অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোনো ধরনের সরকারকে সমর্থন করবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা বলেছে, সেনাসমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার -এ ধরনের কোনো সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।
সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগপর্যন্ত ছাত্র-জনতাকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থানের আহ্বান জানায় তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দল, মত ও ধর্মনির্বিশেষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি, নাশকতা বা বিভাজনের চেষ্টা হলে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে তা রুখে দিতে হবে। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হবে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হলো। এই অভ্যুত্থানকে আমরা আন্দোলনের শহীদ, হতাহত ও মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে উৎসর্গ করছি। আমাদের এক দফা দাবিটি ছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। আমরা মনে করি, কেবল ব্যক্তিকে সরালেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়, সেই কাঠামোরও বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের করতে হবে। সেই জায়গা থেকে শেখ হাসিনার পতন আমাদের আন্দোলনের প্রথম ধাপ, যেটি আমরা অর্জন করেছি। এখন দ্বিতীয় ধাপের দিকে আমাদের যেতে হবে।’
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করবেন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই সরকার হবে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত। সেই জাতীয় সরকারে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের অংশ থাকবে। নাগরিক সমাজসহ পেশাজীবী ও নানা ধরনের পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং সেই সরকারে কারা কারা থাকবে, সেই নামগুলো ঘোষণা করব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কাজটি করার জন্য আমরা শিগগিরই একটা লিয়াজোঁ কমিটি করব যে আমাদের পক্ষ থেকে কারা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।’
নাহিদ বলেন, ‘অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোনো ধরনের সরকারকে আমরা সমর্থন করব না। সেটা হতে পারে সেনাসমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার হতে পারে—এ ধরনের কোনো সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার প্রতি আমাদের আহ্বান, তাঁরা যেন আমাদের চূড়ান্ত (জাতীয়) সরকারের রূপরেখা ঘোষণার আগপর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে আন্দোলনের সুযোগে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো নানা ধরনের অঘটন ও নাশকতা-সহিংসতা করে আন্দোলনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারে।’
ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এই দেশ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদের; কেউ যাতে কোনো ধরনের লুটপাট, সাম্প্রদায়িক হামলা ও কোনো ধরনের উসকানিতে কান না পাতে। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হবে। আমরা কোনো প্রাণনাশ, সহিংসতা চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান করব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবার জীবন ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য মাঠে থাকবে। ফ্যাসিবাদী শাসন ও খুনি সরকারের বিপরীতে আমরা প্রতিবাদী জনতা। দল-মত-ধর্মনির্বিশেষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এখানে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি, নাশকতা বা বিভাজনের চেষ্টা হলে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে তা রুখে দিতে হবে।’
আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের আন্দোলনের সমন্বয়ক, আন্দোলনকারী ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে। তাঁরাসহ আমরা সব রাজবন্দীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছি। আমরা বলেছিলাম, শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র সমাধান হবে না। এই যে একটি গণহত্যা এবং এর আগেও পিলখানা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণহত্যা, গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার হরণের মতো যেসব ঘটনায় তাঁরা জড়িত, এর অবশ্যই বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেই হবে না, আমরা তাঁকে বিচারের আওতায় আনব। ফ্যাসিবাদে যাঁরা সরাসরি সহায়তা করেছে এবং তাদের সমর্থক, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ন্যায়বিচারই আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠা করব।’