নিউজ ডেস্ক:
আস্থা সংকট আর মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অন্যান্য আর্থিক খাতের মতো দেশের শেয়ারবাজারেরও অবস্থা খারাপ। তবে প্রায় দেড় মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়লেও রোববার সাম্প্র্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে তেজিভাব দেখা যায়। রোববার লেনদেনের শুরুতেই তেজিভাব দেখা গেছে।
মাত্র ১০ মিনিটে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শত কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। শুরুর এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ২০০ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। এতে এক দিনেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম করার বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজারে এখন এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা রবিবারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক দিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ঐ পরিমাণ বেড়েছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি রোববার সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হলো। ঐদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট।
রোববার প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৪০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেননি কিছু বিনিয়োগকারী। দাম বাড়ার সীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে যায় দুই ডজনের বেশি কোম্পানি।
রোববার এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২৭৭টি কোম্পানির। এর মধ্যে ২৫০টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১৫৪টি। ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ২৬টির। এদিকে সূচকের বড় উত্থানের দিনে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে সিএসইর লেনদেন। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা।