টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈধভাবে লাল মাটি ও ফসলি জমি কেটে বিক্রির ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে এই কার্যক্রম চলছে, যা পাহাড়, ফসলি জমি এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘাটাইলের সন্ধানপুর, রসুলপুর, দেওপাড়া, সংগ্রামপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে পাহাড়ি টিলা এবং ফসলি জমি কেটে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, মাটি কেটে ১০-১৫ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মাটি কাটার ফলে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তার ধুলোতে ফসল, দোকানপাট, এমনকি বসতবাড়িও ঢেকে যাচ্ছে। এর ফলে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন স্থানীয়রা। রাস্তাঘাটের অবস্থাও চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ঘাটাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিন আক্তার জানিয়েছেন, “অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত কিছুদিনে অভিযানে বেশ কয়েকটি এক্সক্যাভেটর এবং তাদের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।”
ধলাপাড়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান বলেন, “পাহাড় ও বনাঞ্চল থেকে মাটি কাটার ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
স্থানীয় রাজনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘাটাইল উপজেলা বিএনপি সভাপতি সিরাজুল হক সানা অভিযোগ করেন, “রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির কিছু নেতা মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত। আমি প্রতিবাদ করায় হুমকির মুখে আছি।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, “আমার নাম ব্যবহার করে অন্যরা মাটিকাটার কাজ করছে।”
ইটভাটায় মাটি সরবরাহ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাটাইল উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, “পাহাড়ি মাটি ও কাঠ ইটভাটায় ব্যবহার না করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
পাহাড়ি মাটি ও ফসলি জমি কাটা বন্ধে স্থানীয়রা প্রশাসনের আরও কার্যকর পদক্ষেপ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।