রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজেদের ঘর থেকেই এখন প্রশ্নের মুখে। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ উঠছে, যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি ও জেলা প্রশাসক নিয়োগে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসাথে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়েছে।
এনসিপির শীর্ষ নেতা সারজিস আলম মার্চ মাসে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নিজ এলাকায় শোডাউনের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচিত হন। অপরদিকে, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুদক চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করে বিতর্কের জন্ম দেন, যদিও তারা দাবি করেন, এটি ছিল ব্যক্তিগত কাজ।
এছাড়া সেনাবাহিনী সংক্রান্ত সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েও বিতর্কে জড়ান এই দুই নেতা। এসব প্রসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সভায় প্রশ্ন তোলা হয়, যদিও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদান আমাদের ভেতরও ঢুকতে চাইছে। আমরা সেটাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনছি।”
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় শীর্ষ নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের ভেতর থেকেই সমালোচনা উঠে আসে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম জানান, তানভীরের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর যথাযথ প্রমাণ না পাওয়ায় আগে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
শুধু তানভীর নন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা থেকে এনসিপির যুব উপদেষ্টা হওয়া আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধেও একাধিক অনিয়ম ও অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, যদিও তিনি নিজের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে সচিবালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বদলি বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, “এই তরুণ নেতাদের বয়স কম, কিন্তু পরিপক্বতার প্রয়োজন রয়েছে। পরিণত আচরণ না করলে তাদের ভুলের সুযোগ নেবে প্রতিপক্ষরা।”
নতুন ধারার রাজনীতির অঙ্গীকার করা এনসিপি শুরুতেই বিতর্ক ও অনিয়মের আবর্তে পড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—তারা আদৌ কি ভিন্ন কিছু করতে পারবে, নাকি রাজনীতির সেই পুরনো পথেই হাঁটবে?