প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার পর কী হয়েছিল, জানালেন ড. ইউনূস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অভ্যুত্থানের পরপরই তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পান।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিক বিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের পডকাস্টে সেই সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস। ‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টের লিখিত সংস্করণ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। একটি ছোট অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন কিছু ছাত্রনেতা আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না এবং আমি এতে যুক্ত হতেও চাই না।”
কারা যোগাযোগ করেছিল -এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না, কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। তাই আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন, তোমরা তাদের খুঁজে নাও। কিন্তু তারা বলল, ‘না, না, না। আপনাকেই থাকতে হবে, আমরা কাউকে পাইনি।’ আমি তাদের বললাম, আরও চেষ্টা করো। তারা জানায়, ‘তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।’ তখন বললাম, অন্তত ২৪ ঘণ্টা চেষ্টা করো, তারপর না পেলে আবার ফোন করো।”
তিনি বলেন, “২৪ ঘণ্টা পর তারা আবার ফোন করল। বলল, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে।’ শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছ, প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে, তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছো, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তখন তারা আর কোনো কথা বলেনি।”
সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “দুই ঘণ্টা পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন এবং আমাকে ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন তিনি বললেন, ‘আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমরা এটা জানতাম না।’ আমি বললাম, এটা কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, ‘সব গণমাধ্যম ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা প্রথম জানলাম।”
তিনি বলেন, “এরও দুই ঘণ্টা পর হাসপাতালে বোর্ড সদস্যরা এবং প্রধান চিকিৎসক এলেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান এবং জানালেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।”
পরের দিন সকালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “পুরো জাতি আমার ফেরার উড়োজাহাজের অপেক্ষায় ছিল। বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে দেশে ফিরেছিলাম। তখন ছাত্রনেতারা নতুন সরকারের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমি বিমানবন্দর থেকেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলাম। সবাইকে ধৈর্য, শান্তি, একতা বজায় রাখতে বললাম। এটাই ছিল পুরো ঘটনার শুরু।”
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।