মার্চের শুরু হলেও এখনো জানুয়ারির বেতন পাননি দেশের ২০ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজের পৌনে চার লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শান্ত আলী সম্প্রতি বাবা হয়েছেন। অথচ টানা দুই মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। শান্ত আলী বলেন, “দুই মাস বেতন পাচ্ছি না, বুঝেন অবস্থা! আমাদের বেতন এমনিতেই কম, তার ওপর এত দেরি হলে চলব কীভাবে?”
শুধু শান্ত আলী নন, সারাদেশের হাজারো এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী জানুয়ারির বেতন না পাওয়ায় কঠিন সংকটে আছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এখনো জানুয়ারির বেতনের অর্থ ছাড় করতে পারেনি।
জানুয়ারির বেতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশির সাধারণ প্রশাসন শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক মো. শাহজাহান বলেন, “শিক্ষকদের জানুয়ারির বেতনের অনুমোদন পেতে জিও জারির কাগজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিষয়টির সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ৯ হাজার ১০২টি মাদ্রাসার ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ফেব্রুয়ারির বেতন ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাড় করেছে। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরাও জানুয়ারির বেতন পেয়ে গেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দেওয়া অনেক শিক্ষক এখনো প্রথম বেতন পাননি। নারায়ণগঞ্জের পূর্বগ্রাম এম এল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমি ১ সেপ্টেম্বর যোগদান করেছি, কিন্তু ছয় মাসেও বেতন পাইনি। নানা জটিলতার কারণে এখনো ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) কার্যকর হয়নি।”
জানুয়ারির বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, “রমজান মাস শুরু হয়েছে, অথচ শিক্ষকরা এখনো জানুয়ারির বেতন পাননি। এটা অগ্রহণযোগ্য। দ্রুত বেতন না পেলে শিক্ষকরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দ্রুত ছাড়ের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান। তিনি বলেন, “শিক্ষকদের জানুয়ারির বেতনের অর্থ ছাড়ের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।”
শিক্ষকরা দ্রুত বেতন পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বিলম্ব হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।