চলমান গাজা যুদ্ধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে। এমন ধারণার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, এটি মূল্যায়ন করা যুক্তিসঙ্গত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইসরায়েল সেসব ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ উপায়ে ব্যবহার করে থাকতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের হাতে এই সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন শুক্রবার কংগ্রেসে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর থেকে গাজায় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে ইহুদী রাষ্ট্রটি। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। এই যুদ্ধে শুরু থেকেই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছিল দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে কঠোর অবস্থানে যেতে শুরু করে বাইডেন প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলসহ অন্য পক্ষগুলো কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করছে, তা মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছিল হোয়াইট হাউজ।
তবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে গাজায় কিছু অভিযান নিয়ে ইসরায়েলের তিরষ্কার করা হলেও দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
গাজায় ইসরায়েলকে যে ‘অভাবনীয় সামরিক চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলা করতে হয়েছে, সেটা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে আইন মেনে চলতে ইসরায়েলের দেওয়া নিশ্চয়তা ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য’ উল্লেখ করে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে হামাস সামরিক উদ্দেশে বেসামরিক স্থাপনা ও নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে এমন একটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রেলক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ইসরায়েল সম্ভবত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, অথবা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
এতে বলা হয়েছে, যেকোনো সামরিক অভিযানে বেসামরিক মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ইসরায়েলের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সরঞ্জাম রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের যে চিত্র, যেখানে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির মাত্রা ব্যাপক, তখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সেসব কার্যকরভাবে ব্যবহার করছে কিনা।
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজায় বেসামরিক ক্ষতি কমাতে ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে ‘অসঙ্গত, অকার্যকর এবং অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সংঘাতের শুরুর দিকে গাজায় সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ইসরায়েল পুরোপুরি সহযোগিতা না করলেও সেই পরিস্থিতি এখন বদলেছে বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মূল্যায়নে উঠে এসেছে।
“ইসরায়েলি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে কিংবা সীমিত করে দিচ্ছে, আমরা সেটা এখন মনে করছি না,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা দেওয়া তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেভিড স্যাটারফিল্ড বলেছেন, এ ধরনের প্রতিবেদন এটাই প্রথম এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করার কাজটি চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
“বিশ্বে যত সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে এটি (গাজা) কিছুটা অন্যরকম। এখানে যেসব ঘটনা উদ্ভুত হচ্ছে আমরা সবগুলোকেই খোলামেলা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যভাবে বিবেচনা করার চেষ্টা করছি,” বলেন তিনি।
গাজার রাফায় ইসরায়েল সর্বাত্মক লড়াইয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে বোমা ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে জো বাইডেনের কড়া হুঁশিয়ারির একদিন পরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
অবশ্য প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বাইডেনের হুঁশিয়ারির জবাবে বলেছেন, প্রয়োজনে তার দেশ একাই লড়বে।
ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর আগে সোমবার পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি মানুষ রাফা থেকে সরে গেছে।
জাতিসংঘ বলছে, ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো নতুন করে গড়ে তোলা বসতিগুলোকে ঘিরে ফেলেছে।
ইসরায়েলি সেনারা সেখানে অভিযানের শুরুতে মিশরের সঙ্গে রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খুলে দেওয়া কেরাম শালোম ক্রসিংয়ে তাদের কর্মী এবং ত্রাণবাহী লরিগুলোর পৌঁছানো খুব বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।