নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ১২টি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান। কৃষকের মাঠে একসঙ্গে তিন ধরনের ধান ছিল। এগুলো হলো- বোনা আমন, আউশ ধান ও রোপা আমন ধান। হিসাব করে দেখা গেছে, এবার বন্যা না হলে প্রায় পৌনে দুই কোটি মণ ধান বেশি উৎপাদন হতো। মোট ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩ দশমিক ৬৩ বিঘা জমির ধান বানের পানিতে ডুবে সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায় প্রায় পৌনে দুই কোটি মণ ধান কম উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক (১১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত) ৩৭ জেলায় বন্যায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের (অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি) কারণে ১২ লাখ, ৮১ হাজার, ৫১৫ দশমিক ৮৫ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোনা আমন ধান। এর পরিমাণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার ২০৬ দশমিক ১২ বিঘা। এর পরই রয়েছে আউশ ধান। আউশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ, ৭৪ হাজার ৩৭৩ দশমিক ১ বিঘা। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমনের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৪ দশমিক ৪১ বিঘা। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি বিঘায় ২০ মণ ধান উৎপাদন হলে মোট ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩ দশমিক ৬৩ বিঘা জমিতে ১ কোটি ৬৯ লাখ ১ হাজার ৪৭২ দশমিক ৬ মণ ধান উৎপাদন হতো।
বগুড়া জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের হেলাল খাঁ বলেন, আমার চোখের সামনে ৬ বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে ডুবে গেল। পানিতে না ডুবলে এখন ধান আমার ঘরে আসতো। ৬ বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১২০ মণ ধান পেতাম, যার দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বিধি বাম! এই টাকা বানের পানিতে গেলো। একই গ্রামের জয়নাল তালুকদার জানান, তারও তিন বিঘা জমির ধান বানের পানিতে ডুবে গেছে। এ কথা শুধু হেলাল খাঁ আর জয়নাল তালুকদারের না। তাদের মত্যে হাজারও কৃষকের একই বক্তব্য। হেলাল খাঁ আরও বলেন, ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া, চরপাড়া, ফকিরপাড়া, শৈলমারী, নলডাঙ্গা, এলাঙ্গী, গোসাইবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, শিমুলবাড়ী, শালপা, গজারিয়া, রোরৈতলী, বোয়ালকান্দিনহ ধুনট ও শেরপুর উপজেলার ২০ ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে। বন্যায় যখন ধান উৎপাদনে এমন ক্ষতি হচ্ছে তখনও আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘ব্রি’।
ব্রি’ এর গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। নভেম্বর পর্যন্ত ১৬.৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর পরও চাল ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। তদুপরি নভেম্বরের মধ্যে আমাদের ফুড বাস্কেটে নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে, বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। গত রোববার এক ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, আউশের উৎপাদন বিবেচনা করলে এ বছর আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন হবে ৩.৫৬ মিলিয়ন টন। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৩১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে ৩৭টি জেলায় বন্যা হচ্ছে) তাই বন্যার ফলে আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যায় ক্ষতির কারণে তারা বলছেন, জাতীয় উৎপাদন কম হতে পারে। কিন্তু খাদ্য সংকট হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।
বন্যায় ধানের ক্ষতি প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, চলতি মৌসুমে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যের আবাদে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা করে খাদ্য আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বন্যা পরবর্তী আবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম অনিশ্চয়তায় আছে। বন্যার পানি নেমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পুনর্বাসন ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করতে হবে। সেজন্য বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে ১৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত কাজের সাথে মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকটি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে মাঠ পর্যায়ের কাজের তদারকি করতে হবে।