Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

স্ত্রীর বর্ণনায় ‘বক্তা’ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের নারী কেলেঙ্কারি

যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি তরুণদের দৃষ্টি সংযত রাখা আর তাকওয়ার পাঠ দেন, সেই মঞ্চের পেছনের মানুষটিই নাকি এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা -এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছে তারই দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারার বর্ণনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একের পর এক বিস্ফোরক পোস্টে উঠে এসেছে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের এক অন্ধকার অধ্যায়ের উপাখ্যান, যা তার ‘ধার্মিক’ পরিচয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। স্ত্রীর জবানিতে, এটি কেবল একটি বা দুটি ভুলের গল্প নয়, বরং ধারাবাহিক নারী কেলেঙ্কারির এক দীর্ঘ উপাখ্যান।

পরকীয়া নয়, প্রতিশ্রুতির বিয়ে
সাবিকুন নাহার তার গল্পের শুরুতেই স্পষ্ট করেছেন, আদনানের সঙ্গে তার সম্পর্ক কোনো অবৈধ পরকীয়ার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। বরং আদনানের প্রথম পক্ষের অনুরোধ ও সম্মতিক্রমেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন আদনান আজকের মতো সেলেব্রিটি বক্তা ছিলেন না। সারার ভাষ্যমতে, অসংখ্য প্রতিশ্রুতি আর সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েই আদনান তাকে জীবনে এনেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিই আজ নড়বড়ে হয়ে গেছে বিশ্বাসঘাতকতার আঘাতে।

ধার্মিকতার আড়ালে চরিত্রগত দুর্বলতা
সারা তার স্বামীর চারিত্রিক দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আদনানের মধ্যে বরাবরই ‘নারী সংক্রান্ত সমস্যা’ ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, “রাস্তায় মেয়ে দেখলে আমি পাশে থাকা সত্ত্বেও সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ বলা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা তার এ ক্যারেক্টার এর কথা কে না জানে।” তার মতে, এই দৃষ্টি সংযত না করার অভ্যাসই তার ধ্বংসের মূল কারণ, যা তাদের সাজানো সংসারকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।

কেলেঙ্কারির ধারাবাহিক উপাখ্যান
সাবিকুন নাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, আদনানের জীবনে নারীর আনাগোনা ছিল নিয়মিত এবং বহুবিচিত্র। তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করেন, যা তার অভিযোগকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে:

১. রংপুরের তরুণী: প্রায় দুই বছর আগে, রংপুরের এক তরুণীর সাথে হোয়াটসঅ্যাপে দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ রাখতেন আদনান। সারার সন্তানের দেখাশোনার অজুহাতে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য তিনি স্ত্রীকে প্রচণ্ড চাপ দেন। মেয়েটির ছবি চেয়ে নিয়ে তার রূপের প্রশংসা করা থেকে শুরু করে বিয়ের বিষয়ে তার মতামত জানা পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি।

২. ক্যান্সার রোগীর মেয়ে: সাহায্যের আড়ালে সম্পর্ক গড়ার আরেকটি উদাহরণ দেন সারা। এক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর তরুণী মেয়ের সাহায্যের জন্য টাকা তোলার সুবাদে তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করেন আদনান। সারার দাবি, আদনানের উদ্দেশ্য ছিল অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অবিবাহিত ও অল্প বয়সী মেয়েটিকে নিজের আয়ত্তে আনা।

৩. ঘরের শত্রু—বাসার কাজের মেয়ে: তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনাটি ঘটে তাদের নিজেদের ঘরেই। তাদের বাসায় কাজ করা এক তরুণীর প্রতি আদনান আসক্ত হয়ে পড়েন। তাকে গোপনে টাকা দেওয়া, ব্যক্তিগত নম্বর দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। একদিন সারার সাথে ঝগড়ার পর আদনান তাকে হুমকি দেন, “এমন কিছু করবো যা কল্পনাও করতে পারবা না।” এর পরপরই সারা তার ফোনে সেই কাজের মেয়ের সাথে ১৮ মিনিটের কললিস্ট এবং “আমার মোহাব্বত, আমার পুরো কলিজাটা, আমার মানুষটা” লেখা ভালোবাসার বার্তা আবিষ্কার করেন। এই ঘটনায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সারা সেই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন, কিন্তু তার মনে জন্ম নেয় এক তিক্ত উপলব্ধি: “সমস্যা যখন ঘরে, তখন আর কতজনকে বিদায় করা যায়!”

৪. আলেমা থেকে এয়ার হোস্টেস: তার কেলেঙ্কারির তালিকা এখানেই শেষ নয়। সিরাত প্রতিযোগিতার বিজয়ী একজন ডিভোর্সি ও আলেমা তরুণীকে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেন এবং বিয়ের জন্য কথাবার্তা এগিয়ে নেন। কিন্তু এর মাঝেই তার জীবনে ফিরে আসেন ১৫ বছরের পুরনো কলেজ জীবনের প্রেমিকা, যিনি বর্তমানে একজন এয়ার হোস্টেস। পুরোনো প্রেমের আকর্ষণে তিনি সেই আলেমা মেয়েটিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অবলীলায় ভঙ্গ করেন।

সারার জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক নির্যাতন ছিল এই শেষ ঘটনাটি। তার অভিযোগ, আদনান তার সামনে বসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এয়ার হোস্টেস প্রেমিকার সাথে কথা বলতেন। এমনকি সেই প্রেমিকার শরীরের কোথায় তিল আছে, এমন ব্যক্তিগত বর্ণনাও তাকে শুনতে বাধ্য করতেন, যা একজন স্ত্রীর জন্য ছিল চরম অবমাননাকর।

কেন এই বিস্ফোরণ?
সাবিকুন নাহার জানান, তিনি গত দুই বছর ধরে ঘরোয়াভাবে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আদনান কোনো আলোচনায় বসতে রাজি হননি। যখন সব পথ বন্ধ হয়ে যায়, এবং ভক্তদের অন্ধ সমর্থন তার স্বামীকে আরও বেপরোয়া করে তোলে, তখন তিনি জনসমক্ষে মুখ খুলতে বাধ্য হন। তার মতে, “সমস্যা জিইয়ে রাখার নাম তো সবর নয়।” তিনি কোনো প্রতিশোধ নয়, বরং এই বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে মুক্তি চেয়েছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.