গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগাছায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় তাণ্ডব ঘটে। ৬টি বসতবাড়ি ভাংচুর লুটতরাজ চালিয়ে আগুনে ভস্মীভূত করা দেওয়া হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। ঘটনায় আহত হয় ১৫-২০ জন। এঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। বর্তমানে ঐ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক কাটেনি এখনো।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্নমুখী সংবাদ প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এসেছে হেযবুত তওহীদের সাথে জামাতের সংঘর্ষ। কেউ কেউ বলছে, হেযবুত তওহীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ। কেউ বলছে, হেযবুত তওহীদের উপর হামলা করেছে এলাকাবাসী। কেউ বলছে, হেযবুত তওহীদের উপর তওহীদী জনতার হামলা। স্থানীয় নোয়াখাইল্লা পাড়ার লোকজন দূর দূরান্ত থেকে লোকজন এনে জড়ো করে হেযবুত তওহীদের উপর হামলা করেছে এমন সংবাদও শোনা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা ও কিছু মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা নিয়েও।
বাস্তবে কি ঘটেছিল সেদিন? এই ধ্বংসযজ্ঞের আড়ালে কারা ছিল? এই সংঘর্ষের মাস্টারমাইন্ড কারা? কি তাদের উদ্দেশ্য? কাদের ইন্ধনে ও কারসাজিতে এই ধ্বংসলীলা সংঘটিত হল? কারা সামনের সারিতে থেকে এর নেতৃত্ব দিয়েছে। কারা এই ঘটনার সুবিধাভোগী? ঘটনার নেপথ্য কারণ জানতে সরেজমিনে যায় দেশেরপত্র।
সরেজমিনে জানা যায়, রংপুরের পীরগাছার ২নং পারুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছিদামহাট এলাকায় হেযবুত তওহীদের কিছু পরিবার বাস করে। ২০ বছর যাবৎ তারা হেযবুত তওহীদের সাথে সম্পৃক্ত। নিজ এলাকাসহ রংপুর জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন সময় তাদের সাংগঠনিক কাজ করে থাকেন তারা।
সম্প্রতি হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন আব্দুল কুদ্দুস শামীম। তার বাড়ি পীরগাছার ২নং পারুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছিদাম বাজার সংলগ্ন স্থানে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে ঘিরে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ নেয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি ২৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িতেই আয়োজনের স্থান নির্ধারিত হয়।
অনুষ্ঠানের বিষয়ে অবগত করতে ২১ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব স্থানীয় মেম্বারসহ এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের নিজ বাড়িতে মতবিনিময় করেন আব্দুল কুদ্দুস শামীম। এদিন প্রীতিভোজের আয়োজনও করা হয়। তারা সকলে অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে জানান এবং বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে স্বাগত জানানো হয়। এসময় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক এবং ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি এনামুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা দাওয়াত কবুল করলে অনুষ্ঠান সম্পর্কে রংপুরের এসপি এবং পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়। ওসিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দাওয়াতও করেন আব্দুল কুদ্দুস শামীম।
পরদিন যথারীতি অনুষ্ঠানস্থল সাজানোর কাজ চলছিল। চুলা বসিয়ে রান্না বান্নার আয়োজন হচ্ছিল। হঠাৎ ডেকরেটরের লোকজন তাদের চলমান কাজ বন্ধ করে দেয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে ডেকরেটর ব্যবসায়ী আরিফ জানায়, এই বাড়িতে হামলা হবে বলে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা নূর আলম। হামলা হলে আমাদের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমাকে এখান থেকে সব গুটিয়ে চলে যেতে বলেছে। হুমকির মুখে ডেকরেটরের লোকজন সব গুছিয়ে নিয়ে চলে যায়।
এরপর আব্দুল কুদ্দুস শামীম জেলা ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। আব্দুল কুদ্দুস বিষয়টি তাদেরকে দেখতে বলেন।
এরপর তারা প্রশাসনকেও অবগত করে বিষয়টি। হামলার আশঙ্কার কথা তাদেরকে সবিস্তারে জানায়। কিন্তু প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না, উড়ো কথা ভেবে গায়ে লাগায় না। তথাপিও হামলার আশঙ্কায় অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

লোক জড়ো করতে যেসব অপপ্রচার চালান হয়েছে:
তা সত্ত্বেও পরদিন সকালে তওহীদি জনতার ব্যানারে ছিদামহাট বাজারে সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে স্থানীয় “নোয়াখাইল্লা পাড়া”র লোকজন ও দূরবর্তী গ্রামের কিছু উশৃঙ্খল লোকজন অংশ নেয়। তাদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় ধর্মীয় লেবাসধারী উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠীকে। ‘হেযবুত তওহীদের লোকজন মহানবীকে কটূক্তি করেছে’, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত হেযবুত তওহীদ আজকে বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে গোপন বৈঠক করছে” ইত্যাদি বলে জনতাকে বিক্ষুব্ধ করে তোলা হয়। এরপর উত্তেজিত ৫০০-৬০০ জনতাকে সাথে নিয়ে সকাল ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতির বাড়িতে দিকে ধাবিত হয়। বাড়িতে গেলে আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারের লোকজনের সাথে তাদের বচসা হয়।
এসময় মিছিল নিয়ে আসা লোকজনের কিছু লোক ফিরে গিয়ে আশপাশের গ্রাম থকে লোকজন ডেকে আনে। লোক সমাগমর জন্য তারা মাইক অ্যানাউন্স করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মসজিদের মাইক দখল করে ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। মাইকে বলা হয় “হিন্দুরা মুসলমানদের উপর হামলা করেছে” “মুসলমানদের বাঁচাতে এগিয়ে আসুন”। কোনো মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় “আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে যুবলীগ আশ্রয় নিয়েছে”। মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট এবং আওয়ামী বিরোধী সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে স্পর্ষকারত এসব কথা ব্যবহার করে তারা। এতে তারা সফলও হয়। নিমিষেই কয়েক গ্রাম থেকে আরো কয়েকশত লোক জড়ো হয়ে যায়। তারা হেযবুত তওহীদের সভাপতির বাড়ির দিকে পঙ্গপালের মতো ছুটে যায়।
শুরু হয় মুহুর্মূহু হামলা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে দেয়া হয় আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি। হামলা করে প্রথমে তারা ঘরগুলোর টিনগুলোকে দা, কুড়াল, কিরিচ, তলোয়ার দিয়ে কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারের লোকজনসহ তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা হেযবুত তওহীদের সদস্যরাও হামলাকারীদের তোপের মুখে পড়ে। এসময় রক্তাক্ত আহত হয় অন্তত ২০ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় ওয়ার্ডেও ইউপি সদস্য মেস্বার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি মিথ্যা কথা বলব না ভাই, যা সত্য তাই বলব। গোপন মিটিং ছিল না।’ -বলেন ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।
মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি এনামুল হক বলেন, না, এমন কিছু আমি কখনো শুনি নাই। অনুষ্ঠানে তারা ইসলামের কথাই বলেছে। সেখানেও এমন কিছু তিনি শোনেননি বলে জানান তিনি।
সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের নিরব ভূমিকা:
এদিকে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে হামলার কথা থানায় অবগত করা হলে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী হামলাকারীদের নিবৃত করতে ব্যর্থ হয়। একটা পর্যায়ে তারা অসহায়ের মতো কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সামনেই একে একে ছয়টি বাড়ি ভাংচুর করা হয়।


কাউকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়া হয়। কারো মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। কারো মুখ রক্তাক্ত করে দেয়া হয়। কারো হাতের আঙ্গুল আলাদা করে দেয়া হয়। এমনকি বৃদ্ধ, পিতার বয়সী মানুষদেরকেও ছাড় দেয়া হয় না। উন্মত্ত হামলাকারীরা আহতদের নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। সেনা সদস্যদের সামনেই অপমান অপদস্থ করা হয় আহত হয়ে অসাড় পড়ে থাকা হেযবুত তওহীদ সদস্যদের।
অবস্থার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে স্থানীয় গ্রামবাসী হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়ির পেছন থেকে সরে পড়তে সাহায্য করে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় অবশেষে তারা সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারে।
এরপর হামলাকারীরা প্রশাসনের সামনেই বাড়িঘর লুটপাট শুরু করে। লুটতরাজ শেষ হলে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এসময় হেযবুত তওহীদের সদস্য নয় এমন এক গ্রামবাসীর বাড়িতেও তাণ্ডব চালান হয়।
একে একে সমস্ত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর কুদ্দুসের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্থানীয় নেতা কর্মীরা প্রশাসনের অনুরোধে সেখান থেকে সরে যায় পরে তাদের অন্তত ২৩টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বাঁশি বাজানোরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কারা ছিল ঘটনার নেতৃত্বে:
গণমাধ্যমে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে এসে হামলায় অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি সাক্ষাৎকারে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে তারা সেখানে গিয়েছেন। এসময় পাশ থেকে আরেকজনকে ‘জামায়াতের কথা না বলে আমজনতার কথা বলতে’ শিখিয়ে দিতে দেখা যায়।
হামলাকারী গোষ্ঠী মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে হামলা করতে উস্কে দিতে গুজব ছড়ায় এবং নিজেদের আসল পরিচয় আড়াল করতে তওহীদি জনতা, আম জনতা ইত্যাদি ব্যানার ব্যবহার করে।
হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানান, মসজিদের দুইজন মোয়াজ্জেম এবং জামায়াতে ইসলামীর লোকজন একজনের নাম আহম্মদ এবং একজনের নাম মোহাম্মদ তাদেরকে সঙ্গে করে এনেছে।

জানা যায়, ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মো. নূর আলম, সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, জামাতের যুব শাখার নেতা আব্দুর রহিম, যুব শাখার ওয়ার্ড সভাপতি আসাদুল ইসলাম, জামায়াত কর্মী মোক্তার হোসেন, শিবির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, জুয়েল রানা, বেলাল হোসেন, নাসিমুল হকসহ আরও অনেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হামলার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়- হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়ি থেকে লুট করা মালামালকে গণিমতের মাল হিসেবে প্রচার করেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মী সমর্থকরা।
হেযবুত তওহীদের সদস্যরা যে গ্রামে বাস করতেন, সেই ছিদামহাটের লোকেরা হামলা তো করেইনি বরং তারা হেযবুত তওহীদ সদস্যদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। প্রশাসন ও স্থানীয়রা মিলে তাদের ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়। মূলত পাশের গ্রাম নাগদাহ, উত্তর দেউতি থেকে গুজব রটিয়ে উশৃঙ্খল লোকজন নিয়ে আসা হয় হামলার জন্য।
পরবর্তীতে দূর থেকে এসে হামলায় অংশ নেওয়া মানুষগুলো হেযবুত তওহীদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুঃখ প্রকাশ করে। অনেকে বলছে, তারা আসলে বুঝতে পারে নাই। মাইকিং করে বলা হয়েছে হিন্দুরা মুসলমানদের উপর হামলা করেছে। এই শুনে তারা জামায়াত নেতাদের কথায় হামলায় অংশ নেয়। কিন্তু পরে শুনেছি আপনারাও মুসলমান।
উশৃঙ্খল নোয়াখাইল্লা পাড়া:
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগদহ গ্রামের লোকজন খুবই সহজ-সরল ধরনের মানুষ। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী। তারা খুবই শান্তিপ্রিয়। এই এলাকায় কোনো মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামার রেকর্ড পাওয়া যায় না।
তবে পার্শ্ববর্তী ‘নোয়াখাইল্লা পাড়া’ নামে একটি পাড়া রয়েছে যারা ১৫/২০ বছর আগে নোয়াখালী থেকে এই এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে। তারা খুবই উশৃঙ্খল বলে জানা যায়। বিভিন্নভাবে মানুষের জমিজমা বেদখলের অভিযোগও তাদের ব্যাপারে পাওয়া যায়। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার সুযোগে দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রিয় এই নোয়াখালী পাড়ার লোকজনই হামলার মাস্টার প্ল্যান করে। এজন্য তারা স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সাথে সখ্য গড়ে তোলে এবং তাদের সাথে নিয়ে হামলা করে। হামলায় নোয়াখালী পাড়ার তরুণ-যুবক, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষ যোগদান করে। তারা গোয়ালের গরু-ছাগল থেকে শুরু করে গোলার ধান, স্বর্ণালঙ্কার সব লুট করে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে এলাকায় এই পাড়াটি একটি লুটেরা পাড়া নামে পরিচিতি পেয়েছে।

ঘটনার দিন রাতেই লুট করা গরুর একটি জবাই জেয়াফত করে ‘নোয়াখাইল্লা পাড়ার’ লোকজন। আর অন্যান্য গরুগুলো বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই এখন ঐ এলাকায় হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
হামলা করে লুটপাট ও বেদখল চালানোর স্বার্থে নোয়াখালী পাড়ার লোকজন ‘হেযবুত তওহীদ’কে ইস্যু করেছে এবং জামায়াত ইসলামীর স্থানীয় নেতাদের ব্যবহার করেছে। আর ব্যানার হিসেবে সারাদেশে মব সৃষ্টিতে ব্যবহৃত জনপ্রিয় নাম ‘তওহীদী জনতা’র ব্যানার কাজে লাগিয়েছে তারা।
মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর সংবাদের হেতু:
হামলার ঘটনাটি নিয়ে একেক সংবাদ মাধ্যমে একেক রকম তথ্য প্রচারিত হয়, এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যেমন কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ আক্রমণ করছে, কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ, কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ গোপন মিটিং করছে।
এ বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাদের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রশাসনকে আগেই অবগত করা ও অনুমতি নেওয়া হয়।

রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আসিফা আফরোজ ঘটনার দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হেযবুত তওহীদকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বলেন। পরবর্তীতে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান হয়ে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে। পুলিশ সুপারের বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন তারা।
পরবর্তীতে হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ নয় বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়। তবে অনেক মিডিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ভুলবশত দেওয়া বিবৃতিকে ঢালাওভাবে প্রচার চালায়। পরবর্তীতে হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানালে তারা দুঃখ প্রকাশ করে এবং হেযবুত তওহীদের নামের আগে ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত’ শব্দটি কেটে দেন।
গণমাধ্যমে হেযবুত তওহীদেও বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের হেতু জানার চেষ্টা করে দেশেরপত্র। জানা যায়, মিডিয়া যতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, ততক্ষণে প্রশাসন ও স্থানীয় গ্রামবাসী হেযবুত তওহীদের লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ঘটনাস্থল তখন হামলাকারীদের দখলে। তারা যে ভাষায় কথা বলেছে, মিডিয়া সেই ভাষাতেই প্রচার করেছে।
বর্তমান অবস্থা:
এই হামলার ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকার এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর মধ্যে একটি চাপা আতঙ্ক লক্ষ করা গেছে। এঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে।
হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় আমির আব্দুল কুদ্দুস। মামলায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড সভাপতি মো. নুর আলমকে এক নং আসামি করে মোট ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

অপর মামলায় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের আসামি করা হয়। হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি দূরবর্তী উত্তর দেউতি গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় হেযবুত তওহীদের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও আসামি করা হয়েছে। এঘটনায় গ্রামবাসী ফুঁসে উঠেছেন।
মামলায় এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামীরা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ সকাল ১০ টা থেকে ২টা পর্যন্ত হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়ির উঠানে ‘হেযবুত তওহীদ’ এর ব্যানারে আলোচনা সভা করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ঘটনার দিন তাদের নিজ বাড়ির ভিতরে রান্নার আয়োজন করতে থাকে। এই সময় বাদী মো. মিজানুর রহমান আশেপাশের গ্রামের অনুমান ৫০০/৬০০ মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য একটি মিছিল নিয়ে আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িতে যায়। গিয়ে তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বললে তাদের সাথে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।
হামলাকারীদের বক্তব্যেই স্পষ্ট এটি কানো গোপন বৈঠক ছিল না। ৫০০/৬০০ মানুষ নিয়ে তারাই হেযবুত তওহীদের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে যায়।
ঘটনার পর হামলাকারীরা হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল বের করে। অথচ হামলার ঘটনার দিন তারা হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ মর্মে অপপ্রচার চালায়। এই অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ, প্রশাসন এমনকি অনেক মিডিয়াও বিভ্রান্ত হয়।
লুট হওয়া হেযবুত তওহীদের সদস্যদের গরুগুলোকে গণিমতের মাল হিসেবে প্রচার করে জামায়াত-শিবিরের কর্মী সমর্থকরা। এর মধ্যে একটি গরু জবাই করে তারা জেয়াফত করেছে, আর অন্যান্য গরুগুলো বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই এখন ঐ এলাকায় একের পর এক মিছিল মিটিং ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

ফলে ছিদামহাট এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছিদামহাটের সাধারণ মানুষ এই ধরনের ঘটনা দেখে শোকাহত ও আতঙ্কিত দিন কাটাচ্ছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হামলাকারীরা স্থানীয় পরিস্থিতি উত্তেজিত করার জন্য হেযবুত তওহীদ মহানবীকে (সা.) কটূক্তি করেছে এই মিথ্যা অজুহাত তুলে মিছিল মিটিং করে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে আব্দুল কুদ্দুস শামীম বাদী হয়ে যাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন তাদেরকে যেন গ্রেফতার না করা হয়। তাহলে থানা অবরোধের হুমকিও দেয় তারা।
এদিকে হেযবুত তওহীদের আহত রক্তাক্ত সদস্যরা যখন সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে কিন্তু হামলাকারীদেরকে কাউকে গ্রেফতার করার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
হেযবুত তওহীদের সদস্যরা এখন এলাকা ছাড়া। তাদের সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত পরিবারগুলো স্বর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
নাগদহ গ্রামের লোকজন সহজ-সরল মানুষ। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী। তারা খুবই শান্তিপ্রিয়। এই এলাকায় কোনো মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামার রেকর্ড নেই।
নাগদহ গ্রামের লোকজনের ভাষ্য, গ্রামবাসী এই ঘটনার সাথে জড়িত না। এই গ্রামে কেউ দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করে না। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী পাড়ার লোকজন এসে এই পাড়ায় হামলা চালিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে। আমরা আতঙ্কিত। হেযবুত তওহীদ করে না এলাকার এমন বাড়িঘরেও ভাংচুর লুটপাট চালিয়েছে তারা। এটা উদ্বেগজনক। তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক।
এটা ভালো লক্ষণ নয়। আমরা এলাকাবাসী ভয়ে আছি। না জানি কোন ইস্যু সৃষ্টি করে আমাদের বাড়িতে আবার হামলা, লুটপাট চালায়।
হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ বলে আমাদেরকে বলা হলো। এখন আবার হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ করার দাবিতে মিছিল করা হচ্ছে কেন? -স্থানীয় জনতার প্রশ্ন। এভাবে মিথ্যাচার করে তাণ্ডব চালানো ইসলাম সমর্থন করে না। যারা হামলা করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের নিশ্চয়ই অসৎ উদ্দেশ্য ছিল।
নির্বাচনকে সামনে রেখে হেযবুত তওহীদকে ইস্যু করে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীরা। ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোটকে পক্ষে নেওয়ার জন্য হামলার পরেও ইচ্ছা করেই তারা এলাকায় মিটিং মিছিলের মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করে রেখেছ বলে মনে করছেন তারা।
হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতির ভাষ্য:
হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস তার বাড়িতে লোকসমাগমের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কিছু নেতা কর্মী এসেছিলেন দেখা করতে। তাদেরকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। তাদেরকেও পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে।
স্থানীয় জামায়াত নেতার নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তৌহিদী জনতার নাম ব্যবহার করে স্থানীয় জামাত নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট গুজব সৃষ্টি করে দিয়ে মসজিদের মাইক দখল করে এলাকার সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে তারা আড়ালে থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তাদের পরিকল্পনা জানতে পেরে ঘটনার আগের দিন রাতেই জেলা ও উপজেলার জামায়াত নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছি আমরা। কিন্তু তাদের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করেন তারা। অথচ ঘটনার দিন দেখেছি জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দই সামনের সাড়িতে থেকে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতেও তাদের দেখা গেছে।
মব সৃষ্টির চিরায়ত পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এপ্লাই করা হয়েছে বলে হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, মসজিদের মাইক দখল করে প্রচারণা চালানো হয় যে, হিন্দুরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু এলাকার সবাই জানে যে, এ বাড়িটা হিন্দুদের বাড়িও নয়, আওয়ামী লীগের বাড়িও নয়।

আর স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ হামলায় অংশ নেয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বরং হামলার শিকার হয়েছে। তাদের ঘরবাড়িও ভাংচুর করা হয়েছে। যখন তারা তাণ্ডব চালায় তখন স্থানীয় গ্রামবাসীই আমাদের নারী শিশুসহ সকল সদস্যদের বের হয়ে যেতে সহযোগিতা করে। মিডিয়ায় প্রচারিত ‘হেযবুত তওহীদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ’ তথ্যটি ভুল বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী ‘নোয়াখাইল্লা পাড়া’ ও আশপাশের গ্রাম থেকে উশৃঙ্খল লোকজন ডেকে এনে হামলা করা হয়। তাদের অভিপ্রায় ছিল মূলত হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করা। তারা একে একে সবগুলো বাড়ি লুটপাট করেছে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গোলার ধান সব লুট করে নিয়ে গেছে। লুটতরাজে নোয়াখাইল্লা পাড়ার নারী, শিশু কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ অংশ নেয়। ঘটনার দিন রাতে তারা লুট করা গরু জবাই করে পিকনিক করে।
হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, হেযবুত তওহীদ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটা জামায়াত-শিবির ভালোভাবেই জানে। কাজেই হেযবুত তওহীদ জামায়াতের কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু স্থানীয় জামায়াত শিবিরের কর্মীরা যদি উগ্রবাদী তৃতীয় পক্ষের হাতিয়ারে পরিণত হয় আর এই ধরনের মব সৃষ্টি করে মানুষের বাড়িঘরে হামলা করে, তাহলে আমরা মনে করি, জামায়াত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে -বলেন হেযবুত তওহীদের এই নেতা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টিকে অবশ্যই বিবেচনা করবেন। কাউকে তাচ্ছিল্য করা, ছোট মনে করার পরিণতি যে ভয়াবহ তা আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় আমির এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে হামলাকারীদের আড়াল না করে।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন- আমরা আক্রান্ত। আমাদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকায় আমরা বিভ্রান্ত, আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। আমাদের জানমালেরর নিরাপত্তার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আমাদের প্রতিনিধি জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির বজলুর রশিদ মুকুলের সাথে কথা বললে তিনি এই ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু তাদের স্থানীয় কর্মীদের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি চুপ থাকেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ওয়ার্ডের মেস্বার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব অনুষ্ঠানেই আমাদের যেতে হয়। হেযবুত তওহীদ একটা অনুষ্ঠান করবে এটা আমাদের বলেছিল। ঘটনার কয়দিন আগে এলাকার অনেককে দাওয়াত দিয়েছিল তারা। সেখানে আল্লাহ রসুলের কথা বার্তা হয়, খাওয়া দাওয়া হয়। আমিও সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে ২৫ তারিখের অনুষ্ঠানের কথা জানানো হয়।
‘আমি মিথ্যা কথা বলব না ভাই, যা সত্য তাই বলব। গোপন মিটিং ছিল না।’ -বলেন ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।
ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি এনামুল হক বলেন, হিন্দু হোক মুসলমান হোক সবার দাওয়াতেই আমাদের যেতে হয়, যেহেতু আমরা জনপ্রতিনিধি। এলাকাবাসীর সাথে তাদের অনুষ্ঠানেও আমরা গিয়েছিলাম। তারা অনুষ্ঠানে মধ্যে বলে, তারা একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাচ্ছে।
তার মানে তারা গোপন মিটিং করেনি সকলকে জানিয়েই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিল -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, গোপন মিটিং না। তারা অনুষ্ঠানের মধ্যে বলেছিল যে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে তারা।
মহানবীকে কটূক্তি করেছে এমন অভিযোগ এনে হামলাকারীরা লোকবল জোগাড় করেছেন, আসলেই কি হেযবুত তওহীদ মহানবীকে কটূক্তি করেছেন? না, এমন কিছু আমি কখনো শুনি নাই। অনুষ্ঠানে তারা ইসলামের কথাই বলেছে। সেখানেও এমন কিছু তিনি শোনেননি বলে জানান।
ক্ষয়ক্ষতি:
হামলায় প্রায় কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। মোট ৫টি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হেযবুত হওহীদের পরিবারসহ স্থানীয় বাসিন্দার বাড়িঘরে লুটতরাজ চালানো হয়। অগ্নিসংযোগের আগে ৯টি গরুসহ সমস্ত গবাদিপশু লুণ্ঠন করা হয়। গোলার ধান-চাল থেকে শুরু করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার কিছুই অবশিষ্ট নেই। ধ্বংস করে দেয়া হলো আলুক্ষেত, ধানের বীজ।

দাবি:স্থানীয়দের দাবি এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এমন তাণ্ডবলীলার সাথে আমরা পরিচিত নই। আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। এদেশে যদি এভাবে ধর্মকে ইস্যু করে, মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষের উপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়, তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি, শীঘ্রই বাংলাদেশ সিরিয়া-আফগানিস্তানের পথে অগ্রসর হবে। স্বার্থান্বেষী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধে আমরা এদেশের আপামর মানুষের সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
সৌজন্যে: দৈনিক দেশেরপত্র