Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

স্ত্রীর বিস্ফোরক পোস্ট, নাটকীয় ডিগবাজি এবং রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে আলোচিত বক্তা ত্বহা

ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনানের ব্যক্তিগত জীবন যেন এক রুদ্ধশ্বাস নাটকের মঞ্চ, যেখানে একের পর এক দৃশ্যপটে তৈরি হচ্ছে নতুন রহস্য। সম্প্রতি তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারাহর এক ফেসবুক পোস্ট এবং তার নাটকীয় পরিণতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। পরকীয়া, ‘অন্ধকার জগৎ’, অভিযোগ, অস্বীকার এবং রহস্যময় ফোন চুরির ঘটনায় আদনানের ব্যক্তিগত জীবন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

নাটকের যবনিকা ওঠে সাবিকুন্নাহার সারাহর একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, যেখানে তিনি তার স্বামী আবু ত্বহা আদনানের জীবনের এক ‘অন্ধকার জগতের’ দিকে সরাসরি আঙুল তোলেন। তার অভিযোগের তীর ছিল আদনানের কলেজ জীবনের পুরনো বান্ধবী ও বর্তমানে বিমানবালা হিসেবে কর্মরত জারিন জেবিনের দিকে। সারাহর দাবি, আদনান তার পুরনো প্রেমিকার সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। তাদের মধ্যে নিয়মিত চ্যাট, ফোনালাপ এমনকি লং ড্রাইভের মতো ঘনিষ্ঠতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

শুধু তাই নয়, আদনানের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ আনেন সারাহ। তিনি বলেন, বিভিন্ন কোর্সের আড়ালে সেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া হয়, যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে এবং একারণে তিনি তার অনলাইন ক্লাস পর্যন্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই শুরু হয় তীব্র আলোচনা। কিন্তু ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা পোস্টটি হঠাৎই উধাও হয়ে যায় সারাহর প্রোফাইল থেকে।

পোস্ট ডিলিট হওয়ার পর রহস্য যখন ঘনীভূত হচ্ছিল, ঠিক তখনই মঞ্চে পুনরায় প্রবেশ করেন সাবিকুন্নাহার সারাহ, তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। পরবর্তী এক পোস্টে তিনি স্বীকার করেন যে, আগের পোস্টটি তিনিই দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তার কথায় ছিল অনুশোচনার সুর। তিনি লেখেন, “হিংসুক, বিরোধীরা তাদের পরিকল্পিত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ইনটেনশনালি আমাকে কিছু ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল; যার সত্যতা যাচাইয়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।”

তিনি তার স্বামী আবু ত্বহা আদনান, যাকে তিনি ‘কাজ, চিন্তা ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে পবিত্র’ বলে আখ্যায়িত করেন, তার কাছে এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

তবে, সারাহর এই ‘ভুল তথ্যে’র দাবিকে অনেকেই মেলাতে পারছেন না তার প্রথম পোস্টের ভেতরের কথার সাথে। কেননা, তার মুছে ফেলা সেই পোস্টে ছিল ঘটনার চাঞ্চল্যকর এবং ব্যক্তিগত বিবরণ, যা কোনোভাবেই অন্যের দেওয়া তথ্য বলে মনে হয় না। তিনি লিখেছিলেন:
“……… যাইহোক আমার বিছানায় বসে প্রেম করেন এ এয়ার হোস্টেস নারীর সাথে তিনি মা শা আল্লাহ। সেন্টারে কাজ আছে বলে রাত ৩টায় বাসায় আসেন এসে আবার জানান তিনি তার প্রেমিকার সাথে কথা বলেন। তিনি যা-ই করেন তা আবার গোপনের ধার ধারেন না, কারণ তিনিই সবচেয়ে বড়। ……. ”

এমন বক্তব্যকে ‘ভুল তথ্য’ হিসেবে মেনে নিতে নারাজ নেটিজেনদের বড় একটি অংশ। তাদের মতে, এই বর্ণনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের দেওয়া তথ্যের চেয়ে একজন প্রত্যক্ষদর্শী স্ত্রীর যন্ত্রণার ছাপই স্পষ্ট, যা তার দ্বিতীয় পোস্টের বক্তব্যকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।

ঠিক এই ডামাডোলের মধ্যেই মঞ্চে প্রবেশ করেন আবু ত্বহা আদনান নিজে, তবে ভিন্ন এক গল্প নিয়ে। তিনি ফেসবুকে জানান, শুক্রবার সকালে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বাড়ি থেকে চুরি হয়ে গেছে। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন, তার ব্যক্তিগত নম্বর বা পরিচালিত পেজ থেকে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তাতে যেন কেউ কান না দেন।

আদনানের এই ফোন চুরির ঘোষণা নাটকের মোড় যেন আরও ঘুরিয়ে দেয়। সাধারণ পাঠক যখন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে শুরু করেন, তখন একটি প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দেয়—এই দুটি ঘটনা কি বিচ্ছিন্ন, নাকি একই সূত্রে গাঁথা?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দর্শকরা এই নাটকীয়তার পেছনে নিজেদের মতো করে চিত্রনাট্য সাজিয়ে নিচ্ছেন। অনেকের ধারণা, আদনানের ফোনটি তার স্ত্রী সারাহর হাতে আসে। এরপর সেই ফোন থেকেই হয়তো তিনি স্বামী ও তার প্রেমিকা জেরিন জাবিনের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতার প্রমাণ পান এবং ক্ষোভে-দুঃখে ফেসবুকে সেই বিস্ফোরক পোস্টটি করেন। পরবর্তীতে আদনান ও তার অনুসারীদের চাপে সারাহ পোস্ট ডিলিট করতে এবং ক্ষমা চেয়ে নতুন পোস্ট দিতে বাধ্য হয়েছেন—এমন গুঞ্জনও উঠেছে জোরেশোরে।

এই মুহূর্তে নাটকের শেষ দৃশ্যপটে ঝুলে আছে একাধিক অমীমাংসিত প্রশ্ন। সাবিকুন্নাহার সারাহর অভিযোগগুলো কি সত্যিই ভুলের ফসল, নাকি চাপের মুখে লুকানো এক তিক্ত সত্য? আদনানের ফোন চুরির ঘটনা কি নিছকই কাকতালীয়, নাকি স্ত্রীর অভিযোগ ঢাকার কোনো কৌশল? আর কে এই রহস্যময়ী জেরিন জাবিন?

বারবার চেষ্টা করেও আবু ত্বহা আদনানের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারাহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে, আদনানকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই পারিবারিক নাটকের ক্লাইম্যাক্স কী হবে, তা জানতে দর্শকদের হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত, ভক্ত ও সমালোচকদের মধ্যে চলছে তুমুল বিতর্ক এবং চলছে রহস্যের জট খোলার নিরন্তর চেষ্টা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.