ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো ৭৪৭ পুলিশ চিহ্নিত

রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পর্যায়ের ৭৪৭ পুলিশ সদস্য গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘটিত এই ঘটনায় অধিকাংশ পুলিশ সদস্য কোনো নিয়মনীতি না মেনে গুলি করেছেন বলে জানা গেছে।

খবর অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ওই চার দিনে শুধু যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ৩৫৭ সদস্য প্রায় ৮ হাজার প্রাণঘাতী গুলি করেন। এতে অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিহত ও কয়েক শ আহত হন।

শনিবার (২ নভেম্বর) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, অতি বলপ্রয়োগকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তদন্ত সংস্থার সূত্রে জানা যায়, পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহার পর্যালোচনা করে ‘লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি আইনজীবী সংগঠন তদন্তের রিপোর্ট প্রদান করে। এই প্রতিবেদনে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের নাম ও গুলির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণকারী ৭৫৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মধ্যে ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। পুলিশের শটগান, চীনা রাইফেল, সাব-মেশিনগান, পিস্তল, এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। চার দিনে ছোড়া প্রায় ২৬ হাজার গুলির মধ্যে প্রাণঘাতী গুলি ছিল ১৬ হাজার ৯১২টি।

তদন্ত সংস্থা বলেছে, গুলি চালানোর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মনীতি মানেনি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার জসীম উদ্দিন মোল্লা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শহীদুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, পুলিশের এই আচরণ সম্পূর্ণ অবৈধ। নিরস্ত্র জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

Comments (0)
Add Comment