Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

পরীমণির সঙ্গে অনৈতিক প্রেম: চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন

আলোচিত ও সমালোচিত অভিনেত্রী পরীমণির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে এবার চাকরি হারাতে বসেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সাকলায়েন শিথিল।

গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করার জন্য আবেদন করা হয়।

পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন সাকলায়েন। পরীমণির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পর প্রথমে তাকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। পরে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়।

শৃঙ্খলা শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়, নায়িকা পরীমণির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ আরম্ভ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নায়িকা পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন সাকলায়েন।

বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) পরীমণির বাসায় সাকলায়েন অবস্থান করেছেন বলে মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে প্রমাণ পাওয়া যায়। পুলিশ অধিদফতরের এলআইসি শাখার দেয়া তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী ০৪/০৭/২০২১ তারিখ হতে ০৪/০৮/২০২১ তারিখ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেছেন। নায়িকা পরীমণির মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিআইডি কর্তৃক মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত) পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার ও পরীমণির আদান-প্রদানকৃত মেসেজসমূহ (২৯ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৩ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) সামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির ফেসবুক আইডি ও গোলাম সাকলায়েন সিথিল নামে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথন এবং তাদের হোয়াটসআ্যাপ নম্বরে (১১ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) কথোপকথন সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়। বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে ২ আগস্ট রাত ৩টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমণির যাতায়াতের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, ১ আগস্ট সাকলায়েনের পূর্ব পরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমণি তার রাজারবাগস্থ সরকারি বাসায় যান এবং প্রায় ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ২ আগস্ট রাত ১টা ৩০ মিনিটে বাসা ত্যাগ করেন।
তার ও নায়িকা পরীমণির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার ফলে জনমনে এ বিষয়ে নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দেয়। সাকলায়েন বাংলাদেশ পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাহিরে নায়িকা পরীমণির সাথে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।

সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও পরীমণির সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমণির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। উল্লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপবিধি ৩(ঘ) বিধি মোতাবেক গুরুদণ্ডের আওতায় কেন তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্ত’ করা হবে না সে মর্মে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। অভিযুক্তের কারণ দর্শানোর নোটিশ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় যথাযথ জারির প্রমাণ রয়েছে (সংলাগ-চ)।

সাকলায়েন, ২য় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব চাকরি হতে বরখাস্তকরণ মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।

সাকলায়েনের বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লিখিত জবাব, মৌখিক বক্তব্য ও অন্যান্য কাগজপত্রাদি পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনাস্তে ২য় কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‌‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আবেদনের সর্বশেষে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‌‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি হতে ‌‌‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ দণ্ডের বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.