Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

এনসিপির ঘোষণাপত্র: ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় যা যা আছে

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক ঘোষণায় জানিয়েছে যে, কেবল একটি সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি সরকার বসানোর জন্য জুলাই ২০২৪-এ অভ্যুত্থান হয়নি, বরং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করার জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এনসিপি বলছে, জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে তারা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করবে এবং নতুন সংবিধান রচনা করবে।

শুক্রবার, দলের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে জানান যে, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা সামরিক স্বৈরাচারের পতন ঘটানোর পরও, আজ পর্যন্ত জনগণ একটি আদর্শ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পায়নি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত ১৫ বছর দেশের শাসনব্যবস্থা ছিল একটি ‘নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসন’, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে ব্যবহার করে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে, কিন্তু এই অভ্যুত্থান কেবল একটি সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ছিল না। জনগণ এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাড়া দিয়েছিল, যেখানে অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হবে।

এনসিপির ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে যে, তারা একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করবে, যার মাধ্যমে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা হবে। দলের মূল লক্ষ্য হিসেবে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটানো।

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি এসেছে ফ্রান্সের ইতিহাস থেকে, যেখানে ফরাসি বিপ্লবের পর ১৭৯২ সালে প্রথম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রান্সের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশেও সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের উন্নতি ঘটানো হবে।

তিনি আরও বলেন, এনসিপি চায় একটি এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে যেখানে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায্যতা এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্ষমতায় আসা হবে। জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে, এবং দেশের পিছিয়ে পড়া জনগণকে মূলধারায় যুক্ত করা হবে।

অর্থনৈতিক খাতে, এনসিপি কৃষি, সেবা, উৎপাদন খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর, আয়-বৈষম্যহীন এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন এবং বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা’ এনসিপির মূল লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম। “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের শপথ,” বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এনসিপি আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে, সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং এতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সদস্যরা। বক্তৃতার পর, দলের ১৫১ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন আখতার হোসেন, এবং দলের নাম ও আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করেন মীম আক্তার।

এনসিপি দৃঢ়ভাবে তাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে, যেখানে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.