ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিবন্ধনহীন অবৈধ ক্লিনিকে ফের সিজারিয়ান অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্লিনিকগুলো সরকারী কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। অন্যদিকে হাসপাতালের ডাক্তাররা হাসপাতালের সেবা ছেড়ে অবৈধ বানিজ্যিক ক্লিনিকগুলিতে ব্যবসায় মত্ত রয়েছে। তাদের হাতেই মরছে একের পর এক প্রসূতি ও নবজাতক।
সিজারিয়ান অপারেশনের পর শনিবার রাতে রিয়া খাতুন (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত রিয়া খালফলিয়া গ্রামের কৃষক রাশেদের স্ত্রী। শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত শৈলকুপা প্রাইভেট শিশু হাসপাতাল ও সেতু ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনরা জানিয়েছেন, রাশেদের স্ত্রী রিয়ার সিজার অপারেশনের জন্য শৈলকুপা প্রাইভেট শিশু হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সিজার করানো হয়। এর পরপরই তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মৃত্যুর কথা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাত ১টার দিকে তড়িঘড়ি করে ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়া হয়, তবে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তৃতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য প্রসূতি রিয়া কে আনা হয়েছিল শৈলকুপার এই প্রাইভেট শিশু হাসপাতালে।
নিবন্ধনহীন শৈলকুপা প্রাইভেট শিশু হাসপাতাল ও সেতু ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সাম্প্রতি সিলগালা করেন সিভিল সার্জন। এর পরেও কিভাবে এমন সব ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনসহ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসূতির মৃত্যুর পরপরই ফের এই ক্লিনিকটির ওটি সিলগালা করেছে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গঠিত হচ্ছে তদন্ত কমিটিও। তবে এসব তদন্ত নামমাত্র করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিয়ে সব দফা-রফা করা হয় বলেই ঘটনার কিছুদিন পরেই আবার এসব ক্লিনিক সেবার নামে বানিজ্য করতে গিয়ে রোগী হত্যার মহোৎসবে মেতে ওঠে।
শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সোহেলী ইসলাম সরকারী বিধির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক নানা অবৈধ নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে সিজরিয়ান অপারেশন চালিয়ে আসছেন। তার হাতে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
গাইনি বিভাগের চিকিৎসক বা গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও একের পর এক সিজার অপারেশন চালিয়ে আসছেন সার্জারি বিভাগের ডাক্তার সোহেলী ইসলাম। সর্বশেষ শৈলকুপা প্রাইভেট শিশু হাসপাতাল ও সেতু ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্রসূতি রিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন করেন হাসপাতালের বিতর্কিত ডাক্তার সোহেলী ইসলাম। অপারেশনের পরে মৃত্যু ঘটে প্রসূতি রিয়ার।
এর আগে ডাক্তার সোহেলীর হাতে মারা যান আরেক প্রসূতি সুখজান। হাসপাতাল গেইটের সামনে শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল নামের এক নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে তিনি সিজারিয়ান অপারেশন করেন প্রসূতি সুখজানের। সে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কিছু দিনের ভেতরে আবারো প্রসূতির মৃত্যু ঘটল। এ ব্যাপারে ডাক্তার সোহেলী ইসলামের মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে ফোনটি বন্ধ করে রেখেছেন। আবার ফোন খোলা হলেও সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেননি।
ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রাইভেট শিশু হাসপাতাল ও সেতু ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক শ ম রানাউজ্জামান বাদশা জানান, প্রসূতি রিয়া সুস্থ ছিলেন তবে অপারেশনের পর থেকে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে থাকে এবং হার্ট এ্যাটাক করে। রোগী ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়ার পর মারা যায়। ক্লিনিকের নিবন্ধন প্রসঙ্গে জানান, শৈলকুপায় ক্লিনিকগুলোর নিবন্ধন নবায়ন হয়নি তবে কর্তৃপক্ষ ইনেসফেকশন করেছে বলে জানান।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসানুল হক রুমি জানান, শৈলকুপা প্রাইভেট শিশু হাসপাতাল ও সেতু ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্রসূতি রিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিকের ওটি সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জনের সাথে কথা হয়েছে ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান।