রংপুরের পীরগাছায় হেযবুত তওহীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সংগঠনের হাজারো নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রতিবাদ:
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সভাপতি আরিফ উদ্দিন, সদস্য মুখলেছুর রহমান সুমন, নারী সংগঠক আয়েশা সিদ্দিকা প্রমুখ। মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নেতা আল আমিন সবুজ।
বক্তারা বলেন, রংপুরের পীরগাছায় সংগঠনের সদস্যদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসীরা বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে, যার ফলে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
হেযবুত তওহীদের ৭ দফা দাবি:
হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে মানববন্ধনে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো—
১. হামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২. সারা বাংলাদেশে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. হামলায় আহত সদস্যদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
4. ভাঙচুর ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আগুনে পুড়ে যাওয়া ও লুটপাট হওয়া সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. হামলার পর ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, এসব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. অনলাইন ও অফলাইনে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিক্ষোভ মিছিল:
মানববন্ধন শেষে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট ও পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীরা “উগ্রবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না”, “একজাতি একদেশ, ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ”, “রংপুরে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “পীরগাছায় হামলা কেন, বিচার করতে হবে” ইত্যাদি স্লোগান দেন।

রংপুরে হামলার পেছনের ঘটনা:
হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় নবনিযুক্ত সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীম গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার নিজ বাড়িতে এক ভোজসভার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ, প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করেন। কিন্তু জামায়াত-শিবির ও উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠী শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় “মুসলিম তওহীদী জনতা” নামের একটি ব্যানার নিয়ে জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতারা এক কিলোমিটার দূরের নাগদাহ গ্রাম থেকে ছিদামহাট এলাকায় এসে উপস্থিত হয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে জানান। কিন্তু যথাসময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
হামলা, লুটপাট ও ভয়াবহ সহিংসতা:
সন্ত্রাসীরা প্রথমে স্থানীয় মসজিদের মাইক দখল করে উসকানিমূলক প্রচারণা চালায়। তারা বলেন, “হিন্দুরা মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়েছে”, “হেযবুত তওহীদ মহিলাদের পেছনে নামাজ পড়ে”—এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই সন্ত্রাসীরা আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। হামলায় হেযবুত তওহীদের ২০ জন সদস্য আহত হন, যাদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর। দুজনের পা ভেঙে যায়, একজনের হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সন্ত্রাসীরা পাঁচটি বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ সমস্ত মালামাল লুট করে। চারটি দোকানের সব মালামাল লুটপাট হয়। এছাড়া তারা গোয়ালঘর থেকে ১২টি গরু ও পাঁচটি ছাগল নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে হেযবুত তওহীদ।
হামলার পরও এলাকায় আতঙ্ক:
হেযবুত তওহীদের অভিযোগ, হামলার পরও সন্ত্রাসীরা এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছে। স্থানীয়দের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে প্রায় ৪০টি পরিবার তাদের পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মামলা ও তদন্তের অগ্রগতি:
ঘটনার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি পীরগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীম। মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে রয়েছে- মো. নুর আলম (৫২), মমিন উল্লাহ (৫৫), মো. মিজানুর রহমান (৩৫), আব্দুর রহিম (৩৫), মো. নজির হোসেন (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (৪০), আব্দুল মান্নান (২৮), মাহাবুল ইসলাম, জুয়েল রানা (৩২), মো. আলী আহমেদ (৫৫), মো. মফিজ উদ্দিন (৩৫), মোক্তার হোসেন (৩০), মো. মনির আহমেদ (৫৫), মো. আবুল বাশার (৪৫), আহমদ উল্লাহ (৫০), মো. বেলাল হোসেন (৩০), ফজলু মিয়া (৪৫), মোক্তার হোসেন (৫০), আসাদুল ইসলাম (২৮), শরিফুল ইসলাম (৩০), ইসমাইল হোসেন (২৮), মুক্তার হোসেন (২৫), নাসিমুল ইসলাম (২৫), জাহিদ হাসান (২২), আব্দুল কাদের, জাহাঙ্গীর, এবং মোশাররফ হোসেন (২৫)।
হেযবুত তওহীদের নেতারা দ্রুত বিচার ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তবে মামলার পরও এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করা হয় নি।