নাহিদ ইসলামকেই কেন নেতা হিসেবে বেছে নিলো নতুন দল এনসিপি
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল “জাতীয় নাগরিক পার্টি” (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন এই দলের শীর্ষ পদে আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন নাহিদ ইসলাম। দলের প্রতিষ্ঠা ও নাহিদ ইসলামের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা সম্প্রতি বেশ তুঙ্গে উঠেছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, নাহিদ ইসলামের নেতা নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিভেদ নেই।
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত নাহিদ ইসলাম, সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে বিশেষ আলোচনা চলছে, এবং অনেকেই মনে করছেন, নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা তাঁকে এই পদে বসার জন্য উপযুক্ত করেছে।
কোটা আন্দোলন থেকে শুরু, বর্তমান রাজনীতিতে
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে। তখন তিনি নেতা হিসেবে না থাকলেও, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। যদিও তিনি নির্বাচনে জয়ী হননি, তবুও তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা প্রকাশ পেয়েছিল। এরপর, বিভিন্ন মতবিরোধের কারণে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে ২০২৩ সালের ৪ঠা অক্টোবর ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র কেন্দ্রীয় নেতা হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব
২০২৪ সালে, নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে এক নতুন দিক দেখান। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরবর্তীতে সরকারের পতন এবং সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। দীর্ঘ ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে, সরকার পতনের ঘোষণা এবং জনগণের স্বার্থে আন্দোলন পরিচালনার জন্য নাহিদ ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পর, তিনি গঠন করেন একটি অন্তর্বর্তী সরকার এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা কেন?
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতার মূল কারণটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান এবং জনগণের সাথে তার সংযোগ গভীর। জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, “নাহিদ ইসলামের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া, এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা রয়েছে।”
এছাড়া, তিনি একটি “ছাতার (আমব্রেলা) মতো” নেতা, যিনি বিভিন্ন মতাদর্শ ও চিন্তাধারার মানুষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম, এবং তার নেতৃত্বের মাধ্যমে এই নতুন দল এগিয়ে যেতে পারে, এই বিশ্বাস সবাই গভীরভাবে ধারণ করে।
আন্দোলনের এক অভিজ্ঞান নেতা
শহীদ মিনারে সমাবেশের পর থেকে, নাহিদ ইসলাম গণঅভ্যুত্থানের আইকন হিসেবে পরিচিত। জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীনের মতে, “গণঅভ্যুত্থান শেষে যে চেতনাবোধ ছিল, সেটাই নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন দলের প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, “নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বের মূল শক্তি হলো তার রাজনৈতিক পরিপক্বতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে ছিলেন, এবং তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁকে এই অবস্থানে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।”
পরীক্ষিত নেতা হিসেবে উঠে আসা
নাহিদ ইসলাম, যিনি কোটা আন্দোলনে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা তাকে আরও শক্তিশালী এবং পরীক্ষিত নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁর এই সংগ্রামী জীবন তাকে ছাত্রদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দিয়েছে এবং অন্যান্য নেতাদের তুলনায় তাকে ভিন্নভাবে সমাদৃত করেছে।
নতুন দলে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বের গুরুত্ব
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, নাহিদ ইসলাম একমাত্র নেতা হিসেবে সমগ্র আন্দোলন এবং দলের নেতৃত্বে এক অনন্য ভূমিকা পালন করবেন। তাঁর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল শক্তিশালীভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে।
তবে, দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না অনুসরণ করা কিছুটা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু, সকলের মধ্যে একমত হওয়া এবং সাংগঠনিকভাবে তাঁর বিরোধিতা না হওয়া, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বের প্রতি অটুট আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং জনগণের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি তাঁকে নতুন দলের জন্য আদর্শ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।