বিবাহিত নারীরা তাদের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করতে পারবে কি? কিংবা নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে সে পরিচয়ে পরিচিত হতে পারবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর। সুখময় দাম্পত্য জীবন মহান আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। আর ঝগড়া ও মনোমালিন্যে দাম্পত্য জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। ইদানীং আমাদের সমাজে বিবাহিত নারীরা নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে। এভাবে নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করা কি ইসলামে জায়েজ?
উত্তর হচ্ছে, নারীদের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করা প্রচলিত ভুল। বিয়ের প্রথমেই অনেক মেয়ে, নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে। মনে হয় ভালোবাসা নাম পরিবর্তনেই। যেমন: কথার কথা মেয়ের নাম তানিয়া আক্তার, স্বামীর নামের অংশ রহমান। মেয়ে নিজের নাম রাখে ‘তানিয়া রহমান’। অধিকাংশ মেয়েরা বিয়ের পর এই পদ্ধতিতে নাম রাখে। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। কারণ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
مَا جَعَلَ اللّٰهُ لِرَجُلٍ مِّنۡ قَلۡبَیۡنِ فِیۡ جَوۡفِهٖ ۚ وَ مَا جَعَلَ اَزۡوَاجَکُمُ الّٰٓیِٴۡ تُظٰهِرُوۡنَ مِنۡهُنَّ اُمَّهٰتِکُمۡ ۚ وَ مَا جَعَلَ اَدۡعِیَآءَکُمۡ اَبۡنَآءَکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ قَوۡلُکُمۡ بِاَفۡوَاهِکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یَقُوۡلُ الۡحَقَّ وَ هُوَ یَهۡدِی السَّبِیۡلَ
অর্থ: আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার অভ্যন্তরে দুটি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। আর তোমাদের স্ত্রীগণ, যাদের সাথে তোমরা যিহার করে থাক, তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্য পুত্রদেরকে তিনি তোমাদের পুত্র করেননি; এগুলো তোমাদের মুখের কথা। আর আল্লাহ সত্য কথাই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৪)
اُدۡعُوۡهُمۡ لِاٰبَآئِهِمۡ هُوَ اَقۡسَطُ عِنۡدَ اللّٰهِ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ تَعۡلَمُوۡۤا اٰبَآءَهُمۡ فَاِخۡوَانُکُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ مَوَالِیۡکُمۡ ؕ وَ لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ فِیۡمَاۤ اَخۡطَاۡتُمۡ بِهٖ ۙ وَ لٰکِنۡ مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
অর্থ: তোমরা তাদেরকে ডাকো তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্লাহর নিকট এটাই বেশী ন্যায়সংগত। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং বন্ধু। আর এ ব্যাপারে তোমরা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তর যা স্বেচ্ছায় করেছে (তা অপরাধ), আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫)
উক্ত আয়াতে পিতৃ-পরিচয়ের নামটি ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা আল্লাহর এই নির্দেশ অমান্য করবে তাদের পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যে কেউ নিজের বাবা ছাড়া অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় অথবা যদি কোনো দাস তার মুনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মুনিব বানায়, তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতা ও সমগ্র মানব জাতির লানত বর্ষিত হবে। কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোনো ফরজ কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না। (মুসলিম: ১৩৭০)
তাই আপনার নামের সঙ্গে যদি যুক্ত হয় সেটা আপনার বাবার নাম যুক্ত হতে পারে, স্বামীর নাম না। ধরুন আপনার বাবার নাম যদি থাকে ‘শাফিউদ্দীন’ তাহলে আপনি বলেন ‘তানিয়া শাফী’।
স্বামীর নাম যুক্ত করা ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল বিধায় বিবাহিত নারীদের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত হবে না। এটা সুন্নাহর খেলাফ। কোরআনের নির্দেশের খেলাফ। অসংখ্য নারীরা এটা করেন এবং এটাকে গৌরবের বিষয় মনে করেন। কিন্তু এটা উচিত নয়। কারণ স্বামী পরিবর্তনযোগ্য কিন্তু বাবা পরিবর্তনযোগ্য নয়। বাবা কোনোদিন পরিবর্তন কেউ করতে চাইলেও করার কোনো রাস্তা নেই। জন্ম দিয়েছেন- তিনি বাবা হয়েছেন এবং কেয়ামতের ময়দান পর্যন্ত তিনি বাবা হিসেবে পরিচিত থাকবেন। কিন্তু স্বামীর ব্যাপারটা এরকম নয়। তাই ভালোবাসা আপনি যতই প্রকাশ করেন আর না করেন পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম আপনাকে যে নীতিমালা দিয়েছে সেটাকে অনুসরণ করা উচিত।
স্বামীদেরও এক্ষেত্রে ভুল বোঝা উচিত না যে, আমার নাম কেন সে যুক্ত করছে না। এই ভুল বোঝাটা তাদেরও উচিত না। আবার স্ত্রীদেরও অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের নির্দেশকে লঙ্ঘন করা উচিত নয়। বরং প্রত্যেক মেয়েরই নামের সঙ্গে যদি যুক্ত করতে হয় তাহলে বাবার নাম যুক্ত হবে- স্বামীর নাম না। সমাজে প্রচলিত এ সংস্কৃতি আমাদের ভুল ধারণার বহিঃপ্রকাশ।
যদি নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম ব্যবহারের এতই মর্যাদা থাকত, তাহলে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীরা তাদের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম ব্যবহার করতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। কারণ এটি নিজের সঠিক পরিচয় তুলে ধরে না। বরং নামের উদ্দেশ্যই হলো নিজের এবং বংশের পরিচয়কে তুলে ধরা। এটিই অধিক যুক্তিসংগত।