Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন ও বগুড়ার কারাগার থেকে ৪ ফাঁসির আসামির পলায়ন

নব্বইয়ের দশকে স্টিফেন কিং এর বেস্টসেলার উপন্যাস ‘রিটা হেওর্থ অ্যান্ড শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ এর কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ সিনেমাটি। সিনেমাটিতে অ্যান্ডি ডুফ্রেইন নামের একজন তরুণ ব্যাংকার ১৯৪৬ সালে শশাঙ্ক প্রিজনে প্রবেশ করেন স্ত্রী হত্যার দায় মাথায় নিয়ে। অ্যান্ডি জেল থেকে পালানোর জন্য ১৯ বছর ধরে ছোট্ট একটা হাতুড়ি নিয়ে একটু একটু করে টানেল খুঁড়ে, ১৯ বছর পর সফল হয় অ্যান্ডি ডুফ্রেইন।

ঠিক যে সেই দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশনের পুনারবৃত্তি ঘটলো বগুড়ার কারাগারে। প্রায় এক মাসের চেষ্টায় বালতির হাতল দিয়ে চুন-সুরকির ছাদ ফুটো করে গত মঙ্গলবার রাতে বগুড়ার কারাগার থেকে পালিয়ে যায় চার ফাঁসির আসামি। চার আসামি হলো কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার আজিজুল হকের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), বগুড়া জেলার সদর থানার মো. ইসমাইল শেখের ছেলে মো. ফরিদ শেখ (২৮), কাহালু থানার মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১) ও নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার ইসরাফিল খার ছেলে আমির হামজা (৩৮) ।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৬ জুন ২০২৪) ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে কারাগারের জাফলং ভবনের কনডেম সেলের চার আসামি পালিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল তাদের আটক করা। তবে মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় তাদের আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, কারাগারের ভবনটি বেশ পুরোনো। এই ভবনে পাশাপাশি চারটি ফাঁসির আসামিদের প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এর একটিতে এই চারজন ছিলেন। প্রতিটি প্রকোষ্ঠ আলাদা। আসমাীরা প্রায় এক মাস ধরে পলানোর পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বালতির হাতল লোহা বা স্টিল নির্মিত সেটি সোজা করে ছাদের অংশ ফুটো করেছে। ধারাবাহিকভাবে তারা এটি করেছে। ভবনটিতে কোনো রড ছিল না। ইট-সুরকির অনেক পুরনো ভবন। ফুটোটি তারা ধীরে ধীরে বড় করেছে। এ ছাড়া পুরনো চাদর, গামছা ও কাপড় পর্যায়ক্রমে বেঁধে ছাদ পর্যন্ত একটি রশির মতো তৈরি করে। একটি পাটাতন তৈরি করে। মূলত পাটাতরে পাড়া দিয়ে রশি বেয়ে ছাদের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়।এরপর ছাদ নেমে প্রিজন সেলের সামনে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ আছে। সেটি লোহার খাঁচা দিয়ে বদ্ধ। সেই লোহার খাঁচার উপর দিয়ে ক্রলিং করে কারাগারের প্রাচীরের কাছে যায়। এবং একইভাবে কাপড় জোড়া দিয়ে রশি তৈরি করে প্রাচীর টপকে যায়। তারপর পাশের করতোয়া নদীর উপর যে ব্রিজ ছিল, সেটি দিয়ে পাশের চাষিবাজারে পৌঁছে যায়।

এই ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া কারাগারের মধ্যে নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি বাড়ানোর গুরুত্বও দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর ডিআইজি (প্রিজন) কামাল হোসেন “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি” বলে জানান। তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। ঘটনার তদেন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম), পুলিশের একজন কর্মকর্তা, র‌্যাবের একজন, গণপূর্ত বিভাগের একজন, ফায়ার সার্ভিসের একজন ও জেলা কারাগারের একজন কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.