বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ‘বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের প্রকাশিত বা প্রচারিত অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক বিবৃতিটাইকে উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফেতখারুজ্জামান।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, “তাদের এই প্রেস রিলিজটাই হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করার অশুভ উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে। বিবৃতিদাতা এবং অভিযুক্তরা একই গোত্রভুক্ত। তারা চাচ্ছে তাদের সহযোগীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। তারা প্রমাণ করছে তারা আসলে দুর্নীতির সহায়ক।”
ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, বিপিএসএ-র বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বসে পড়ার মুখে এটা উপলব্ধি করতে পারছে না পুলিশ বাহিনী। বরং বার্তাবাহককে আঘাত করা তাদের মূল উদ্দেশ্য।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএসএ-র সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ করে লেখা। তাতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রচারিত অতিরঞ্জিত রিপোর্ট সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ ধরনের আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রচারিত/প্রকাশিত অতিরঞ্জিত রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধীচক্রের নাশকতা প্রতিহত করার কারণে তারা পুলিশকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত। বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম তাদের(বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসী) “অনুকরণ” করছে। এর অংশ হিসেবে গণমাধ্যমগুলো, পুলিশের বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার হীন উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে বিসিপিএ’র কাছে।
আরো বলা হয়, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের রিপোর্টের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই।” রিপোর্টগুলোকে “বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অতি কথিত” বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে। এসবের মধ্যে “কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ” এর “ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ” হাসিলের প্রচেষ্টা রয়েছে বলেও মনে করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। “যা সাংবাদিকতার নীতিমালা বিরোধী,” বলছে সংগঠনটি।
তারা বলছে, “কী কারণে, কার উদ্দেশ্য হাসিল এবং কার ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় মিডিয়া বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনায় লিপ্ত, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা অযৌক্তিক নয়।”
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে এমন অবস্থান নিতে সচরাচর দেখা যায় না।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, দুর্নীতিটা তো প্রমাণ করা লাগবে, ঢালাওভাবে কেউ কাউকে দুর্নীতিবাজ বলে দিতে পারে না। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার আছেন দাবি করে তিনি বলেন, “যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠে, সেটা তদন্ত করার ব্যাপার আছে, নিশ্চিত হওয়ার একটা প্রক্রিয়া আছে, কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই, কেউ কেউ দুর্নীতিবাজ বলে দিচ্ছেন।”
এ কারণেই বিপিএসএ বিবৃতি দিয়েছে বলে জানান গোলাম মোস্তফা রাসেল। বিপিএসএ তাদের বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফেতখারুজ্জামান, এই প্রেস রিলিজ দেয়াটাকেই উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, “বরং তাদের এই প্রেস রিলিজটাই হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করার অশুভ উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।”
“বিবৃতিদাতা এবং অভিযুক্তরা একই গোত্রভুক্ত” উল্লেখ করে মি. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “তারা চাচ্ছে তাদের সহযোগীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। তারা প্রমাণ করছে তারা আসলে দুর্নীতির সহায়ক।”
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ নুরুল হুদা বলছেন, সার্ভিস এসোসিয়েশনের কাজ পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখা।
তিনি বলেন, “যদি কোনো পক্ষ মনে করে মানহানি হয়েছে তারা বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। সেটা ঠিক কি বেঠিক সেটা তো অনুসন্ধান সাপেক্ষ।”
“যদি মনে করে থাকে আনফাউন্ডেড অ্যালিগেশন (ভিত্তিহীন অভিযোগ) করা হচ্ছে, তাহলে তো তারা বলতেই পারে,” যোগ করেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, বিপিএসএ’র বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বসে পড়ার মুখে এটা উপলব্ধি করতে পারছে না পুলিশ বাহিনী। বরং বার্তাবাহককে আঘাত করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। -বিবিসি বাংলার প্রতিবেন অনুসারে।