Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত ৯৮

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনা ঘটছে। গতকাল রোববার এই কর্মসূচির প্রথম দিনে সরকার-সমর্থক নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকাসহ ২০টি জেলা-মহানগরে ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের ১৩ সদস্য এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে পৃথক হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

গতকাল দেশের অন্তত ৫০টি জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মূলত সংঘর্ষে জড়ান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধে রাস্তায় নেমেছিলেন সরকার-সমর্থকেরা। তাঁদের অনেকের হাতে পিস্তল, শটগান, বন্দুক, কাটা রাইফেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শত শত।

এই কর্মসূচি ঘিরে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের বাসা ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনাও ঘটছে। শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে গতকাল রাজধানী ঢাকা ছিল সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ছেড়ে যায়নি। রাজধানীর ভেতরও গণপরিবহন চলাচল ছিল না বললেই চলে।

বেশির ভাগ স্থানে সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সেভাবে দেখা যায়নি। তাঁরা মূলত সরকারি স্থাপনা রক্ষায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ছররা গুলি, রাবার বুলেট ছোড়ে। প্রায় সব স্থানে পুলিশের সঙ্গে ছিলেন সরকারি দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। দিনভর সংঘর্ষের পর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়। তবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত কোথাও কোথাও সংঘর্ষ চলছিল বলে খবর আসে।

অসহযোগ আন্দোলন মোকাবিলায় গতকাল সকাল থেকে জেলা ও মহানগরে পাড়ায় পাড়ায় অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই।

অসহযোগ কর্মসূচিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা শনিবার রাত থেকেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নেন। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে অসহযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।

সকালের দিকে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় আসতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এক দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের হঠাতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ শুরু হয়।

গতকাল দিনভর রাজধানী ঢাকা ছিল বিক্ষোভ আর সংঘর্ষের নগরী। যাত্রাবাড়ী, উত্তরা-আজমপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, জিগাতলা, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, গুলিস্তান, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের কেন্দ্রে পরিণত হয় শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সকাল থেকেই শাহবাগ মোড় বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সন্ধ্যার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরের চিত্রও ছিল অনেকটা একই। গত রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জে পুলিশের ১৩ সদস্যসহ ২২ জন, রাজধানীতে ১১, ফেনীতে ৮, লক্ষ্মীপুরে ৮, নরসিংদীতে ৬, সিলেটে ৫, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৫, মাগুরায় ৪, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, মুন্সিগঞ্জে ৩, কুমিল্লায় পুলিশের সদস্যসহ ৩, শেরপুরে ২, জয়পুরহাটে ২, ভোলায় ১, হবিগঞ্জে ১, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১, সাভারে ১, বরিশালে ১ জন, কক্সবাজারে ১, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জনসহ ৯৮ জন নিহত হয়েছেন।

নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যু হয়। মাগুরায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ দুজন নিহত হন।

নিহত ৯৮ জনের মধ্যে বিস্তারিত নাম-পরিচয় জানা গেছে ৪৩ জনের। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ জন, পুলিশের ১৪ জন, শিক্ষার্থী ৯ জন, সাংবাদিক ১ জন ও বিএনপির ১ জন আছেন। কয়েকজনের নাম ও পরিচয় জানা গেলেও পেশা বা রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.