গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনের কার্যালয়ে গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভিডিওতে ওসির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়। তবে ভিডিওটির প্রেক্ষাপট এবং নেপথ্যের ঘটনা সামনে আসায় পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অভিযোগের ভিত্তি না থাকায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেটিজেনদের একটি অংশ এখন সাংবাদিকের এমন লঙ্ঘিত কর্মকাণ্ডের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওসির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
প্রকাশিত ভিডিওটি অত্যন্ত গোপনে, টেবিলের নিচ থেকে ধারণ করা হয়। এতে ছবি অস্পষ্ট এবং কথোপকথন প্রায় কিছুই বোঝা যায় না। এরপরেই ছড়িয়ে পড়া একটি কল রেকর্ডিং পুরো বিতর্ককে নতুন মাত্রা দেয়। সেই রেকর্ডিংয়ে ওসি সালাউদ্দিনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, “আপনি আমার কার্যালয়ে ঢুকে অনুমতি ছাড়া গোপনে ভিডিও করতে পারেন?”
ভিডিওটি প্রকাশের পর ফেসবুকের মন্তব্য বিভাগে সাধারণ ব্যবহারকারীরা নিজেদের মতামত জানিয়েছেন, যার অধিকাংশই সাংবাদিকের কাজের পদ্ধতির বিরুদ্ধে এবং ওসির সমর্থনে। একজন মন্তব্য করেছেন, “ভালো করছে, সাংবাদিক এখন দালালে পরিণত হয়েছে।” আরেকজন লিখেছেন, “ওসি ঠিক আছে।” শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ওসি সাহেব ঠিক আছে, বাপের বেটা। পরবর্তীতে থানায় গেলে ওকে বসতে দেবেন না, দরজার সামনে দাঁড়া করে কথা বলবেন।” মনিরুল ইসলাম নামের আরেকজন সাংবাদিকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “সাংবাদিক টাকার জন্য এভাবে করে।” এই মন্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট, দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন সাধারণ মানুষ ইতিবাচকভাবে দেখছেন না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কার্যালয়কে ‘পাবলিক প্লেস’ ভাবার সুযোগ নেই। অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত বা অফিশিয়াল কক্ষে প্রবেশ করে গোপনে ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার কথোপকথন রেকর্ড করা বা ভিডিও ধারণ করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাংবাদিকের সংবাদ সংগ্রহের অধিকার আছে, কিন্তু সেই অধিকার আইন লঙ্ঘন করে বা কারো গোপনীয়তা হরণ করে প্রয়োগ করা যায় না।
বোদ্ধামহলের অভিমত, যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তা প্রমাণের জন্য আইনসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এভাবে গোপনে ভিডিও ধারণ করে কাউকে হেয় করা বা ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা সাংবাদিকতার নীতিমালারও পরিপন্থী।