Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে র‌্যাব বিলুপ্তিসহ একাধিক সুপারিশ

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক সুশাসন নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিশেষভাবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর কার্যক্রমকে নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, র‌্যাবের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে এর সদস্যদের, যারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। বিজিবির দায়িত্ব কেবল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি ডিজিএফআইকে শুধুমাত্র সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আনসার-ভিডিপির কার্যক্রম সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা উচিত এবং তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, সশস্ত্র বাহিনীকে শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি দল। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করে তারা মাঠপর্যায়ে তদন্ত পরিচালনা করে। অনুসন্ধানী দলে মানবাধিকার বিশ্লেষক, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ প্রবিধান সংশোধন করে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগের নীতিমালা পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে, ধাতব গুলি ও প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করতে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কম প্রাণঘাতী কৌশল ও সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর জন্য ধাতব শট ও গোলাবারুদ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর জন্য বর্মভেদী গোলাবারুদের ব্যবহারও সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া, বর্তমান পুলিশ আইনের পরিবর্তে নতুন আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। ২০০৭ সালের খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশের ভিত্তিতে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশগুলো সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে, পুলিশে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতার বাইরে থাকবে।

ওএইচসিএইচআর বলছে, সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চাইলে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিতে তারা প্রস্তুত। তবে, জাতিসংঘের সুপারিশের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.