Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

কোটা আন্দোলন: পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে নিহত ৫

চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছা্ত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে ৩ জন নিহত এবং রংপুরে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (২৭) নিহত হয়েছে।

এরমধ্যে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)।

এর আগে বেলা তিনটার দিকে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। চট্টগ্রামে নিহতদের একজন শিক্ষার্থী, অন্যজন পথচারী বলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আহমেদ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কাজী তারেক আহমেদ বলেন, “হাসপাতালে দুইজনের লাশ গেছে। নিহত পথচারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ছাত্রের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তাদের মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকা থেকে আনা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এদিন দুপুরে ষোলশহর রেল স্টেশনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে ছিলেন সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মুরাদপুর মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন।

পরে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সড়কে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ১

এদিকে রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা পৌনে ৪ টা) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে আবু সাঈদের লাশ নিয়ে বেরোবির দিকে যাত্রা করতে দেখা দেখে।

এর আগে দুপুরে রংপুর জেলা স্কুলের সামনে জড়ো হন রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে রংপুর জিলা স্কুলের সামনে থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পর্যন্ত মিছিল নিয়ে হেঁটে যান। এ সময় তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ।

কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাধা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরাও ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।

পরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হল থেকে লাঠি, ছোরা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে শহর থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা যোগ দেয় ছাত্রলীগের সঙ্গে।

পলিটেকনিকের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের হামলায় এক ছাত্র নিহত হয়েছে। আমাদের ভাইয়ের রক্তের জবাব আমরা দেব।’

ঢাকা কলেজ এলাকায় যুবক নিহত

রাজধানীর ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (২৭) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে।

এদিকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পথচারীসহ এখন পর্যন্ত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.