উইকিপিডিয়ার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ

ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে। হেযবুত তওহীদের ভাষ্য, উইকিপিডিয়ার বাংলা সংস্করণে হেযবুত তওহীদকে “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত একটি সংগঠন” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, অথচ বাস্তবে এমন কোনো ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই আসেনি।

উইকিপিডিয়া একটি বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা “মুক্ত বিশ্বকোষ” হিসেবে খ্যাত। এখানে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ইচ্ছুক ব্যবহারকারীরা সম্পাদনা করতে পারেন, নতুন পৃষ্ঠা তৈরি করতে পারেন এবং বিদ্যমান তথ্য সংশোধন করতে পারেন। তবে এর এই উন্মুক্ত সম্পাদনার নীতিই আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যখন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচার ঢুকে পড়ছে এবং তা দীর্ঘদিন ধরে পাঠকের চোখে “সত্য” হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

এ বিষয়ে ১০ মে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে সংগঠনটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ঘৃণামূলক। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং সংগঠনটির দীর্ঘদিনের সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি চক্রান্তের অংশ।

অভিযোগকারী পক্ষের দাবি, হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার তথ্য ‘ভুল, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমি নিশ্চিত করে জানি- উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে -এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের তথ্য প্রচার কেবল একটি সংগঠনের মানহানি নয়, এটি তথ্যসন্ত্রাসেরও একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।”

উল্লেখ্য, হেযবুত তওহীদ একটি ধর্মভিত্তিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বর্তমানে বাংলাদেশজুড়ে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত। সরকারিভাবে হেযবুত তওহীদকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ ঘোষণা করা হয়নি -এমন কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা নথিপত্র নেই।

হেযবুত তওহীদের নেতারা বলেন, উইকিপিডিয়ায় এমন তথ্য পরিবেশন ‘অসতর্কতা’ বা ‘অজ্ঞতা’ নয় বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারেরই অংশ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন -এত বড় একটি প্ল্যাটফর্ম কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া এমন তথ্য প্রকাশ করল? এমনকি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যদি ভুল তথ্য যুক্ত করে, তবে সেটি দীর্ঘদিন ধরে যাচাই না হওয়া এবং সংশোধন না হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উইকিপিডিয়ার মতো একটি জনপ্রিয় তথ্যভাণ্ডারে এ ধরনের ভুল উপস্থাপন কেবল একটি সংগঠনের প্রতি জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে না, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে, যখন একটি গুগল সার্চ বা ফেসবুক শেয়ারের মাধ্যমেই লাখো মানুষের কাছে কোনো মতামত পৌঁছে যায়, তখন এমন ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অপচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে।

হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে উইকিপিডিয়ার কাছে এই ভুল তথ্য দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেন, “একটি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত বলা মানে সেটিকে অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অথচ কোনো সরকারি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো এ ধরনের ঘোষণা দেয়নি। উইকিপিডিয়ার এই ভুল তথ্য আমাদের সংগঠনের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।”

তথ্য প্রযুক্তি আইন বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, যদিও উইকিপিডিয়া মুক্ত সম্পাদনার একটি মাধ্যম, তথাপি সংবেদনশীল এবং ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুনাম বিনষ্ট করতে পারে এমন বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভুয়া তথ্য ছড়ালে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার অপরাধ দমন আইনের আওতায়ও আসতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদকে ঘিরে পরিবেশিত ভুল তথ্য এখন সংশোধন না করলে শুধু একটি সংগঠন নয়, পাঠকের জানার অধিকার, তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও অনলাইন জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে উইকিপিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এখন দেখার বিষয় -এই অভিযোগের ভিত্তিতে উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়।

উইকিপিডিয়াহেযবুত তওহীদ
Comments (0)
Add Comment