Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

শেখ পরিবারের নাম থাকলেই প্রকল্প পাস, ৫১ হাজার কোটি টাকার অপচয়!

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের চাপের কারণে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যেগুলো পাস করানোর জন্য শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদন প্রথম আলোর। গত ১৫ বছরে শেখ পরিবারের নামে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অনেক প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা সরকারের অর্থের অপচয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, শেখ পরিবারের নামে নেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিনোদনকেন্দ্র, সাফারি পার্ক, দৃষ্টিনন্দন ভবন, আইসিটি, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠার নামে অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, ছেলে শেখ কামাল এবং শেখ রাসেলের নামে প্রকল্প রয়েছে।

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলার আগেই সরকারের পতন ঘটে। আরও ৪৩টি প্রকল্পের অনুমোদনের অপেক্ষা ছিল।

জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শেখ পরিবারের নামে নেওয়া অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও সেগুলো কার্যকর হচ্ছে না। যেমন, শেখ হাসিনার নামে ২০১৭ সালে যশোরে নির্মিত একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু পার্কটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত লোকসান কমাতে সেখানে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

শেখ কামালের নামে ২০২২ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করা হলেও সেটি কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সিলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কেরও একই দশা। সেখানে জমি বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ইলেকট্রনিক, হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে কাজ করছে, যা প্রকল্পের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সাফারি পার্ক স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের চাপের কারণে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়, যা স্থানীয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইভাবে, রাজশাহী শহরে তালাইমারী চত্বরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রকল্পগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে। যেমন, আইসিটিকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোতে অস্বাভাবিক খরচ ধরা হতো, যা কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পেত না। কারণ, এসব প্রকল্পে শেখ পরিবারের নাম যুক্ত থাকায় সেগুলোর উপযোগিতা বা খরচ নিয়ে আলোচনা করা যেত না। প্রকল্পের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ছিলেন, যারা নিজেদের স্বার্থে এ প্রকল্পগুলো পাস করিয়েছেন।

গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার নামে থাকা একটি ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে শুধু ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ এখন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ স্থগিত করতে কাজ করছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জনগণের টাকা আত্মসাতের বহুমুখী উপায় ছিল। এর মধ্যে একটি হলো শেখ পরিবারের নাম ব্যবহার করে প্রকল্প নেওয়া। এই পরিবারের নাম ব্যবহার করলেই প্রকল্প নিলেই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকা যেত। এ জন্য বিচারহীনতা তৈরি হয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনের যে জনরোষ তৈরি হয়েছে, তার একটি বড় কারণ ছিল আওয়ামী লীগের পরিবারতন্ত্র। দলটির এই কর্তৃত্ববাদ, দম্ভ ও অহমিকা জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি দাবি করেন, যাঁরা এসব প্রকল্প নিয়েছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আবার পরিবারতন্ত্র গড়ে তুলতে না পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.