Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে জুলাই হত্যা মামলার আসামি আ.লীগ নেতা মহিউদ্দিন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তরায় গুলিতে নিহত হন যুবক মো. আসাদুল্লাহ। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার এক বছর পার হয়ে গেছে। মামলার অন্যতম আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন। অথচ তিনি পলাতক নন, বরং নিজ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও এবং স্থানীয় সূত্রে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

হত্যা মামলার ১০২ নম্বর আসামি হয়েও মহিউদ্দিনের এভাবে প্রকাশ্যে চলাফেরা করায় স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, মামলার এক বছর পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে কীভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই হত্যা মামলার আসামি?

২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় নিহত আসাদুল্লাহর মা আয়েশা খাতুন (৫৭) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১২/৪৬৮)। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলার ১০২ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন। তার পিতার নাম মৃত আতশ আলী, তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা।

মামলার এজাহারে দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ৩০২, ১০৯, ১১৪ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উত্তপ্ত ছিল উত্তরা এলাকা। সেদিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার ৭ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়ির সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১ থেকে ১৩ নম্বর আসামিদের (শীর্ষ নেতাদের) নির্দেশ ও পরিকল্পনায় ১৪ থেকে ১৪৩ নম্বর আসামিরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় তারা নির্বিচারে গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে সাধারণ পথচারীরাও দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন।

নিহত আসাদুল্লাহর মা আয়েশা খাতুন জানান, সেদিন বিকেলে গোলাগুলির খবর পেয়ে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা তার ছেলে মো. আসাদুল্লাহকে (৩১) খুঁজতে বের হন। আশপাশের হাসপাতাল এবং ঢাকার প্রায় সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও ছেলের সন্ধান পাননি তারা। পরে গত ২৮ জুলাই আসাদুল্লাহর স্ত্রী তুরাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।অবশেষে ঘটনার প্রায় ২২ দিন পর, ১১ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন মা আয়েশা খাতুন। জানা যায়, ১৯ জুলাই বিকেলেই গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আসাদুল্লাহ।

মামলা দায়েরের পর এক বছর অতিবাহিত হলেও মহিউদ্দিনের মতো স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী আসামিরা ধরা না পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহতের পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহিউদ্দিন এলাকায় দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে ‘খুঁজে পাচ্ছে না’।

সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, মহিউদ্দিন তার সহযোগীদের নিয়ে এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের এমন নির্লিপ্ততাকে আইনের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এর আগে তুরাগ এলাকা থেকে মো. আবু নায়েরসহ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই ফরিদুজ্জামান জানান, এ মামলায় আসামির সংখ্যা অনেক। আসামি গ্রেপ্তারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসামিদের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” তবে মহিউদ্দিনসহ পলাতক কিংবা প্রকাশ্যে থাকা অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.