লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সূতারগোপ্তা ও এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের এখন হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এলাকার ফসলি জমিগুলো বুক সমান পানিতে ডুবে আছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, গত বছরও একই কারণে তারা ফসল ফলাতে পারেননি। বারবার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে তারা দিশেহারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে যে খালটি রয়েছে, তার বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। খালের ওপর অবৈধভাবে দোকানপাট ও বাড়িঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এসব রাস্তার নিচে থাকা কালভার্টগুলোর পানি নিষ্কাশনের পাইপ অত্যন্ত সরু। এছাড়া, সূতারগোপ্তা বাজারের বেশিরভাগ দোকান খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। কচুরিপানা ও আবর্জনায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই জলাবদ্ধতা।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সূতারগোপ্তা বাজারের প্রায় ২৫ ফুট চওড়া খালের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে জরাজীর্ণ দোকানঘর তুলে দখল করা হয়েছে।
এলাকার গণকবরের সামনের রাস্তাসহ বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে আছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় স্থানীয় “ফাইভ স্টার কিন্ডারগার্টেন” এর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা পার্শ্ববর্তী দুটি ঘরে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক নাজমুল হক বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণে গত বছর তিনবার বীজতলা তৈরি করেও আবাদ করতে পারিনি। এবারও জমিতে বুক সমান পানি। খাল দখলমুক্ত না হলে এবারও হয়তো আবাদ করা সম্ভব হবে না।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহির আহমেদ জানান, এই জলাবদ্ধতায় প্রায় ৩৭৫ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১,১০০ হেক্টর আউশ ধান এবং ৯৫ হেক্টর জমির শাক-সবজি পানিতে ডুবে গেছে, যার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা সূতারগোপ্তা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, “এটি মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি নয়। খাল দখল, অপরিকল্পিত কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণের কারণেই পানি সরতে পারছে না। আমরা দ্রুত এলাকাটি পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নেব।”