শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ সরকার কেমন হবে—সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দেবেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর পরই চূড়ান্ত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মতামত নেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর সন্ধ্যায় সেনাপ্রধান ও বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টা বা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রসহ জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চলমান ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের জন্য শোক প্রস্তাব করলে সঙ্গে সঙ্গে বৈঠকে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির পক্ষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর ডা. শফিকুর রহমান, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, শেখ মো. মাসুদ, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে রাব্বি, জাতীয় পার্টির জি এম কাদের, মজিবুল হক চুন্নু ও আনিসুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাহবুবুর রহমান, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, খেলাফত মজলিসের জালাল উদ্দীন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, গণ-অধিকার পরিষদের গোলাম সারওয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ফিরোজ আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক, মোবাশ্বেরা করিম এবং ইঞ্জিনিয়ার আনিছুর রহমান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতারা-ছাত্ররা কাজ করবেন। এ বিষয়ে বঙ্গভবনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করব, একই সঙ্গে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে রক্ষা করব।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কালবেলাকে জানান, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের পক্ষে ওই সরকারের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র নেতৃবৃন্দও ছিলেন। সেখানে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা কী করতে চাই, যৌথ সরকার কীভাবে করা যায় সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবার নাম প্রস্তাব করার পর অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা শান্ত হোন। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্ট করবেন না। থানায় আঘাত করবেন না।
বৈঠকে অংশ নেওয়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী কালবেলাকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনা হয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো নাম প্রস্তাব করবে।
সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকার জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইকরামুল হক, সাবেক পরিবেশ সচিব ড. মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্টের সাবেক পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, বিজিবির সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মঈনুল ইসলাম, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির, সাবেক সচিব ফাওলুল কবির খান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোরশেদ খান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আইনজীবী শাহদীন মালিক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।