Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারার জবানীতে আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের পরকীয়া

ওয়াল্লাহি, আজ আমি যা বলছি, তার একটি শব্দও মিথ্যা নয়। আমি জানি, এই কথাগুলো আপনাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, শুনতে খারাপ লাগবে। কিন্তু যে আগুন আমার ভেতরটাকে গত কয়েক বছর ধরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে, তার সামান্য আঁচ আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই। এই মুখোশ উন্মোচন আমার প্রতিশোধ নয়, বরং আমার মুক্তির আর্তনাদ।

আমাদের বিয়ের ভিত্তি ছিল বিশ্বাস, পরকীয়া নয়
প্রথমেই একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, আদনান সাহেবের সাথে আমার বিয়ে কোনো লুকানো পাপ বা পরকীয়ার ফল ছিল না। আমি তার পুরনো প্রেমিকাও নই। আমাদের বিয়ে হয়েছিল তার প্রথম পক্ষের পূর্ণ সমর্থনে, এমনকি তাদের অনুরোধেই। আমার পরিবারের উপস্থিতিতে, ঢাকার মিরপুরের কাজী অফিসে সম্পূর্ণ ইসলামি শরিয়ত মেনেই আমাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল। সেদিন তিনি আজকের এই তারকা বক্তা ছিলেন না। আমি তার সাধারণ পরিচয়েই তাকে বিশ্বাস করেছিলাম, তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, আজ যখন আমি সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিই, তখন আমাকেই অপরাধী বানিয়ে দেওয়া হয়। তার প্রথম পক্ষ, যারা একদিন আমাকে এই জীবনে এনেছিল, আজ তারাই তার সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ বা ‘ট্রাম্প কার্ড’।

ধার্মিকতার মুখোশের আড়ালে যে অন্য মানুষ
বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমি তার এক অদ্ভুত রূপ দেখতে শুরু করি। যে মানুষটি পর্দার সামনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দৃষ্টি সংযত রাখার সবক দেন, তিনিই আমার পাশে থাকা সত্ত্বেও রাস্তার কোনো নারীকে দেখে অবলীলায় “সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ” বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। এটা তার একদিনের ভুল ছিল না, এটাই ছিল তার চরিত্র। তার এই ‘নারী সংক্রান্ত সমস্যা’র কথা তিনি নিজেও তার ঘনিষ্ঠদের কাছে স্বীকার করেছেন। তার এই সংযমহীন দৃষ্টিই আমাদের সাজানো সংসারকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। আজ আমি, আমার পরিবার, আমার দুটো সন্তান—সবাই ছন্নছাড়া শুধু তার চারিত্রিক স্খলনের কারণে।

এক আসক্তি, অসংখ্য নারী: যন্ত্রণার শুরু
তার জীবনে নারীর আনাগোনা ছিল স্রোতের মতো, একের পর এক। রংপুরের এক মেয়ের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে তার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ছিল। আমার সন্তানের দেখাশোনার অজুহাতে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য আমাকে মানসিকভাবে চাপ দিতেন। মেয়েটির ছবি চেয়ে নিয়ে তার রূপের প্রশংসা করতেন, বিয়ে করতে কেমন পাত্র চায়—এসব জিজ্ঞেস করতেন। তার বিশ্বস্ত সহকারী ইয়ামিনকে দিয়ে আমি যখন সেই মেয়েটিকে সরালাম, তখন তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।

এরপর এলো আরেক অধ্যায়। ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে আসা এক তরুণী। সাহায্যের নামে তার সাথেও শুরু হলো নিয়মিত যোগাযোগ। মেয়েটির উদ্দেশ্য হয়তো সৎ ছিল, কিন্তু আদনান সাহেবের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তিনি মেয়েটিকে নিজের দায়িত্বে ঢাকায় আনলেন, সমস্ত খরচ বহন করলেন, কিন্তু আমাকে তার ধারেকাছেও ঘেঁষতে দিলেন না। আমি বলেছিলাম, সাহায্য যদি করতেই হয়, তাহলে একজন নারী হিসেবে আমি নাহয় মেয়েটির সাথে কথা বলি। কিন্তু না, তার উদ্দেশ্য ছিল অন্য—মেয়েটিকে কোনোভাবে নিজের আয়ত্তে আনা।

বিশ্বাসঘাতকতার চরম সীমা: আমার ঘরের সেই মেয়েটি
বাইরের শত ঘটনাতেও আমি এতটা ভাঙিনি, যতটা ভেঙেছি আমার নিজের ঘরে ঘটে যাওয়া ঘটনায়। আমাদের মাদ্রাসায় পড়াতো এবং বাসায় কাজ করতো, এমন একটি মেয়ের ওপর তার নজর পড়ে। তিনি মেয়েটিকে টাকা দিতেন, নিজের নম্বর দিয়ে বলতেন যেকোনো প্রয়োজনে তাকে জানাতে। এরপর থেকেই শুরু হলো গোপন আলাপন। মেয়েটি বাসায় কাজে এলে তার মধ্যে আমি এক ধরনের অস্থিরতা দেখতাম। একদিন আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “এমন কিছু করবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।”

আমার সন্দেহ সত্যি হলো কিছুদিন পরই। আমি তার ফোনে দেখি সেই কাজের মেয়ের সাথে ১৮ মিনিটের কললিস্ট। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে আমার পৃথিবীটা দুলে উঠলো। মেয়েটির অভিমানী মেসেজ, “আমি আপনার উপর রাগ আছি।” আর তার উত্তরে আদনান সাহেবের পাঠানো বার্তা—”আমার মোহাব্বত, আমার পুরো কলিজাটা, আমার মানুষটা… আপনি কোথায় দুইদিন ধরে দেখিনা।”

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। যে মানুষটিকে আমি এত ভালোবাসি, যার সাথে কথা বলতে আমারও কখনো কখনো সংকোচ হয়, সে কি না আমারই বাসার কাজের মেয়ের সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ! আমি যখন সব প্রমাণ ধরে ফেললাম, তিনি আমার সামনেই মেয়েটিকে ফোন দিয়ে ধমক দিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের নাটক করলেন। সেদিন আমি রাগে, অপমানে, যন্ত্রণায় মেয়েটিকে দুটো চড় মেরেছিলাম, বাসা থেকে, মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তখনই আমার মনে হয়েছিল সেই তিক্ত প্রশ্নটা— “কিন্তু সমস্যা যখন ঘরে, তখন আর কতজনকে বিদায় করা যায়!”

আলেমা থেকে এয়ার হোস্টেসের প্রেম
এই ঘটনার পরও তিনি শোধরাননি। এরপর তার চোখ পড়লো সিরাত প্রতিযোগিতার বিজয়ী একজন ডিভোর্সি ও আলেমা মেয়ের ওপর। তাকে নিজের অনলাইন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকা বানালেন, বিয়ের জন্য কথাবার্তা চালালেন, এমনকি মেয়েটিকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে আসবেন বলে আমার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই রংপুরে চলে গেলেন। আমি সেদিনও নীরবে সব মেনে নিয়েছিলাম।

কিন্তু রংপুরে ১০ দিন থাকার পর ফিরে এসে তিনি আমাকে ভালোবাসার কথা শোনালেন, বললেন আমাকে ছাড়া তার চলবে না, ওই মেয়েটিকে তার পছন্দ হয়নি। আমি বোকার মতো আবারও তাকে বিশ্বাস করলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, সেই আলেমা মেয়েটিকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন আমার জন্য নয়, বরং তার ১৫ বছরের পুরনো কলেজ জীবনের প্রেমিকার জন্য, যিনি এখন একজন এয়ার হোস্টেস।

এরপর যা ঘটেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার বিছানায় শুয়ে, আমার পাশে বসে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সেই প্রেমিকাকে সময় দিতেন। আমাকে তাদের প্রেমের গভীরতার গল্প শোনাতেন। আমাকে বলতেন, সেই মেয়ের শরীরের কোথায় তিল আছে, তা-ও তিনি জানেন। আমি তার স্ত্রী, নাকি তার মা-বোন? যে মানুষটা আমার পুরো পৃথিবী ছিল, সে আমাকেই তার পরকীয়ার সাক্ষী বানিয়েছিল, এর চেয়ে বড় মানসিক নির্যাতন আর কী হতে পারে?

কেন আজ সব বলছি: সবর নাকি সমাধানের চেষ্টা?
আমি জানি, অনেকেই আমাকে বলবেন সবর করতে। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি গত দুই বছর ধরে সমাধানের সবরকম চেষ্টা করেছি। তিনি কোনো আলোচনায় বসেননি, বড়দের কথাও শোনেননি। যখন কোনো পথ খোলা ছিল না, তখনই আমি এই প্ল্যাটফর্মে এসেছি। কারণ তিনি ‘অনলাইনের মানুষ’, তাকে অনলাইনেই পাওয়া যায়।

আমি আজ কোনো প্রতিশোধ চাই না। আমি শুধু এই ধারাবাহিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। যে পুরুষের চোখে নতুন নারীর নেশা, তার কাছে স্ত্রীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসাও যন্ত্রণার মতো। আমি আর তার জীবনের সেই যন্ত্রণা হয়ে থাকতে চাই না। আমি আমার পরকালকে বাঁচাতে চাই। সমস্যা জিইয়ে রাখার নাম সবর নয়, বরং সমাধানের জন্য রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত ইমানের দাবি।

জবানিতে: সাবিকুন নাহার সারা (আবু ত্বহা আদনানের স্ত্রী)।

Leave A Reply

Your email address will not be published.