Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কে এবং তিনি কোন গোপন নথি ফাঁস করেছিলেন?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতার পর আদালতে দোষ স্বীকার করে দীর্ঘ ১৪ বছর পরে মুক্ত হয়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপন সামরিক তথ্য, নথিপত্র প্রকাশ করে ১৪ বছর আগে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন মি. অ্যাসাঞ্জ। সেই সময় থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন।

সুইডেনে একটি ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সাত বছর ধরে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন মি. অ্যাসাঞ্জ। পরে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর সেদেশের কারাগারে ছিলেন।

মার্কিন আদালতে দোষ স্বীকার করলে এই কারাবাসকেই তার শাস্তি হিসাবে গণ্য করা হবে, আর কারাভোগ করতে হবে না, মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগের সাথে এরকম একটি সমঝোতার পর ব্রিটেন থেকে তিনি মুক্তি পান। তাকে মুক্তি দিতে অনেকদিন ধরে অনুরোধ করে আসছিল মি. অ্যাসাঞ্জের দেশ অস্ট্রেলিয়া।

এরপর প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে হাজির হয়ে দোষ স্বীকার করার পর তাকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কে এবং উইকিলিকস কী?

কিশোর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের জন্য বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন মি. অ্যাসাঞ্জ। তাকে ১৯৯৫ সালে হ্যাকিং করার অপরাধে জরিমানা করেছিল তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত এবং সে সময় আর কখনও এমনটা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই কেবলমাত্র কারাদণ্ড এড়াতে পেরেছিলেন।

পরবর্তীতে ২০০৬ সালে, উইকিলিকস ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন মি. অ্যাসাঞ্জ। ওয়েবসাইটটির দাবি, যুদ্ধ, গুপ্তচরবৃত্তি এবং দুর্নীতি সম্পর্কিত অনেক গোপনীয় সরকারি প্রতিবেদনসহ এক কোটিরও বেশি নথি প্রকাশ করেছে এটি।

এরপর ২০১০ সালে, উইকিলিকস একটি মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার থেকে করা এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ১৮ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করার দৃশ্য দেখা যায়।

us video
মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার থেকে করা ভিডিও চিত্র উইকিলিকসে প্রকাশ করা হয়

ভিডিওতে একটি কণ্ঠ শোনা গেছে। সেই কণ্ঠকে বলতে শোনা গেছে, ‘সবাইকে জালিয়ে দাও।’ এরপরই বিভিন্ন ব্যক্তিকে লক্ষ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়। আহতদের উদ্ধারে একটি গাড়ি এগিয়ে এসেছিলো। সেটিকে লক্ষ করেও গুলি ছোড়া হয়েছিলো। সেই হামলায় রয়টার্সের একজন আলোকচিত্রী ও তার সহকারী মারা গিয়েছিলো।

এছাড়াও উইকিলিকস মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংয়ের সরবরাহ করা হাজার হাজার গোপনীয় নথি প্রকাশ করে। এসব নথিতে বলা হয়েছে যে আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় মার্কিন সামরিক বাহিনী কয়েকশ’ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে যা রিপোর্ট করা হয়নি।

ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত তথ্য ফাঁস করার পর তাতে দেখা গেছে ৬৬ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক হত্যা করা হয়েছে।ইরাকি সেনাদের দ্বারা বন্দিদের নির্যাতনের তথ্য এবং মার্কিন কূটনীতিকদের আদান প্রদান করা আড়াই লাখ বার্তা ফাঁস করা হয়েছিলো।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার দিন একে অপরের খবর নিতে মানুষজন যেসব পেজার বার্তা প্রদান করেছিলেন তার মধ্যে থেকে প্রায় ছয় লাখ বার্তা প্রকাশ করেছিলো উইকিলিকস। ওই হামলার প্রতি সরকারি নানা দপ্তরের প্রতিক্রিয়াও ছিল। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য বার্তাটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কিত।

তাতে লেখা ছিল, “প্রেসিডেন্টের গমনপথ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন না। তবে কোথায় যাবেন সেনিয়ে তিনি নিশ্চিত নন।” ২০১৫ সালে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনি পিকচারস-এর প্রায় দুই লাখ ইমেইল ও কুড়ি হাজার নথি ফাঁস করা হয়েছিলো। সে সব ইমেইলে জানা যায় এনজেলিনা জোলি সহ বিখ্যাত তারকাদের সম্পর্কে কোম্পানিটির প্রোডিউসার কিরকম কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলেছেন।

সেখানে উঠে আসে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে রাজি না হওয়ায় হলিউড তারকা লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিওকে কীভাবে গালি দেয়া হয়েছে এবং আমেরিকান হাসল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স ও এমি অ্যাডামসকে পুরুষ অভিনেতাদের তুলনায় কত কম পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে।

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা বিষয়ক প্রধান জন পোডেস্টার ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা কয়েক হাজার ইমেইল ফাঁস করা হয়েছিলো। তাতে ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে মনোনয়নের আগে দলের মধ্যে হিলারি ক্লিনটনের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছিলো।

নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে যে বিতর্ক টেলিভিশনে প্রচার করা হয় তাতে সিএনএনের সাংবাদিক হিলারি ক্লিনটনকে একটি প্রশ্ন সম্পর্কে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিতর্কে প্রার্থীরা কেমন জবাব দিলেন তা ভোটের উপর প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়।

asanj folower
লন্ডনে বিক্ষোভ করেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরা

উইকিলিকসের বিষয়ে মার্কিন সরকারের প্রতিক্রিয়া:

মার্কিন বিচার বিভাগ ২০১৯ সালে এই নথি ফাঁসের ঘটনাকে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আপসগুলির মধ্যে একটি” হিসেবে বর্ণনা করে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা বলেন যে, এসব তথ্য প্রকাশের ফলে আফগানিস্তান ও ইরাকের অনেক নামী ব্যক্তিকে “মারাত্মক ক্ষতি, নির্যাতন বা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিতে” ফেলেছে।

মি. অ্যাসাঞ্জ অবশ্য জোর দিয়ে বলেছিলেন যে এসব নথি মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক গুরুতর অন্যায়ের তথ্য প্রকাশ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার বিরুদ্ধে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করতে সামরিক বাহিনীর ডেটাবেজে প্রবেশ করার ষড়যন্ত্র করাসহ ১৮টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ মি. অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করে। তার আইনজীবীরা বলছেন, দোষী সাব্যস্ত হলে মি. অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, তার চার থেকে ছয় বছরের সাজা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়নি?

একাধিক আদালতের শুনানির পর ২০১৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণের অনুরোধটি মঞ্জুর করা হয়েছিল, তবে মি. অ্যাসাঞ্জ সেই সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই লড়াই করেছেন। পৃথক একটি অপরাধের জন্য তাকে ২০১৯ সালে লন্ডনের উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন বেলমার্শ কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক থাকার ইতিহাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের মামলা চলাকালীন তাকে সেখানে রাখা হয়।

মানসিক স্বাস্হ্যের অবনতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন দাবি খারিজ করে দিয়ে ২০২১ সালে ব্রিটেনের হাইকোর্ট রায় দেয় যে তাকে প্রত্যর্পণ করা উচিত। এরপর ২০২২ সালে, সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে এবং ব্রিটেনের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল প্রত্যর্পণের আদেশটি নিশ্চিত করেন।

আদালতের পূর্ববর্তী একটি রায়ের পর্যালোচনা করতে শুনানির জন্য, যেটি তার আপিল করার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছিল, মি. অ্যাসাঞ্জ ২০২৪ সালের ২০ ও ২১শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানিতে অংশ নেন। তার সমর্থকরা বলছেন এটি হয়তো তার শেষ আইনি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদিও, তার আইনজীবীরা প্রত্যর্পণটি আটকে দেয়া উচিত বলে রায় দেয়ার জন্য ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস বা মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালতে আবেদন করেছেন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে ব্রিটেনের মধ্যস্থতায় এমন একটি সমঝোতা হয় যে, মি. অ্যাসাঞ্জকে আর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কারাভোগ করতে হবে না। বরং তিনি মার্কিন একটি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেবেন। বিনিময়ে এতেদিন ধরে কারাগারে থাকার বিষয়টি তার শাস্তি হিসাবে গণ্য হবে এবং তিনি মুক্ত ব্যক্তি হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন।

কীভাবে সমঝোতা হয়েছিলো?

শেষ পর্যন্ত এটি হলো কূটনীতি, রাজনীতি ও আইনের একটি মিশ্রণ, যার ফলে মি. অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়া যেতে ও মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে সোমবার যুক্তরাজ্যে লন্ডনের একটি বিমানবন্দরে গিয়ে প্রাইভেট বিমানে উঠতে সক্ষম হন। ইকুয়েডর দূতাবাসে সাত বছরের স্বেচ্ছা বন্দী এবং পাঁচ বছর আটক থাকতে বাধ্য থাকার পর যে সমঝোতায় তার মুক্তি এলো সেটি হতে কয়েক মাস সময় লেগেছে। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস বা সিপিএস বলেছেন দোষ স্বীকার করে আবেদনের একটি সম্ভাবনা ‘গত মার্চে প্রথমে তাদের নজরে আসে’। এর পর তারা কীভাবে মি. অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে উপস্থাপন এবং মুক্তি পেতে পারেন ‘বিচারক ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইচ্ছায়’ সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পরামর্শ দেয়।

তবে কয়েক বছরের অচলাবস্থার পর সমঝোতার সূত্রপাত সম্ভবত হয়েছিলো ২০২২ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকারের নির্বাচনের সময়। তারা বিদেশে আটক থাকা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে ফিরিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলো।জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন মি. অ্যাসাঞ্জ যা করেছেন তার সব তিনি সমর্থন করেন না। তবে ‘যথেষ্ট হয়েছে’ এবং এখন তার মুক্তির সময় এসেছে। তিনি এ মামলাকে অগ্রাধিকার দেন, যার বেশীরভাগ তৎপরতা ছিলো পর্দার অন্তরালে। তিনি পার্লামেন্টেও সব দলের সমর্থন পান এ বিষয়ে।

এমপিদের একটি দল ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এ নিয়ে তদবির করে। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরাসরি বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে জো বাইডেনের কাছে উত্থাপন করেন। এরপর পার্লামেন্টে এক ভোটে একটি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয় যাতে করে মি. অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারেন।

এরপর নানা তৎপরতা শেষে আইনের বিষয়টি আসে। যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট এক নির্দেশনায় বলে যে মি. অ্যাসাঞ্জ নতুন করে আবেদন করতে পারবেন। সমঝোতার বিষয়ে ইঙ্গিত আসে আমেরিকানদের দিক থেকেও। এপ্রিলে জো বাইডেন জানান তিনি বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করতে অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধ বিবেচনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্ক সুরক্ষায় আগ্রহী। ধারণা আছে যে বাইডেন প্রশাসন নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তিতে আগ্রহী ছিলেন।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কেন একুয়েডরের দূতাবাসে থাকতেন?

সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে মি. অ্যাসাঞ্জকে দেশে থাকাকালীন একজন নারীকে ধর্ষণ এবং অন্য একজনের শ্লীলতাহানির দায়ে অভিযুক্ত করে এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তিনি অবশ্য বলেন, এসব অভিযোগ “ভিত্তিহীন”। সুইডেনের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যকে বলা হয় মি. অ্যাসাঞ্জকে ফিরিয়ে দিতে, যিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে ছিলেন।

দুই বছর আইনি লড়াই চলে, কিন্তু ২০১২ সালে, যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করার পক্ষে রায় দেয়। তবে, মি. অ্যাসাঞ্জ একুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরেয়া, যিনি উইকিলিকস-এর একজন সমর্থক ছিলেন, তিনি এটি মঞ্জুর করেন।

pamela
একুয়েডর দূতাবাসে মি. অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন অভিনেত্রী পামেলা অ্যান্ডারসনসহ অনেক সেলিব্রিটি

একুয়েডর দূতাবাসে সাত বছর কাটিয়েছেন মি. অ্যাসাঞ্জ এবং সে সময় গায়িকা লেডি গাগা, অভিনেত্রী পামেলা অ্যান্ডারসনসহ অনেক সেলিব্রিটি নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন।

একুয়েডরের নতুন রাষ্ট্রপতি লেনিন মোরেনো ২০১৯ সালের এপ্রিলে মি. অ্যাসাঞ্জকে “বিদ্বেষপূর্ণ ও আক্রমনাত্মক আচরণ”, তার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অভিযোগ এবং দূতাবাসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি ঘাঁটাঘাটি করার সন্দেহের কারণে দূতাবাস ছাড়ার নির্দেশ দেন।

একুয়েডর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে দূতাবাসের ভিতরে প্রবেশ করে মি. অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটেনের পুলিশ। তারপর তাকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ (যা তার জামিনের শর্ত লঙ্ঘন ছিল) না করায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

তখন তাকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা অপরাধের অভিযোগের পর অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে তাদের মামলা তুলে নেয় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ।

stela maris
বেলমার্শ কারাগারে ২০২২ সালে মি. অ্যাসাঞ্জ তার দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী, আইনজীবী স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেন

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ কে?

মি. অ্যাসাঞ্জ ২০২২ সালে তার দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী, আইনজীবী স্টেলা মরিসকে বেলমার্শ কারাগারের অভ্যন্তরে বিয়ে করেছিলেন। এই দম্পতির সম্পর্ক শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং মি. অ্যাসাঞ্জ একুয়েডর দূতাবাসে থাকাকালীন দু’টি সন্তানের বাবা হন।

মিসেস অ্যাসাঞ্জের বিয়ের পোশাকটি ছিল ডেম ভিভিয়েন ওয়েস্টউডের ডিজাইন করা, যিনি মি. অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাদের দুই সন্তানের সাথে মি. অ্যাসাঞ্জের বাবা ও ভাই সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.