দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
হারুন নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, সকালে কিছু সময় রিকশা চালিয়ে বিকেলের আগে আর বের হতে পারি না। এতো গরমে ঘরেও শান্তি নেই। সারাদিনে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘরে ফিরলেও লোডশেডিং। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
ফেনী শহরের ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্টে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বয়োবৃদ্ধ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এরকম গরম দেখিনি। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। কতক্ষণ হাঁটার পরপরই বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। গরমে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় কমে গেছে।
শহরের রাজনন্দিনী দীঘির পাড়ে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছিলেন আবুল খায়ের। তিনি বলেন, গরমে আয় একবারে কমে গেছে। আগে দৈনিক ৪০০-৭০০ টাকা আয় হতো। গত কয়েকদিন তার অর্ধেকও আয় হয় না। খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরও সংসার তো আর গরম বুঝবে না। তাই নিরুপায় হয়ে এতো গরমে বসে আছি।
শহরের কলেজ রোডের চা বিক্রেতা রাজন বলেন, বিকেল পর্যন্ত দোকানে একদম ক্রেতা নেই বললেই চলে। মানুষজন গরমে চা খেতে পছন্দ করে না। গত কয়েকদিনে দৈনিক আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কেমন থাকবে আবহাওয়া?
এদিকে চলমান দাবদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আবহাওয়া অফিস। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে নিম্ন থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। চলমান তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।