বাবুল রবিদাস:
পৃথিবীর মানুষ লেখা পড়া গ্রহণ করে অনেক উন্নয়ন করেছে। বিজ্ঞানের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ আধুনিক যুগের জ্ঞান বিজ্ঞান,তথ্য প্রযুক্তি গ্রহণ করেও অনেক মানুষ এখনো কুসংস্কারে আবদ্ধ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হোঁচট খেলে বা হাঁচি পড়লে তৎক্ষণাৎ কেউ কেউ ঘর বের হন না। অনেকেই মনে করেন পেছন থেকে ডাকা পড়লে কোনো কাজের সুফল পাওয়া যায় না। এরূপ বহু কুসংস্কার মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। অথচ এ সকল কুসংস্কার মৃলত সামাজিক জীবনের প্রতিবন্ধকতা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্তরায় এবং সময়ের অপচয়ের ঘটনা বটে। কুসংস্কার হলো অযৌক্তিক যে কোনো বিশ্বাস বা অভ্যাস। যা মূলত অজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত হয়। বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে কুসংস্কারের দ্বন্দ্ব¦ পরিলক্ষিত হয়। কুসংস্কারের কার্যকারিতা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হওয়া ভাগ্য বা যাদুতে ইতিবাচক বিশ্বাস অথবা যা অজানা তা থেকে ভয় পাওয়াকে বুঝায়।
উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত কুসংস্কারগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত আছে-
পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের পূর্বে ডিম খেলে পরীক্ষায় শূন্য(০) পাওয়া যাবে, ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে, আর বাম হাতে তালু চুলকালে বিপদ আসবে, জোড়া কলা খেলে জমজ সন্তান হবে, সকাল বেলা দোকান খোলার পর প্রথম কাষ্টমারের কাছে বাঁকিতে বিক্রি করলে, সারাদিন বাকিই যাবে,জ্যন্ত পিঁপড়া খেলে তাড়াতাড়ি সাঁতার শেখা যাবে,একজন অপরজনের সাথে মাথায় একবার টোকা খেলে দ্বিতীয়বার টোকা দিতে হয়, নইলে মাথায় শিং গজাবে, ঘর থেকে বাহিরে বেরুলে পেছন থেকে ডাকা নিষেধ, কারণ এতে যাত্রা অশুভ হয়, বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত দিয়ে বলতে হবে-ইদুর মামা ইঁদুর মামা তোমার দাঁত দাও আর আমার দাঁত নাও,অন্যথায় দাঁত গজাবে না।
ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে আয়ু কমে যাবে, খালি ঘরে সন্ধ্যার সময় বাতি না দিলে ঘরে ভূত, পেত্নী আসে, হাত থেকে থালা-বাসন পড়ে গেলে অতিথি আসবে, ফল খাওয়ার পর পানি খেতে নেই। কাক-কে ভাবা হয় অমঙ্গলের প্রতীক। বসন্তকালে কোকিলের ডাকে যদি কারো ডানদিক থেকে আসে, তাহলে আগামী বৎসরের জন্য সৌভাগ্য আশা করা যায়। ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়,এটা আমাদের সমাজের অনেক পুরোনো একটি কুসংস্কার। কোথাও ব্যাঙ ডাকলেই ধরে নেয়া হয় বৃষ্টি নিশ্চিত। এখানেই শেষ না,কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে,ব্যাঙের বিয়ে দিলে নাকি বৃষ্টি হয়,আর তাই অনেক জায়গায় রীতিমতো মহাধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কুসংস্কার রয়েছে। তবে আজকে আলোচনা করবো বাংলাদেশের কুসংস্কার নিয়ে। বর্তমানে দেশে প্রচণ্ড তাপ প্রবাহ চলমান । সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকার খবরে জানা যায় যে হিট স্ট্রোকে বেশ কিছু লোকের মৃত্যুর খবর। কোথাও কোথাও খাবার পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মানুষ স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারছে না।
উপর্যুক্ত সমস্যা থাকে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবরে জানা যায় যে, বৃষ্টির জন্য মানুষ জোড়া ব্যাঙ ধরে এনে বিয়ে দিচ্ছে। এ বিয়েতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আর এর ফল ব্যবসায়ীরা লুফে নিচ্ছে। কোথাও কোথাও দেখা যায় যে, বিভিন্ন ছন্দ,কবিতা ইত্যাদি পাঠ করতে। এছাড়াও ছোট ছোট সন্তানেরা লগ্ন হয়ে নেচে গেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি কামনা করছে।
এ গুলো করে কি ফল প্রাপ্তি হওয়া যায়? প্রশ্ন আপনাদের কাছে থাকলো? পাঠকবৃন্দ মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে মরুভূমি দেশ । এ দেশগুলোর আবহাওয়া অত্যন্ত গরম। এ দেশগুলোর জনগণ কি পানির জন্য ব্যাঙের সাথে ব্যাঙের বিয়ে দেয়? কখনোই না। তাহলে তারা কী করে মোকাবিল করে? এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ গত ইং ২ শে আগস্ট ২০২২ তারিখের একটি সংবাদ পরিবেশ করেছিলো যা নিম্নে তুলে ধরা হলো। আমিরাতে নামবে কৃত্রিম বৃষ্টি।
মেঘ কেটে বৃষ্টি নামাতে প্রকল্প চালু করা হয়েছিল।আরব আমিরাতে এ জন্য বিপদজ্জনক উড্ডয়নের সহায়তা নেবেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ৪৮ টি কাটির্জ ভর্তি লবণ দিয়ে মেঘকে বৃষ্টিতে রুপান্তর করা হবে আরব আমিরাতে। এর পিছনে কাজ করছেন এ্যান্ডার্স মার্ড নামে এক পাইলট। ৫৭ বছর বয়সী সুইডিশ বেশ জটিল পদ্ধতিতে কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। মেঘের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করানো ভীষণ দূরহ একটি কাজ।
এছাড়া ২৫ জুলাই ২০২১ তারিখের দৈনিক করতোয়া পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিল“কৃত্রিম বৃষ্টিতে ভাসলো শহর” । জানা যায় প্রচণ্ড গরম কমাতে মধ্য প্রাচ্যর অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইতে নামানো হয়েছে কৃত্রিম বৃষ্টি। ড্রোনের সাহায্যে আকাশে মেঘ তৈরি করা হয়েছিল । সেই মেঘের মধ্যে ইলেকট্রনিক্যাল চার্জ দিয়ে নামানো হয়েছিল বৃষ্টি। বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো যাতে বৃষ্টিতে কেউ ভিজে না। দুবাই বাসী প্রচন্ড গরমের পর স্বস্তিতে বৃষ্টি উপভোগ করেছিলো। ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে ও কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো হয়েছিল।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবরে জানা যায় যে, বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে ঝড়-বৃষ্টি তৈরি করতে পারে। সেই বৃষ্টি মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারে। এই রকম একটি খবর ২৬ ও ২৮ শে এপ্রিল ২০২৪ তারিখে প্রকাশ করেছে দৈনিক করতো পত্রিকা খবরটির শিরোনাম ছিল ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃত্রিম বৃষ্টির পরিকল্পনা নিলেও শুধু ঢাকাতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে। যা এলাকা ভিত্তিক । ওয়াটার ক্যানন দিয়ে ছিটানো পানিকে কৃত্রিম বৃষ্টি বলে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা এমনকি মেয়র ভিজেছেন।এটা শহরবাসীর স্বস্তি হতে পারে কিন্তু কৃত্রিম বৃষ্টি আকাশ থেকে নামানো পরিকল্পনা নিতে হবে। যা দেশের সকল নাগরিকেরা সুফল ভোগ করবে।
মানুষের মধ্যে লেখাপড়া, জ্ঞান- বিজ্ঞানের, তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে আনতে হবে। অনুমান ভয়ভীতি নয়। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। বিজ্ঞান চেতনায় ফেরাতে হবে। সবর্¯Íরের মানুষের মধ্যে যদি বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটাতে বৈদ্যুতিক মাধ্যমে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠক্রমের বিষয়সূচিতে বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটাতে পারে।
জ্ঞান বিজ্ঞানের তথা বিজ্ঞান চেতনা পারে এ ধরনের কুসংস্কারকে সমাজ থেকে দূরে সড়িয়ে দিতে। সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞান চেতনাকে পৌঁছে দিতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের আত্নবিশ্বাসকে। উপযুক্ত শিক্ষা,জ্ঞান ও সচেতনতাই পারে মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে।
উপসংহার মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে সর্ব শীর্ষে বিজ্ঞান অবস্থান করছে। গ্রামের মানুষেরা এখন ফ্রিজ,ফ্যান, টিভি, রি মুড কন্ট্রোল, মোবাইল ফোন, ইত্যাদি ব্যবহার করে আসছে। জনগণের কল্যাণে যা করা প্রয়োজন সরকার তাই ভবিষ্যতে করবেন। ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামানো অসম্ভব। এগুলো কুসংস্কার। দিনের তাপমাত্রা কমাতে কৃত্রিম ঝড়,বৃষ্টি এখন প্রয়োজন। দেশের সকল ছাত্র-ছাত্রী জ্ঞান বিজ্ঞানে পড়াশুনা করে একদিন বড় বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও যুক্তিবাদী হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি। তখন সমাজ থেকে কুসংস্কার উঠে যাবে।