১৩৭ বাস কেনার প্রক্রিয়ায় কারসাজিতে সাবেক মন্ত্রী-সচিবের সংশ্লিষ্টতা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিশেষায়িত লেন গড়ে তোলার কাজ প্রায় সাত বছর ধরে চলমান। চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে আলোচিত এ প্রকল্প, যা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নামে পরিচিত, শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধের সময়ও শুরু হয়েছে; কিন্তু এই রাস্তায় চলাচলের জন্য ১৩৭টি বাস কেনার প্রক্রিয়া দেড় বছরেও শেষ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ১৩৭টি বাস কেনার জন্য পছন্দের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রক্রিয়ায় কারসাজি ধরা পড়ার পর তাঁদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান বাদ পড়লে পুরো প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়।
জানা গেছে, প্রথম দরপত্রে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে ‘কার্যকর প্রতিযোগিতা’ হচ্ছে না বলে প্রথম দরপত্র বাতিল করা হয়। নতুন করে দরপত্র ডাকা হলে দুই মাসেও কীভাবে বা কতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। গাজীপুরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জান্নাতুল বাকি তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়েছিলেন, তবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অপারগতা জানায়।
প্রথম দরপত্রে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও দ্বিতীয় দরপত্রে অংশ নেয় মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম দরপত্রের সর্বনিম্ন দর ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার (১৮৮ কোটি টাকা), তবে দ্বিতীয় দরপত্রে সর্বনিম্ন দর ৩ কোটি ডলার (৩৬০ কোটি টাকা)। নতুন দরপত্রে খরচও বেড়েছে অনেক বেশি, যা ৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বিআরটি কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, নতুন দরপত্রের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে খরচ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি, বাসের ধরন পরিবর্তনের কারণে এ পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পের বাস্তবায়নে শিথিলতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন, প্রকল্পটি কতটা যৌক্তিক ছিল তা যাচাই করা উচিত এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে স্বার্থ হাসিল করেছেন, তা অনুসন্ধান করতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে শুরু হয়ে প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। তিন দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যায়নি, এবং ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকায়। প্রকল্পের গাফিলতির কারণে ১০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন, এবং বর্তমান তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ।
সূত্র: প্রথম আলো।