নিউজ ডেস্ক:
দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আশার আলো দেখাচ্ছে এই রোগ থেকে সুস্থতার হার। দেশে এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন শনাক্ত রোগীর বিপরীতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দেড় লাখের বেশি। সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক দৈনন্দিন বুলেটিনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই হাজার ৬৭ জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। ফলে বর্তমানে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৭০। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ৪ হাজার ৪১৭ জন। ফলে করোনা আক্রান্ত হলেও ১ লাখ ৫ হাজার ৬৫৩ জন বাসা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্থাৎ তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাননি বা যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৯০৭ জনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে এ ভাইরাস। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে একই সময়ে মারা গেছেন আরও ৩৯ জন। ফলে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিন হাজার ৪৩৮ জনে। পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৮৪৯টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮টি। ২৪ ঘণ্টায় যা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯০৭ জনের মধ্যে। ফলে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জনে।
আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন তিন হাজার ৪৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৬৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী চারজন। মোট মৃতদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৭২১ জন (৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ) এবং নারী ৭১৭ জন (২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ)। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী একজন, ২০ বছরের বেশি বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১০ জন, ষাটোর্ধ্ব ১৩ জন, সত্তরোর্ধ্ব ছয়জন ও ৮০ বছরের বেশি বয়সী চারজন ছিলেন। ঢাকা বিভাগের ছিলেন ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাতজন, খুলনা বিভাগের ছয়জন, রাজশাহী বিভাগের আটজন, ময়মনসিংহ বিভাগের তিনজন, রংপুর বিভাগের একজন এবং বরিশাল বিভাগের দুইজন ছিলেন।
গত রোববারের বুলেটিনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ হাজার ৭৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৪৮৭ জন। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত- উভয়ই বেড়েছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে। সোমবার (১০ আগস্ট)ের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
দেশে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি ২ হাজার ১৩০ এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছেন ২০০ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি ২৪৩ এবং আইসিইউতে ভর্তি ১৯ জন। সারাদেশের অন্যান্য হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি ১ হাজার ৭৩৫ এবং আইসিইউতে ভর্তি ৯০ জন। সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য সব মিলিয়ে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ১৫ হাজার ২৬৮টি, তাতে রোগী ভর্তি আছেন ৪ হাজার ১০৮ এবং শয্যা খালি ১১ হাজার ১৬০টি।
সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৫৪৩টি, রোগী ভর্তি ৩০৯ এবং শয্যা খালি ২৩৪টি। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর গোটা বিশ্বকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা সাত লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। তবে সুস্থ রোগীর সংখ্যা এক কোটি ২৯ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর এতে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।