“অলিগার্ক” শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষার “ολιγαρχία” (oligarkhía) থেকে। এখানে “ὀλίγος” (oligos) অর্থাৎ “অল্পসংখ্যক” এবং “ἄρχω” (arkho) অর্থাৎ “শাসন করা”। ধারণা করা হয়, প্রাচীন গ্রিক শব্দ “Oligoi” (অল্প) এবং “Arkhein” (শাসন করা) থেকে এই শব্দটি এসেছে। দার্শনিক অ্যারিস্টটল এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন এমন কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের বর্ণনা করতে, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অলিগার্কিকে একটি “অপকৃষ্ট আভিজাত্য” হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, “অলিগার্কি হচ্ছে সেই শাসনব্যবস্থা যেখানে সম্পদশালী ব্যক্তিদের হাতে সরকার নিয়ন্ত্রিত হয়।”
আভিধানিক অর্থ:
অলিগার্ক বলতে বোঝায় এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অলিগার্কির অন্তর্গত, অর্থাৎ এমন একটি শাসনব্যবস্থায় যেখানে ক্ষমতা কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। অভিধান অনুযায়ী, “অলিগার্ক” শব্দটি সাধারণত ধনী অভিজাত ব্যক্তিদের বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যারা শুধুমাত্র ক্ষমতা ও সম্পদের মালিকই নন, বরং সম্পদের উৎসগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতি বা সরকারের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেন। অলিগার্কের সমার্থক শব্দগুলোর মধ্যে “কর্তৃত্ববাদী”, “স্বেচ্ছাচারী”, “মাফিয়া”, এবং “সিন্ডিকেট” উল্লেখযোগ্য।
পারিভাষিক অর্থ:
অলিগার্ক বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা বিশাল সম্পদ ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি সাধারণত এমন পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে যেখানে একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কিছু সংখ্যক ধনী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। তারা নিজেরা সরাসরি রাজনীতিতে অংশ না নিয়েও, তাদের অর্থ ও সম্পদের মাধ্যমে সরকার বা নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন।
ব্যবহারিক অর্থ:
ব্যবহারিকভাবে, অলিগার্ক শব্দটি সেইসব ধনী ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যারা তাদের বিপুল অর্থবিত্তের কারণে একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেন। বিশেষত রাশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের অলিগার্ক বলা হয়, যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দ্রুত সম্পদ অর্জন করেন এবং তারপর থেকে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে প্রবল প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। অলিগার্করা প্রায়শই রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং নিজেদের ব্যবসা ও সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করে।